তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন সংশোধন দাবি তিন সংগঠনের
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১৮:৩৯, ৮ ডিসেম্বর ২০২৫ | আপডেট: ১৯:০৭, ৮ ডিসেম্বর ২০২৫
তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন সংশোধনের দাবিতে তিন সংগঠনের যৌথ বিবৃতি। ছবি: সংগৃহীত
অকাল মৃত্যু রোধ ও জনস্বাস্থ্য সুরক্ষায় তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন দ্রুত সংশোধনের আহ্বান জানিয়েছে দেশের তিনটি ধূমপানিবিরোধী সংগঠন। সোমবার (৮ ডিসেম্বর) এক যৌথ বিবৃতিতে সংগঠনগুলো জানায়,তামাকের বিপরীতে আইনকে যথাযথ শক্তিশালী না করলে দেশকে ভয়াবহ জনস্বাস্থ্য ঝুঁকির মুখে পড়তে হবে।
তারা বলছে, তামাকজনিত মৃত্যুর হার কমাতে এবং তরুণ প্রজন্মকে সুরক্ষায় বিদ্যমান আইনকে আরও শক্তিশালী করা ছাড়া বিকল্প নেই। সংগঠনগুলো হলো-ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন অব বাংলাদেশ, বাংলাদেশ লাং ফাউন্ডেশন এবং বাংলাদেশ ক্যান্সার সোসাইটি।
বিবৃতিতে স্বাক্ষর করেন ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশনের সভাপতি অধ্যাপক ডা. খন্দকার আব্দুল আউয়াল রিজভী, বাংলাদেশ ক্যান্সার সোসাইটির সভাপতি অধ্যাপক ডা. গোলাম মহিউদ্দিন ফারুক এবং বাংলাদেশ লাং ফাউন্ডেশনের মহাসচিব ডা. আসিফ মুজতবা মাহমুদ।
তারা জানান, বাংলাদেশে প্রতিরোধযোগ্য মৃত্যুর সবচেয়ে বড় কারণ এখন তামাক। টোব্যাকো অ্যাটলাস ২০২৫–এর তথ্য অনুযায়ী, দেশে প্রতিদিন প্রায় ৩৫৭ জন এবং বছরে ১ লাখ ৩০ হাজারের বেশি মানুষ তামাকজনিত কারণে অকালে প্রাণ হারান। অসংক্রামক রোগে মৃত্যুর হার বাড়ার পেছনেও তামাক অন্যতম দায়ী। বর্তমানে দেশে মোট মৃত্যুর ৭১ শতাংশই ঘটে হৃদরোগ, ক্যান্সার ও দীর্ঘমেয়াদি শ্বাসতন্ত্রের জটিলতার মতো অসংক্রামক রোগে, যার বড় অংশ তামাকসংশ্লিষ্ট।
বাংলাদেশ ক্যান্সার সোসাইটির বার্ষিক মূল্যায়নে দেখা গেছে, প্রতি বছর প্রায় ১৫ লাখ প্রাপ্তবয়স্ক তামাকজনিত রোগে আক্রান্ত হন। পরোক্ষ ধূমপানে বছরে প্রায় ২৫ হাজার মানুষের মৃত্যু ঘটে এবং ৬১ হাজার শিশু গুরুতর স্বাস্থ্যঝুঁকিতে পড়ে।
অর্থনৈতিক ক্ষতির হিসাবও ভয়াবহ। জন হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা তুলে ধরে বিবৃতিতে বলা হয়—২০২৩–২৪ অর্থবছরে তামাক থেকে সরকারের আয় হয়েছে ৪০ হাজার কোটি টাকা, অথচ স্বাস্থ্য ও পরিবেশগত ক্ষতির ব্যয় দাঁড়িয়েছে ৮৪ হাজার কোটি টাকা, অর্থাৎ তামাক থেকে পাওয়া আয়ের দ্বিগুণেরও বেশি অর্থ হারাচ্ছে দেশ।
সংগঠনগুলোর অভিযোগ, সরকারের তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন সংশোধনের উদ্যোগ শুরু হওয়ার পর থেকেই তামাক কোম্পানিগুলো বিভ্রান্তি ছড়াতে সক্রিয় হয়েছে। কিন্তু জনস্বাস্থ্য সুরক্ষায় শক্তিশালী আইন প্রণয়নই এখন জরুরি বলে মন্তব্য করেছে তারা। তাদের মতে—আইন শক্তিশালী করলে অকাল মৃত্যু কমবে, স্বাস্থ্যখাতের ওপর চাপ হ্রাস পাবে এবং জাতীয় অর্থনীতি লাভবান হবে।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়—তামাক ফুসফুস ও শ্বাসতন্ত্রকে ক্ষতিগ্রস্ত করে, ক্যান্সার ও যক্ষ্মার ঝুঁকি বাড়ায় এবং তরুণদের লক্ষ্য করে তামাক কোম্পানিগুলোর আগ্রাসী বিপণন দিনদিন ভয়াবহ আকার ধারণ করছে। তাই ধূমপানমুক্ত পরিবেশ নিশ্চিত করা, সব ধরনের বিজ্ঞাপন নিষিদ্ধ করা এবং ভেপ/ই–সিগারেট নিয়ন্ত্রণে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া এখন সময়ের দাবি।
এফসিটিসি নির্দেশনার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে সংগঠনগুলো ছয়টি সংশোধনী সুপারিশ উপস্থাপন করেছে—
১. সব পাবলিক স্থান ও গণপরিবহনে ধূমপানের নির্ধারিত স্থান বাতিল
২. বিক্রয়কেন্দ্রে তামাকপণ্যের প্রদর্শন নিষিদ্ধ
৩. তামাক কোম্পানির সিএসআর (সামাজিক দায়বদ্ধতা কার্যক্রম) সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ
৪. ই–সিগারেট ও ভেপের ক্ষতি থেকে শিশু–কিশোরদের সুরক্ষায় কার্যকর ব্যবস্থা
৫. তামাকপণ্যের খুচরা ও খোলা বিক্রয় সম্পূর্ণ বন্ধ
৬. সচিত্র স্বাস্থ্য সতর্কবার্তা ৫০% থেকে বাড়িয়ে প্যাকেটের ৯০% করা
সংগঠনগুলোর দাবি—এই ছয়টি সুপারিশ বাস্তবায়িত হলে দেশের জনস্বাস্থ্য ও জাতীয় অর্থনীতি উভয়ই লাভবান হবে এবং আগামী প্রজন্ম তামাকের ভয়াবহ ক্ষতি থেকে সুরক্ষিত থাকবে।
