শনিবার, ১৮ অক্টোবর ২০২৫

| ৩ কার্তিক ১৪৩২

স্পটিফাইয়ের এআই বিপ্লব

শিল্পীদের অধিকার রক্ষায় নতুন উদ্যোগ

প্রযুক্তি ডেস্ক

প্রকাশ: ১৭:৩৬, ১৭ অক্টোবর ২০২৫ | আপডেট: ১৭:৩৬, ১৭ অক্টোবর ২০২৫

শিল্পীদের অধিকার রক্ষায় নতুন উদ্যোগ

বিশ্বের বৃহত্তম মিউজিক স্ট্রিমিং প্ল্যাটফর্ম স্পটিফাই ঘোষণা দিয়েছে, তারা বড় রেকর্ড লেবেলগুলোর সঙ্গে মিলে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই)–ভিত্তিক সংগীত তৈরি প্রযুক্তি উন্নয়নে কাজ করছে—“দায়িত্বশীল উপায়ে”।
প্রতিষ্ঠানটি বলেছে, নতুন এআই টুলগুলো এমনভাবে তৈরি করা হবে যাতে গানের লেখক ও শিল্পীরা অগ্রাধিকার পান এবং তাদের কপিরাইট সুরক্ষিত থাকে।

কারা যুক্ত হচ্ছে এই প্রকল্পে
এই উদ্যোগে যুক্ত হচ্ছে বিশ্বের তিন প্রধান মিউজিক জায়ান্ট—সনি মিউজিক, ইউনিভার্সাল মিউজিক গ্রুপ ও ওয়ার্নার মিউজিক গ্রুপ।
এছাড়াও অংশ নিচ্ছে মিউজিক রাইটস ফার্ম মার্লিন ও ডিজিটাল মিউজিক কোম্পানি বিলিভ।
স্পটিফাই জানায়, তারা ইতোমধ্যেই প্রথম দফার এআই প্রোডাক্ট নিয়ে কাজ শুরু করেছে, যদিও বিস্তারিত এখনও প্রকাশ করা হয়নি।
স্পটিফাইয়ের এই ঘোষণাকে অনেকে স্বাগত জানালেও, সমালোচকরা আশঙ্কা করছেন যে এতে “মানব মানে সত্যিকার শিল্পীদের আয়ের অংশ আরও কমে যেতে পারে।”
নিউ অরলিন্সভিত্তিক শিল্পী ব্যবস্থাপনা প্রতিষ্ঠান মিডসিটিজেন এন্টারটেইনমেন্ট বলেছে, এআই ইতোমধ্যেই “সৃষ্টিশীল পরিবেশকে দূষিত” করেছে এবং “মানুষের রয়্যালটি ভাগ আরও সংকুচিত করেছে।”
অন্যদিকে ফেয়ারলি ট্রেইন্ড নামের সংস্থার প্রতিষ্ঠাতা এড নিউটন-রেক্স এটিকে একটি ইতিবাচক পদক্ষেপ বলেছেন—“এটি ভিন্নধর্মী। শিল্পীর অনুমতি নিয়েই এখানে এআই ব্যবহার করা হবে। এটি এক ধরনের নৈতিক এআই উদ্যোগ, যার প্রয়োজনীয়তা এখন তীব্র।”
স্পটিফাইয়ের সহ–সভাপতি অ্যালেক্স নরস্ট্রম বলেন,“প্রযুক্তি সবসময় শিল্পীর সেবায় থাকবে—তার বিপরীতে নয়।”
তিনি আরও জানান, প্রতিটি ব্যবহারিক ক্ষেত্রেই শিল্পী ও গীতিকাররা অগ্রিম চুক্তির মাধ্যমে ক্ষতিপূরণ ও স্বীকৃতি পাবেন।
এর আগে দুয়া লিপা, স্যার এলটন জন ও স্যার পল ম্যাককার্টনিসহ বহু তারকা অভিযোগ করেন, তাঁদের গান অনুমতি বা অর্থ ছাড়াই এআই ট্রেনিংয়ে ব্যবহার করা হয়েছে।

স্পটিফাইয়ের আগের অভিজ্ঞতা

যদিও স্পটিফাই নিজে কোনো গান তৈরি করে না, তবে প্ল্যাটফর্মটিতে বহু এআই–নির্মিত গান রয়েছে। ২০২৩ সালে ড্রেক ও দ্য উইকেন্ডের কণ্ঠস্বর ক্লোন করে বানানো ভাইরাল এআই গানটি তারা সরিয়ে দেয়।
একই বছর বিটলসের ‘নাউ এন্ড দেন’ গানটিও এআই প্রযুক্তিতে জন লেননের পুরোনো রেকর্ডিং থেকে তৈরি করে প্রকাশ করা হয় এবং তা গ্র্যামি জেতে।
ওয়ার্নার মিউজিক গ্রুপের প্রধান রবার্ট কিনসেল বলেন,“আমরা সবসময় চেয়েছি, এআই যেন শিল্পী ও গীতিকারদের বিপক্ষে নয়, বরং তাদের স্বার্থে কাজ করে।”তিনি জানান, নতুন এআই লাইসেন্সিং চুক্তিগুলোর মাধ্যমে শিল্পীদের অধিকার ও পারিশ্রমিক সুরক্ষিত রাখা হবে।
স্পটিফাইয়ের এই ঘোষণায় সংগীতজগতের এক নতুন অধ্যায় শুরু হলো—যেখানে প্রযুক্তি ও সৃজনশীলতা মুখোমুখি নয়, বরং পরস্পরের পরিপূরক হতে পারে। তবে শিল্পী ও তাদের আয়ের সুরক্ষায় কোম্পানির প্রতিশ্রুতি বাস্তবে কতটা কার্যকর হয়, সেটিই এখন দেখার বিষয়।

আরও পড়ুন