মঞ্চ-২৪ এর সংবাদ সম্মেলন
১৪ দলীয় জোট ও জাতীয় পার্টিকে নিষিদ্ধের দাবি
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৩:১৪, ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫ | আপডেট: ০৩:১৪, ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫

ফ্যাসিবাদের পৃষ্ঠপোষক হিসেবে আখ্যা দিয়ে ১৪ দলীয় জোট ও জাতীয় পার্টিকে নিষিদ্ধের দাবি জানিয়েছে মঞ্চ ২৪। অন্তর্বর্তী সরকার যদি নিষিদ্ধ না করে তাহলে মঞ্চ-২৪ এর থেকে বড় আন্দোলন গড়ে তোলা হবে বলেও হুঁশিয়ারি দিয়েছে সংগঠনটি।
শুক্রবার (২৬ সেপ্টেম্বর) বিকেলে রাজধানীর শাহবাগ জাতীয় জাদুঘরের সামনে অনুষ্ঠিত এক সংবাদ সম্মেলনে এই হুঁশিয়ারি দেন সংগঠনের আহ্বায়ক ফাহিম ফারুকী। সংবাদ সম্মেলনে এ ব্যাপারে একটি বিবৃতি পাঠ করা হয়।
বিবৃতিতে সংগঠনটি বলেছে, ‘মঞ্চ ২৪ আজ স্পষ্টভাবে ঘোষণা করছে, ফ্যাসিবাদের পৃষ্ঠপোষক ১৪ দলীয় জোট ও জাতীয় পার্টির রাজনীতি আর এক মুহূর্তও চলতে দেওয়া যাবে না।
বিবৃতিতে বলা হয়, বাংলাদেশের রাজনীতির ইতিহাসে ১৪ দল এবং তাদের সহযোগী জাতীয় পার্টি দীর্ঘকাল ধরে গণতন্ত্রের হত্যাকারী হিসেবে কাজ করে এসেছে। জনগণের ভোটাধিকার হরণ, ভিন্নমত দমন এবং বিদেশি আধিপত্যকে প্রশ্রয় দেওয়ার রাজনীতি করে যাচ্ছে জাতীয় পার্টি। আওয়ামী লীগের পৃষ্ঠপোষকতা করে দেশে অরাজক পরিস্থিতি তৈরির লক্ষ্যে জুলাই পরবর্তী বাংলাদেশে এই অপশক্তি মাথাচাড়া দেওয়ার চেষ্টা করেছে। ইতিমধ্যে সন্ত্রাসী আক্রমণের মাধ্যমে ডাকসুর সাবেক ভিপি নুরুল হক নুর সহ শতাধিক জুলাই নেতৃবৃন্দের ওপর হামলা করছে এই জাপা। সেজন্য সন্ত্রাসী সংগঠন আওয়ামী লীগের মতোই সন্ত্রাস বিরোধী আইনের মাধ্যমে নির্বাহী আদেশে জাতীয় পার্টি নিষিদ্ধের দাবি জানাচ্ছি। কেননা দেশের নিরাপত্তা এবং সার্বভৌমত্বের জন্য জাতীয় পার্টি একটি অভিশাপ।
১৪ দলীয় জোট ও জাতীয় পার্টি নিষিদ্ধের দাবি জানিয়ে বিবৃতিতে আরও বলা হয়, আজ তারা আবার নির্বাচনে অংশ নিতে চায়। আমরা মঞ্চ ২৪-এর পক্ষ থেকে দৃঢ়ভাবে বলছি— যারা জনগণের রক্তে হাত রাঙিয়েছে, যারা ফ্যাসিবাদকে প্রশ্রয় দিয়েছে, তাদের কোনোভাবেই জাতীয় নির্বাচনে অংশগ্রহণের অধিকার নেই। জাতীয় পার্টিকে নির্বাচনে অংশগ্রহণের সুযোগ দেওয়া মানে জনগণের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা এবং শহীদদের আত্মত্যাগকে অপমান করা।
বিবৃতিতে বলা হয়, জুলাই মাসে যে হত্যাযজ্ঞ চালানো হয়েছে তার সাথে সরাসরি জাতীয় পার্টি এবং ১৪ দল জড়িত। হাসিনার সাথে বৈঠক করে আমার ভাইদের বুকের ওপর গুলি করার পরামর্শ দিয়েছে।