বিডিআর বিদ্রোহ মামলায় মুক্তি পেলেন ৩৭ জন
গাজীপুর প্রতিনিধি
প্রকাশ: ২১:৪২, ২৪ নভেম্বর ২০২৫
গাজীপুরের কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগার। ছবি: সংগৃহীত
বিডিআর বিদ্রোহের ঘটনায় করা বিস্ফোরক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনের মামলায় গাজীপুরের কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে মুক্তি পেয়েছেন বিডিআরের সাবেক ৩৭ সদস্য।
সোমবার (২৪ নভেম্বর) সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা থেকে তাদের পর্যায়ক্রমে মুক্তি দেওয়া হয়। এসময় দীর্ঘ কারাবাস শেষে স্বজনকে কাছে পেয়ে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন স্বজনরা। কারা ফটকে এক আবেগঘন পরিবেশ তৈরি হয়।
গত বৃহস্পতিবার আদালত ৫৩ জনের জামিন মঞ্জুর করেন। সোমবার দুপুরে ওই ৩৭ জনের জামিন সংক্রান্ত কাগজপত্র কারাগারে পৌঁছালে যাচাই–বাছাই শেষে সন্ধ্যায় তাদের মুক্তি দেওয়া হয়।
কারাগার সূত্র জানায়, কাশিমপুর হাই সিকিউরিটি কারাগার থেকে ১ জন, কেন্দ্রীয় কারাগার পার্ট–১ থেকে ২ জন ও কেন্দ্রীয় কারাগার পার্ট–২ থেকে ৩২ জন মুক্তি পেয়েছেন।
কাশিমপুর হাই সিকিউরিটি কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার মোহাম্মদ আল মামুন বলেন, “জামিনের কাগজপত্র যাচাই শেষে একজন সাবেক বিডিআর সদস্যকে সন্ধ্যায় মুক্তি দেওয়া হয়েছে।”
কেন্দ্রীয় কারাগার পার্ট–১-এর জেল সুপার আবু নূর মো. রেজা বলেন, “আজ দুটি মুক্তি কার্যকর করা হয়েছে।”
পার্ট–২-এর জেল সুপার মো. আল মামুন জানান, “৩২ জনের জামিনপত্র যাচাই–বাছাই শেষে সন্ধ্যায় মুক্তি দেওয়া হয়েছে।”
মুক্তিপ্রাপ্তদের স্বজনরা কারা ফটকে অপেক্ষা করছিলেন দীর্ঘসময়। মুক্তি পেয়ে বাইরে আসার পর অনেকেই কান্নায় ভেঙে পড়েন।
সাবেক বিডিআর সদস্য আব্দুল্লাহ আল মামুনের বড় বোন কামরুন্নাহার বলেন, “ভাবতাম ভাইকে আর পাব না। আজ তাকে দেখে মনে হচ্ছে স্বপ্ন সত্য হলো। বাবার মৃত্যু আর মায়ের অসুস্থতার পেছনে ভাইয়ের দুঃশ্চিন্তা ছিল। এখন তাকে মায়ের কাছে তুলে দিতে পারলে স্বস্তি পাব।”
তিনি আরও বলেন, যারা এখনো কারাগারে আছেন তারাও যেন ন্যায়বিচার পান।
উল্লেখ্য, ২০০৯ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিডিআরের (বর্তমানে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ—বিজিবি) সদর দফতর ঢাকার পিলখানায় বিদ্রোহ হয়। সেদিন বিডিআরের কয়েক শ সদস্য পিলখানায় নৃশংস হত্যাকাণ্ড চালান। প্রায় দুই দিনব্যাপী চলা বিদ্রোহে বিডিআরের তৎকালীন মহাপরিচালক মেজর জেনারেল শাকিল আহমেদসহ ৫৭ সেনা কর্মকর্তা নিহত হন। সব মিলিয়ে ৭৪ জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। পিলখানায় বিডিআরের বিভিন্ন পর্যায়ে দায়িত্ব পালনরত সামরিক বাহিনীর কর্মকর্তাদের পরিবারের সদস্যরাও সেদিন নৃশংসতার শিকার হন।
পিলখানায় হত্যাযজ্ঞের ঘটনায় ২০০৯ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি হত্যা ও বিস্ফোরক দ্রব্য আইনে পৃথক দুটি মামলা হয়। হত্যার ঘটনায় করা মামলায় আসামি করা হয় ৮৫০ জনকে। দেশের বিচার বিভাগের ইতিহাসে আসামির সংখ্যার দিক থেকে এটিই সবচেয়ে বড় মামলা।
বিচারিক আদালত ২০১৩ সালের ৫ নভেম্বর এই মামলার রায় দেন। রায়ে ১৫২ জনকে মৃত্যুদণ্ড, ১৬০ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ও ২৫৬ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দেওয়া হয়। রায়ে খালাস পান ২৭৮ জন। রায় ঘোষণার আগে চার আসামি মারা যান।
