জলবায়ু পরিবর্তনে বিপর্যস্ত বিশ্বের জলচক্র: জাতিসংঘের সতর্কতা
বিশেষ প্রতিবেদন
প্রকাশ: ১৫:১৪, ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫

জাতিসংঘের সতর্কবার্তা অনুযায়ী জলবায়ু পরিবর্তন পৃথিবীর জলচক্রকে ক্রমশ অস্থিতিশীল করে তুলছে। এর ফলে বিশ্বজুড়ে একদিকে দীর্ঘস্থায়ী খরা, অন্যদিকে ভয়াবহ বন্যা জীবন ও জীবিকায় বিপর্যয় ডেকে আনছে।
জাতিসংঘের বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থা (ডব্লিউএমও) বৃহস্পতিবার প্রকাশিত তাদের বার্ষিক স্টেট অব গ্লোবাল ওয়াটার রিসোর্সেস প্রতিবেদনে জানিয়েছে, বৈশ্বিক উষ্ণায়ন ও জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে জলচক্র এতটাই অনিশ্চিত হয়ে উঠছে যে কোথাও নদী অববাহিকা শুকিয়ে যাচ্ছে, আবার কোথাও অস্বাভাবিক বর্ষণে ডুবে যাচ্ছে শহর ও গ্রাম।
২০২৪ ছিল সবচেয়ে উষ্ণ বছর
প্রতিবেদনে বলা হয়, গত বছর ছিল ইতিহাসের সবচেয়ে উষ্ণ বছর। এর ফলে দক্ষিণ আমেরিকার উত্তরাঞ্চল, অ্যামাজন অববাহিকা ও দক্ষিণ আফ্রিকা ভয়াবহ খরার মুখে পড়ে। অপরদিকে মধ্য আফ্রিকা, ইউরোপ ও এশিয়ার বহু অঞ্চল অতিরিক্ত বর্ষণ ও ঘূর্ণিঝড়ের আঘাতে বিপর্যস্ত হয়।
জাতিসংঘ জানায়, পরপর ছয় বছর ধরে বৈশ্বিক নদী অববাহিকায় ‘পরিষ্কার ভারসাম্যহীনতা’ লক্ষ্য করা যাচ্ছে। বিশ্বের দুই-তৃতীয়াংশ অঞ্চলে হয় অতিরিক্ত পানি, নয়তো মারাত্মক পানির অভাব দেখা দিচ্ছে।
হিমবাহ গলন ও সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, পরপর তৃতীয় বছরের মতো বিশ্বের সব অঞ্চলে হিমবাহ গলে গেছে। এই গলিত বরফের পানি শুধু ২০২৪ সালেই বৈশ্বিক সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা প্রায় ১.২ মিলিমিটার বাড়িয়েছে। এতে উপকূলীয় অঞ্চলে বসবাসরত কয়েকশো কোটি মানুষ বন্যার ঝুঁকিতে পড়ছে।
বৈজ্ঞানিকদের উদ্বেগ
ডব্লিউএমও’র জলসম্পদ ও ক্রায়োস্ফিয়ার বিভাগের পরিচালক স্টেফান উলেনব্রুক বলেন,“জলচক্র এখন এতটাই অনিশ্চিত হয়ে উঠেছে যে এটি বিজ্ঞানীদের জন্যও ভবিষ্যদ্বাণী করা কঠিন হয়ে পড়েছে। কখনও অতিরিক্ত বৃষ্টিপাত, আবার কখনও দীর্ঘস্থায়ী খরা—এই চরম বৈপরীত্যই জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব।”
বৈজ্ঞানিক বিশ্লেষণে বলা হচ্ছে, বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধির ফলে বায়ুমণ্ডল আগের তুলনায় বেশি পানি ধারণ করছে। এর ফলে হয় দীর্ঘ খরা, নয়তো আকস্মিক প্রবল বর্ষণ দেখা দিচ্ছে।
জাতিসংঘ সতর্ক করেছে, জলসম্পদ ও জলবায়ুগত দুর্যোগ মোকাবিলায় তথ্য সংগ্রহ, পর্যবেক্ষণ এবং বৈশ্বিক তথ্য-আদানপ্রদান জরুরি।
“জলসম্পদ ও হাইড্রোলজিক্যাল চরম অবস্থাগুলো সঠিকভাবে বোঝা ও পরিমাপ করা এখন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। নইলে খরা, বন্যা ও হিমবাহ গলনের ঝুঁকি সামলানো কঠিন হয়ে পড়বে,” প্রতিবেদনে বলা হয়।