দখলবাজদের হাত থেকে দেশ বাঁচাতে হবে
অধ্যাপক ড. কামরুল হাসান মামুন
প্রকাশ: ১১:৩২, ১৯ নভেম্বর ২০২৫
চব্বিশ সালের গণঅভ্যুথানের পরপরই নতুন আরেক দল শিক্ষক, সাংবাদিক ও বুদ্ধিজীবী গজিয়েছে। এদের অধিকাংশেরই একমাত্র পুঁজি হলো এইটা প্রমাণ করা যে আগের আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে সে কতটা নির্যাতনের শিকার হয়েছে বা কর্মক্ষেত্রে বঞ্চিত হয়েছে। এরাই হলো আসল স্বার্থপর। ইতিমধ্যেই আওয়ামী লীগ আমলে যেইসব শিক্ষক, সাংবাদিক ও বুদ্ধিজীবী দাপিয়ে বেড়িয়েছেন তারা এখন দৌড়ের ওপরে আর তাদের শূন্যস্থান দখল করেছে একদল স্বার্থপর, পদলোভী, ধান্দাবাজ বুদ্ধিজীবী। এই দখলবাজরা দেশটাকে আবার আরেক ক্রান্তিলগ্নে নিয়ে যাবে এবং আমাদের আবার আন্দোলন করে এদের হাত থেকে দেশ বাঁচাতে নামতে হবে।
দেশ কতটা ভালো চলবে- সেটা শুধু সরকারের ওপর নির্ভর করে না। সরকারকে দেশের বুদ্ধিজীবীরা কতটা সোজা ও ভালো পথে থাকতে বাধ্য করে তার ওপর নির্ভর করে। দুঃখজনক হলো বাংলাদেশের শিক্ষক, সাংবাদিক ও বুদ্ধিজীবী প্রচণ্ড স্বার্থপর এবং স্বার্থের কারণে এরা বিবৃতি ব্যবসা করে। একটি সভ্য দেশের বুদ্ধিজীবী সমাজ-শিক্ষক, সাংবাদিক, গবেষক, লেখক হলো সমাজের নৈতিক কম্পাস, যারা সরকারকে ভুল পথ থেকে ফিরিয়ে আনতে পারে এবং জনগণের স্বার্থ রক্ষায় জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে পারে।
দুঃখজনক হলেও সত্য, বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে এই বুদ্ধিজীবী শ্রেণির একটি বড় অংশ নিজেদের অবস্থানকে জনস্বার্থে ব্যবহার করার বদলে ব্যক্তিস্বার্থ, সুবিধা, পদ-পদবি ও ক্ষমতার কাছাকাছি থাকার আকাক্সক্ষায় পরিচালিত হয়। ফলে তাদের অনেকেই সত্যভিত্তিক সমালোচনা বা নৈতিক অবস্থান নেওয়ার পরিবর্তে সুযোগসন্ধানী ‘বিবৃতি-ব্যবসা’ বা অবস্থানভেদে সুবিধাবাদী মন্তব্য করার দিকে ঝুঁকে পড়েন। এতে শুধু বুদ্ধিজীবী সমাজের বিশ্বাসযোগ্যতাই ক্ষুণ্ন হয় না, রাষ্ট্রের সামগ্রিক অগ্রগতি ও গণতান্ত্রিক বিকাশও বাধাগ্রস্ত হয়। সত্যিকারের বুদ্ধিজীবী শক্তি তখনই কার্যকর হয়, যখন তারা ব্যক্তিস্বার্থের ঊর্ধ্বে ওঠে সমাজের পক্ষে দাঁড়ায় এবং ভুলকে ভুল বলার সাহস দেখায়।
লেখক: শিক্ষক, পদার্থবিজ্ঞান বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
