নতুন স্মার্টফোনে বাধ্যতামূলক সরকারী সাইবার সেফটি অ্যাপ: ভারতে বিতর্ক তুঙ্গে
প্রযুক্তি ডেস্ক
প্রকাশ: ০৮:০৯, ৩ ডিসেম্বর ২০২৫
ভারতে বিক্রি হওয়া সব নতুন স্মার্টফোনে বাধ্যতামূলকভাবে একটি সরকারি সাইবার সেফটি অ্যাপ প্রি-ইনস্টল করার নির্দেশ জারি হয়েছে। বিশ্বের বৃহত্তম মোবাইল বাজারগুলোর একটি। ভারতে মোবাইল গ্রাহক সংখ্যা এখন ১.২ বিলিয়নের বেশি—সেখানে এই সিদ্ধান্তকে কেন্দ্র করে শুরু হয়েছে ব্যাপক সমালোচনা।
বিবিসি সূত্রে জানা যায়, সরকারের এই সিদ্ধান্তে বাড়ছে নজরদারি ও নাগরিক গোপনীয়তা লঙ্ঘনের আশঙ্কা।
ভারতের টেলিকম বিভাগ জানায়, আগামী ৯০ দিনের মধ্যে দেশটিতে উৎপাদিত বা আমদানিকৃত সব নতুন স্মার্টফোনে প্রি-ইনস্টল থাকতে হবে ‘সঞ্চার সাথী’ নামের সরকারি অ্যাপ।এবং গুরুত্বপূর্ণ বিষয়—
“অ্যাপটির কার্যকারিতা কোনোভাবেই নিষ্ক্রিয় বা সীমাবদ্ধ করা যাবে না।”
ব্যবহারকারীরা যেন—মোবাইল সেটের ইএমআই যাচাই করতে পারেন, হারানো বা চুরি যাওয়া ফোন রিপোর্ট করতে পারেন,প্রতারণামূলক কল বা বার্তা চিহ্নিত করতে পারেন—এ জন্যই এই অ্যাপ প্রি-ইনস্টল বাধ্যতামূলক করা হয়েছে বলে দাবি সরকারের।
কিন্তু কেন এত বিতর্ক?
বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়, অ্যাপটির প্রাইভেসি পলিসি অনুযায়ী, এটি—ফোন কল ম্যানেজ করতে পারে, মেসেজ পাঠাতে ও পড়তে পারে, কল লগ ও মেসেজ লগ অ্যাক্সেস করতে পারে, ফোনের ক্যামেরা, ছবি ও ফাইল অ্যাক্সেস করতে পারে।
ডিজিটাল অধিকার সংগঠন ইন্টারনেট ফ্রিডম ফাউন্ডেশন বলেছে— “এটি কার্যত ভারতীয়দের হাতে দেওয়া প্রতিটি স্মার্টফোনকে রাষ্ট্রীয় নিয়ন্ত্রিত সফটওয়্যারযুক্ত ডিভাইসে পরিণত করছে, যা ব্যবহারকারী ইচ্ছা করেও সরাতে পারবেন না।”
উচ্চমাত্রার সমালোচনার মুখে ভারতের যোগাযোগমন্ত্রী জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়া জানান— “এটি সম্পূর্ণ স্বেচ্ছামূলক ব্যবস্থা। ব্যবহারকারীরা চাইলে অ্যাপটি ডিলিট করতে পারবেন।”
কিন্তু বড় প্রশ্ন—যে অ্যাপের ফাংশন নিষ্ক্রিয় বা সীমাবদ্ধ করা যাবে না—তা ডিলিট করা যাবে কীভাবে?
এ বিষয়ে কোনো স্পষ্ট ব্যাখ্যা দেননি মন্ত্রী।
সরকার দাবি করছে—নকল বা স্পুফড ইএমআই ডিভাইস সাইবার নিরাপত্তার বড় হুমকি, চুরি হওয়া ফোন পুনরায় বাজারে বিক্রির প্রবণতা বাড়ছে, সেকেন্ড-হ্যান্ড মার্কেটে এটি অপরাধ বাড়াচ্ছে।
সরকার জানা, অ্যাপটি চালুর পর এখন পর্যন্ত ৭ লাখের বেশি চুরি যাওয়া ফোন উদ্ধার হয়েছে, শুধু অক্টোবরেই ৫০ হাজারের বেশি।
প্রযুক্তি বিশ্লেষক প্রসান্তো কে. রায় বিবিসিকে বলেন, “অ্যাপটি ঠিক কী করছে তা আমরা দেখতে পাচ্ছি না। কিন্তু এটি যে ব্যাপক অনুমতি চাইছে, তাতে উদ্বেগ স্বাভাবিক।”
তিনি আরও জানান—অধিকাংশ মোবাইল প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান বিক্রির আগেই সরকারী অ্যাপ প্রি-ইনস্টল করতে দেয় না।
চীন ও রাশিয়া ছাড়া এই নীতি বিশ্বের কোথাও প্রচলিত নয়। অ্যাপলসহ বহু কোম্পানি এর বিরোধিতা করবে।
রয়টার্সের তথ্য অনুযায়ী, অ্যাপল ইতোমধ্যে ভারত সরকারকে জানিয়ে দিয়েছে যে তারা এ নীতি মানবে না এবং উদ্বেগের বিষয়গুলো দিল্লিকে জানাবে।
আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপট: রাশিয়াতেও একই ধরনের সিদ্ধান্ত। ভারত একা নয়।
২০২৫ সালের আগস্টে রাশিয়াও সব স্মার্টফোনে সরকারি ‘ম্যাক্স মেসেঞ্জার অ্যাপ প্রি-ইনস্টল বাধ্যতামূলক করে, যা নিয়েও তীব্র বিতর্ক তৈরি হয়।
