তড়িঘড়ি করে দুই বন্দর বিদেশিদের হাতে কেন?
প্রকাশ: ১৫:২৪, ১৮ নভেম্বর ২০২৫ | আপডেট: ০১:২৩, ১৯ নভেম্বর ২০২৫
দেশের মানুষ যখন শেখ হাসিনার রায় নিয়ে মেতে আছে, দেশের গণমাধ্যমগুলো যখন এইসব খবর ব্যানার শিরোনাম করতে ব্যস্ত ঠিক তখনই দেশের দুই গুরুত্বপূর্ণ টার্মিনাল ইউনূস সরকার বিদেশিদের হাতে তুলে দিয়েছে। একটির সাথে চুক্তি করেছে ৩০ বছর, আর একটির সাথে ২২ বছরের।
জনগণকে ন্যূনতম বিষয় না জানিয়ে মাত্র ১৩ দিনের মধ্যে চট্টগ্রামের পতেঙ্গায় কর্ণফুলী নদীর তীরে লালদিয়া টার্মিনাল নির্মাণ এবং কেরানীগঞ্জের পানগাঁও নৌ টার্মিনাল দেওয়া হয়েছে ডেনমার্কের এপিএম টার্মিনালস এবং সুইজারল্যান্ডের প্রতিষ্ঠান মেডলগ এসের হাতে।
কি ক্ষমতারে বাবা। যে দেশের জনগণ ভারতের সাথে কী কী চুক্তি হাসিনা করেছে, তা জানার জন্য ব্যাকুল সেই দেশের শীর্ষস্থানীয় দুই বন্দরের দায়দায়িত্ব বিদেশিদের কাঁধে তুলে দিয়েছে গণ-অভ্যুত্থানের ভিতর জন্ম নেওয়া ইতিহাসের সবচেয়ে দুর্বল সরকারটি। প্রশ্ন হলো, কিসের ভিত্তিতে তারা এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে? কার কার স্বার্থ রক্ষায় এই সরকার দীর্ঘমেয়াদি এই চুক্তি করতে গেল? এখানে আমার দেশ ক্ষতিগ্রস্ত হবে না লাভবান হবে তার হিসেব কি আমাদের জানানোর ন্যূনতম প্রয়োজন ইউনূস সরকার করেছে?
না করেনি। অত্যন্ত সু-কৌশলে এমন একটি দিনকে তারা বেছে নিয়েছে, যে দিনটি এই দেশের মানুষ হাসিনার মৃত্যুদণ্ডের রায় নিয়ে মিষ্টিবিলিতে ব্যস্ত, যাতে কেউ না জানে, কেউ না বোঝে। পত্রিকাগুলো এই খবরটি প্রথম পাতায় স্থান দিতে পারেনি। অন্য সময় হলে, হয়ত তারা প্রথম পাতায় আনত, কিন্তু শেখ হাসিনার রায়ের দিনকে বেছে নেওয়া মূলত মিডিয়ার কাভারেজকে ডিমলাইটে ফেলার কৌশল ছিল কি না তা ভাবনার বিষয়।
যদিও আমাদের দেশ-সচেতন কিছু বাম ধারার লেখক-বুদ্ধিজীবীরা শুরু থেকে এর প্রতিবাদ করে আসছিলেন, কিন্তু সরকার সেই প্রতিবাদকে তোয়াক্কা করেনি। তোয়াক্কা না করেই, চট্টগ্রাম বন্দরের লালদিয়া কনটেইনার টার্মিনাল নির্মাণ এবং ৩০ বছরের জন্য এপি মোলার মায়ের্সক গ্রুপের সহযোগী প্রতিষ্ঠান এপিএম টার্মিনালস ৫৫ কোটি ডলার আর ২২ বছরের জন্য ঢাকার কেরানীগঞ্জের পানগাঁও নৌ টার্মিনাল মেডলগ এস-এর হাতে ৪ কোটি ডলার বিনিয়োগের প্রস্তাবে বাংলাদেশ চুক্তি করেছে, সেই চুক্তিতে কী কী আছে, তা উন্মুক্ত করতে পারছে না তারা। জনগণকে অন্ধকারে রেখে, জনগণের স্বার্থ উদ্ধারের নাম করে এমন চুক্তি দেশের জন্য কতটা মঙ্গলজনক হবে?
গণমাধ্যমের খবর বলছে, চট্টগ্রাম বন্দরটির জন্য গত ৪ নভেম্বর এপিএম টার্মিনালস কারিগরি ও আর্থিক প্রস্তাব দাখিল করার পরের দিন তা ঝড়ের গতিতে মূল্যায়ন করা হয়। ৬ নভেম্বর আর্থিক প্রস্তাব মূল্যায়নের পর সরকারি ছুটির দিনেই (৭-৮ নভেম্বর) দর–কষাকষি করে তা চূড়ান্ত হয়। আর ৯ নভেম্বর দর–কষাকষি শেষে ওইদিন বন্দর বোর্ড সভায় অনুমোদন দেওয়ার পর ১২ নভেম্বর অর্থনৈতিক বিষয়সংক্রান্ত উপদেষ্টা কমিটির সভায় পাস হয়।
আমি জানি না এত দ্রুত কাজ সরকার অন্য কোন প্রকল্পে করে কি না, তবে দেশের স্বার্থ না ব্যক্তিগত স্বার্থ চরিতার্থ করছে, তা সময়ের পরিক্রমা বলবে। তবে যেভাবে দেশের মানুষকে না জানিয়ে চুপিচুপি বিদেশিদের হাতে নিজেদের বন্দর সঁপে দেওয়া হলো। দীর্ঘমেয়াদি চুক্তিতে সই করে কয়েক মাস পর যে সরকার ক্ষমতা হারাবে, ঠিক তাদের এমন তড়িঘড়ি সিদ্ধান্ত কার স্বার্থে? বিদেশি নাগরিককে এনে বিনিয়োগ বোর্ডের দায়িত্ব দিলেন, ক্ষমতা হারানোর পর তারা দেশ ছাড়বে, কিন্তু তাদের এই ঘানি কিন্তু আপনাকে টানতে হবে।
রাতের-অন্ধকারে এমন চুক্তির তীব্র নিন্দা জানাই। দ্রুত সরকারকে এই ধরনের চুক্তি থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানাই।
লেখক: গবেষক, ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়
nadim.ru@gmail.com
