দেবের বোন থেকে নায়িকা, সমাজ বদলের সাক্ষী আমি : পাওলি দাম
বিনোদন ডেস্ক
প্রকাশ: ১২:৫২, ২০ অক্টোবর ২০২৫

ছবি: সংগৃহীত
আমার এক পিসিমার দুশ্চিন্তা ছিল ছোটবেলায়— “এই মেয়েটার গায়ের রং তো একেবারে কালো! ওর বিয়ে হবে কী করে?” মা-বাবা মুক্তমনা ছিলেন, কিন্তু সমাজের মন্তব্যের হাত থেকে তারা রেহাই পাননি। তখনও ধারণা, ফর্সা মানেই সুন্দর।
আজ, শ্যামাপুজোর সময় দাঁড়িয়ে আমি ভাবি— সমাজ সত্যিই অনেকটা বদলেছে। কিন্তু এই পথ চলা সহজ ছিল না।
‘কালবেলা’র সময় গৌতম ঘোষ আমাকে বলেছিলেন, “পাওলি, তোর গায়ের রংটা দুর্দান্ত।” সেই প্রথম একজন বিশিষ্ট মানুষ বলেছিলেন— কালোও সুন্দর হতে পারে।
তবু তখনও সিনেমা-জগতে আমার মতো মেয়েরা ছিল ব্যতিক্রম। ‘আই লভ ইউ’-তে দেবের বোন ছিলাম কেবল গায়ের রংয়ের কারণে। পরের দিকে অতনু রায়চৌধুরীর ‘সাঁঝবাতি’-তে সেই একই নায়কের নায়িকা হলাম— তখন বলেছিলাম, “শ্যামবর্ণাদের অবস্থার উন্নতি হয়েছে, আমি দেবের বোন থেকে নায়িকা হয়েছি!”
আমার মনে হয়েছিল, প্রতিবাদ না করলে বদল আসবে না। তাই বেছে নিয়েছি এমন চরিত্র, যেখানে কালো ত্বকই অস্ত্র— প্রতিবাদী, বলিষ্ঠ, জেদি নারী। পরিচালকেরাও পাশে ছিলেন। ধীরে ধীরে দর্শকের চোখে চাপা গায়ের রঙও হয়ে উঠল সৌন্দর্যের প্রতীক।
আজ ফর্সা হওয়ার ক্রিমের বাজারে মন্দা। ‘ফেয়ারনেস’ শব্দটা প্রায় হারিয়ে গেছে। প্রসাধনী কোম্পানিগুলিও বলছে— নিজের স্বাভাবিক ত্বকটাই তোমার শক্তি।
এই বদল কেবল সিনেমার পর্দায় নয়— মনেও এসেছে। নায়ক-নায়িকা, দু’জনের সমান অংশগ্রহণেই গড়ে উঠবে এই পরিবর্তন। আমি বিশ্বাস করি, লিঙ্গ-সমতা ও অর্থনৈতিক স্বাধীনতাই সব প্রতিবাদের মূল চাবিকাঠি।
যিনি এক সময় আমার বিয়ে নিয়ে চিন্তিত ছিলেন, তিনিই আজ বলেন, “পাওলির মতো সুন্দরীর বরও তো সুন্দর হবেই।”— সমাজও এমনই ঘুরে দাঁড়িয়েছে।
যারা আমার মতো শ্যামবর্ণা, তাদের বলি— মন খারাপ করো না। কালোর মধ্যে আছে গভীর রহস্য, অনন্ত সৌন্দর্য। বলিউডের রেখাজিকে দেখো, তাঁর মতো ‘প্রহেলিকা’ আর কে আছে! আমারও তো বলে, আমি রহস্যময়ী— ‘কালী’ না ‘দুর্গা’ আগে বুঝে ফেললে আর আকর্ষণ কোথায়?
এই রহস্য, এই আত্মবিশ্বাস— এটাই শ্যামার আসল শক্তি।
শ্যামাপুজোয় তাই বলব— কালোই শক্তি, কালোই সৌন্দর্য, কালোই নারীর জাগরণ।