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, এই জাতীয় পার্টি শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়ার পরিবারকে বারবার অপমান করেছে, বেগম খালেদা জিয়ার মামলায় সরকারের অবস্থানকে সমর্থন করেছে। অথচ আমাদের জাতীয়তাবাদী দলের মহা সচিব তাদের নির্বাচনে অংশগ্রহণের সুযোগ দিতে চাচ্ছেন! অন্তত এতটুকু মনে রাখবেন এই আওয়ামী সহযোগী জাতীয় পার্টি আমাদের সন্তানের হত্যা করার জন্য হাসিনাকে পরামর্শ দিয়েছে। দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে হুইল চেয়ারে বসিয়েছে। এর পরও যদি ভারতের কোলে উঠে আওয়ামী লীগের সহযোগী জাতীয় পার্টিকে নির্বাচনে আনার চেষ্টা করেন তাহলে বাংলাদেশ বিরোধী রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত নেওয়ার অপরাধে আপনাকেও ওবায়দুল কাদেরের মতো পালানো লাগবে। কিন্তু আমরা সেটা চাই না, আমরা শহিদ জিয়ার বিএনপি দেখতে চাই।
বিবৃতিতে বলা হয়, এই ভারতীয় ১৪ দল, ২০০৮ সালে আবার আওয়ামী লীগের সঙ্গে সমঝোতা করে জাতীয় পার্টি ক্ষমতার অংশীদার হয় এবং সরকারের সকল দমননীতিকে সমর্থন দেয়। বিরোধী দলের আন্দোলনের সময় জাতীয় পার্টি প্রকাশ্যে আওয়ামী লীগের অবস্থানকে বৈধতা দিয়েছে এবং ‘অধিকৃত বিরোধী দল’ হিসেবে সংসদে বসে আসলে গণতন্ত্রের নাটক সাজিয়েছে। পিলখানা হত্যাকাণ্ড, শাপলা চত্বর গণহত্যা, বিচারিক হত্যাকাণ্ড ইত্যাদি ঘটনায় জাতীয় পার্টি নীরব থেকেছে।
বিবৃতিতে বলা হয়, ইন্টেরিম সরকারের নৈতিক দায়িত্ব হলো- এদের রাজনীতি অবিলম্বে নিষিদ্ধ করা এবং জনগণের রক্তের ঋণ শোধ করতে তাদের বিচারের মুখোমুখি করা। যদি ইন্টেরিম সরকার তাদের রাজনীতি চলতে দেয়, তবে তা শহীদদের রক্তের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা এবং জুলাই বিপ্লবের আত্মত্যাগকে অসম্মান করার শামিল হবে।
বিবৃতিতে বলা হয়, ইন্টেরিম মূলত কী করছে? আজকে জুলাইয়ের অন্যতম সহযোদ্বা মামুনুর রশীদকে গুম করা হয়েছে। ৩দিনের বেশি হলো কোনো খোঁজ নেই। ইন্টেরিমের প্রশাসন ঘুমায়? খোদার কসম তার কিছু হলে ইন্টেরিমের ১২টা বাজবে বলে দিলাম। জুলাই পরবর্তী বাংলাদেশে হাসিনার মতো আচরণ জনগণ মেনে নিবে না হাসিনার আচরণ যদি কেউ করে তবে যমুনা থেকে পালানোর সময় কিন্তু পাবেন না।
মঞ্চ ২৪ বিবৃতিতে বলে, আমরা স্পষ্টভাবে বলছি— আওয়ামী লীগ একটি রাষ্ট্রবিরোধী, সন্ত্রাসী ও গণবিরোধী সংগঠন। তাদের যেকোনো রাজনৈতিক কার্যক্রম সংবিধানবিরোধী। সরকার যদি এই মিছিল বন্ধে কঠোর ব্যবস্থা না নেয়, তবে প্রমাণিত হবে যে তারা জনগণের নিরাপত্তা নয়, বরং জঙ্গিবাদকেই প্রশ্রয় দিচ্ছে।
বিবৃতিতে সংগঠনের পক্ষ থেকে ৬টি দাবি উত্থাপন করা হয়। দাবিগুলো হলো-
১. অবিলম্বে আওয়ামী লীগ এবং তার সহযোগী জাতীয় পার্টি সহ ১৪ দলের রাজনীতি নিষিদ্ধ করে বিচারের মুখোমুখি করতে হবে।
২. লাঙ্গল প্রতীক স্থগিত করে নির্বাচনে জাতীয় পার্টি আসার সকল পথ বন্ধ করতে হবে।
৩. আওয়ামী লীগের জঙ্গি কার্যক্রমের তদন্ত করে দায়ীদের গ্রেপ্তার করতে হবে।
৪. প্রশাসনের নিরপেক্ষতা নিশ্চিত করতে হবে এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে রাজনৈতিকভাবে ব্যবহার বন্ধ করতে হবে।
৫. জনগণের জানমালের নিরাপত্তা রক্ষায় জরুরি ব্যবস্থা নিতে হবে।
৬. জনগণকে সতর্ক করে দিয়ে আমরা বলতে চাই—যদি সরকারের এই অব্যবস্থা চলতে থাকে, তবে আদালতের সিঁড়ি থেকে রাজপথ পর্যন্ত ন্যায়বিচারের জন্য তীব্র গণআন্দোলন গড়ে তোলা হবে।