আইসিই অভিযানে আটক দক্ষিণ কোরীয় শ্রমিক দেশে ফিরলেন
সমাজকাল ডেস্ক
প্রকাশ: ১৫:৪১, ১২ সেপ্টেম্বর ২০২৫

দক্ষিণ কোরিয়ার জন্য নাটকীয় এক সপ্তাহের অবসান হলো শুক্রবার। যুক্তরাষ্ট্রের জর্জিয়ায় ইমিগ্রেশন অ্যান্ড কাস্টমস এনফোর্সমেন্ট (আইসিই) অভিযানে আটক হওয়া ৩০০–এর বেশি কোরীয় শ্রমিক অবশেষে স্বদেশে ফিরলেন। তাদের বহনকারী বিশেষ চার্টার্ড বিমান ইনচন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছালে অপেক্ষমাণ পরিবারের সঙ্গে অশ্রুভেজা পুনর্মিলন ঘটে।
একজন মায়ের চোখে এখনও আতঙ্কের ছাপ—“হাতকড়া ও পায়ে শিকল পরানো অবস্থায় আমার ছেলেকে কল্পনা করাও মানসিক আঘাতের মতো।” অন্য এক অভিভাবক বলেন, “আমার ছেলে আবার বিদেশে কাজ করতে যেতে চাইবে কি না, সে বিষয়ে আমি এখনই নিশ্চিত নই।”
জর্জিয়ার এলাবেলে নির্মীয়মাণ হুন্দাই-এলজি যৌথ ব্যাটারি প্রকল্পে এই অভিযানে শ্রমিকদের হাতকড়া ও পায়ে শিকল পরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। আইসিই দাবি করেছে, অনেকে অবৈধভাবে প্রবেশ করেছে বা ভিসার মেয়াদোত্তীর্ণ অবস্থায় কাজ করছিল। তবে আটককৃতদের আইনজীবীরা বলছেন, তারা বেশিরভাগই পরামর্শক বা প্রকৌশলী, বৈধ ভিসা বা ভিসা ওয়েভার প্রোগ্রামের আওতায় কাজ করছিলেন।
এই দৃশ্য দক্ষিণ কোরিয়ায় জনমনে তীব্র ক্ষোভ সৃষ্টি করেছে। দীর্ঘদিনের সামরিক ও কৌশলগত মিত্রতার পটভূমিতে যুক্তরাষ্ট্রের এমন আচরণকে অনেকেই “চরম অবমাননা” হিসেবে দেখছেন।
ঘটনার পর সিউল ওয়াশিংটনে জরুরি কূটনৈতিক তৎপরতা চালায়। পররাষ্ট্রমন্ত্রী চো হিউন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিওর সঙ্গে আলোচনায় শ্রমিকদের পুনরায় যুক্তরাষ্ট্রে ফেরার সুযোগ চান। তবে মার্কিন পক্ষ শুধু “পুনর্বাসন প্রক্রিয়া এগিয়ে নেওয়া হবে” বলে সীমিত প্রতিক্রিয়া দিয়েছে।
রাষ্ট্রপতি লি জে মিয়ং বৃহস্পতিবার কড়া অবস্থান নেন—“এই পরিস্থিতি কোম্পানিগুলোকে প্রশ্ন করতে বাধ্য করবে, যুক্তরাষ্ট্রে বিনিয়োগ আদৌ নিরাপদ কি না।” তিনি সতর্ক করেন, এ ধরনের ঘটনা সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগে (এফডিআই) বড় প্রভাব ফেলতে পারে।
এদিকে হুন্দাই সিইও হোসে মুনোজ জানিয়েছেন, অভিযানের কারণে ব্যাটারি প্রকল্পের উৎপাদন শুরু অন্তত দুই থেকে তিন মাস পিছিয়ে যাবে। প্রকল্পটি যুক্তরাষ্ট্রে ৮,৫০০ কর্মসংস্থানের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। কিন্তু এখনো স্থায়ী কর্মী নিয়োগ কার্যত শুরুই হয়নি, অধিকাংশ শ্রমিকই ছিলেন সাময়িক চুক্তিভিত্তিক—যাঁরা অভিযানে আটক হয়েছেন।
মুনোজ বলেন, আটককৃতদের অধিকাংশই এলজি সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানে নিয়োজিত ছিলেন। আপাতত হুন্দাই অন্য প্ল্যান্ট থেকে ব্যাটারি সংগ্রহ করবে।
গত আগস্টে ডোনাল্ড ট্রাম্প ও লি জে মিয়ংয়ের শীর্ষ বৈঠকে দক্ষিণ কোরীয় কোম্পানিগুলো যুক্তরাষ্ট্রে কয়েকশ’ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। কিন্তু এই আইসিই অভিযানের পর সেই বিনিয়োগের ভবিষ্যৎ নিয়ে প্রশ্ন উঠছে।
যুক্তরাষ্ট্র–দক্ষিণ কোরিয়া সম্পর্ক বরাবরই নিরাপত্তা ও অর্থনৈতিক সহযোগিতার স্তম্ভে দাঁড়িয়ে ছিল। তবে জর্জিয়ার এই ঘটনায় দুই দেশের মধ্যে আস্থার ফাটল দীর্ঘদিনের জন্য থেকেই যেতে পারে বলে পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন।