ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দিচ্ছে যুক্তরাজ্য
সমাজকাল ডেস্ক
প্রকাশ: ১৮:০৫, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৫ | আপডেট: ১৯:১৭, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৫

ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দিতে যাচ্ছে যুক্তরাজ্য। প্রধানমন্ত্রী স্যার কিয়ার স্টারমার রবিবার বিকেলে এ সংক্রান্ত ঘোষণা দিতে পারেন বলে সরকারি সূত্র নিশ্চিত করেছে।
বিশ্লেষকদের মতে, এটি ব্রিটিশ পররাষ্ট্রনীতিতে এক যুগান্তকারী পরিবর্তন। এতদিন লন্ডনের অবস্থান ছিল—শান্তি প্রক্রিয়ার নির্দিষ্ট প্রেক্ষাপটে ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দেওয়া হবে। কিন্তু গাজার ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয় এবং ইসরায়েলের অব্যাহত অভিযান ব্রিটেনকে নতুন সিদ্ধান্তে বাধ্য করেছে।
গাজা সংকট ও আন্তর্জাতিক চাপ
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের আকস্মিক হামলার পর গাজায় ব্যাপক সামরিক অভিযান শুরু করে ইসরায়েল। সেই থেকে অন্তত ৬৪ হাজার ৯৬৪ জন ফিলিস্তিনি প্রাণ হারিয়েছে বলে গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে। লাখো মানুষ ঘরছাড়া হয়েছে।
জাতিসংঘ সম্প্রতি জানিয়েছে, গাজায় ইসরায়েলি সেনারা ‘গণহত্যা’ চালিয়েছে, যদিও ইসরায়েল এ অভিযোগ অস্বীকার করেছে।
স্টারমার আগেই বলেছিলেন, গাজার দুর্ভিক্ষ ও সহিংসতা ‘অসহনীয়’। পশ্চিম তীরে অব্যাহত ইসরায়েলি বসতি স্থাপন আন্তর্জাতিক আইনবিরোধী হওয়ায়, দীর্ঘমেয়াদি শান্তির আশা রক্ষায় লন্ডনের এ পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি হয়ে উঠেছে।
রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া
ফিলিস্তিন কর্তৃপক্ষের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস যুক্তরাজ্যের সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছেন। তবে বৈঠকে ব্রিটিশ সরকার স্পষ্ট করেছে, ভবিষ্যতের শাসন কাঠামোতে হামাসের কোনো ভূমিকা থাকবে না।
অন্যদিকে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু এ সিদ্ধান্তকে ‘সন্ত্রাসকে পুরস্কৃত করা’ বলে অভিহিত করেছেন।
জিম্মিদের পরিবারও এক খোলা চিঠিতে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর কাছে অনুরোধ জানিয়েছে, অন্তত জীবিত ২০ জন জিম্মি ফেরার আগ পর্যন্ত স্বীকৃতি না দিতে।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পও ব্রিটিশ অবস্থানের বিরোধিতা করেছেন। তবে লন্ডনের বক্তব্য, ফিলিস্তিনের রাষ্ট্র হওয়ার অধিকার হামাসের ওপর নির্ভরশীল নয়, কারণ হামাসকে তারা একটি সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে বিবেচনা করে।
বৈশ্বিক প্রেক্ষাপট
জাতিসংঘের ১৯৩ সদস্য রাষ্ট্রের মধ্যে ইতিমধ্যেই প্রায় ৭৫ শতাংশ ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দিয়েছে। গত বছর স্পেন, আয়ারল্যান্ড ও নরওয়ে এ স্বীকৃতি দেয়। সম্প্রতি পর্তুগাল, ফ্রান্স, কানাডা ও অস্ট্রেলিয়াও একই পথে হাঁটার ইঙ্গিত দিয়েছে।
তবে আন্তর্জাতিকভাবে ফিলিস্তিনের কোনো নির্দিষ্ট সীমানা, রাজধানী বা সেনাবাহিনী নেই। ফলে এ স্বীকৃতি মূলত প্রতীকী। দ্বি-রাষ্ট্রীয় সমাধান বলতে পশ্চিম তীর ও গাজা উপত্যকাকে নিয়ে পূর্ব জেরুজালেমকে রাজধানী করে একটি স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠাকে বোঝায়। বর্তমানে ওই অঞ্চলগুলো ইসরায়েলের দখলে থাকায় ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ নেই।
লেবার পার্টির অভ্যন্তরে চাপ
লেবার পার্টির ভেতরেই দীর্ঘদিন ধরে ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের স্বীকৃতির দাবি জোরদার হচ্ছিল। জুলাই মাসে স্টারমারের ঘোষণার আগেই অর্ধেকের বেশি লেবার এমপি সরকারকে অবিলম্বে সিদ্ধান্ত নিতে আহ্বান জানিয়েছিলেন। তাদের মতে, শান্তি প্রক্রিয়া রক্ষায় এখনই পদক্ষেপ নেওয়া সময়োপযোগী।