বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদন
তীব্র গরমে বছরে বাংলাদেশের ক্ষতি ১.৭৮ বিলিয়ন ডলার
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১৫:২৩, ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫ | আপডেট: ১৭:০৯, ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫

ক্রমবর্ধমান তাপমাত্রা বাংলাদেশের জন্য নতুন এক স্বাস্থ্য ও অর্থনৈতিক সংকট ডেকে আনছে। বিশ্বব্যাংকের সদ্য প্রকাশিত ‘অ্যান আনসাসটেইনেবল লাইফ: দ্য ইমপ্যাক্ট অব হিট অন হেলথ অ্যান্ড দ্য ইকোনমি অব বাংলাদেশ’ শীর্ষক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শুধু ২০২৪ সালেই তীব্র গরমের কারণে শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যঝুঁকির পাশাপাশি উৎপাদনশীলতা হ্রাস পেয়ে দেশের ক্ষতি দাঁড়িয়েছে প্রায় ১.৭৮ বিলিয়ন ডলার, যা মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রায় শূন্য দশমিক চার শতাংশ।
স্বাস্থ্যঝুঁকি ও সামাজিক প্রভাব
১৯৮০ সালের পর থেকে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা গড়ে ১.১ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেড়েছে। তবে ‘অনুভূত তাপমাত্রা’ বা হিট ইনডেক্স ৪.৫ ডিগ্রি পর্যন্ত বৃদ্ধি পেয়েছে। এর ফলে গ্রীষ্মকালে ডায়রিয়া ও কাশির হার হার দ্বিগুণ হচ্ছে, শ্বাসকষ্ট ও অবসাদ বেড়েছে, হতাশা ও উদ্বেগ বেড়েছে, যেখানে ৫০–৬৫ বছর বয়সীদের মধ্যে উদ্বেগের মাত্রা সর্বোচ্চ। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে হতাশার ঝুঁকিও দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে।
উৎপাদনশীলতার ক্ষতি
প্রতিবেদন অনুযায়ী, শুধু ২০২৪ সালেই অতিরিক্ত গরমের কারণে ২ কোটি ৫০ লাখ কর্মদিবস নষ্ট হয়েছে। উৎপাদনশীলতা কমে যাওয়ায় এই ধাক্কা অর্থনীতিকে স্থবির করে তুলছে। রাজধানী ঢাকায় হিট ইনডেক্স জাতীয় গড়ের তুলনায় ৬৫ শতাংশ বেশি, যা পরিস্থিতিকে আরও ভয়াবহ করে তুলেছে।
বিশ্বব্যাংকের সুপারিশ
বিশ্বব্যাংকের বাংলাদেশ ও ভুটানবিষয়ক বিভাগীয় পরিচালক জ্যাঁ পেসমে সতর্ক করে বলেছেন, ‘চরম গরম কেবল ঋতুভিত্তিক অসুবিধা নয়; এটি স্বাস্থ্য, উৎপাদনশীলতা ও সমৃদ্ধির জন্য বড় হুমকি।’
বিশ্বব্যাংকের সিনিয়র অপারেশনস অফিসার ইফফাত মাহমুদ বলেছেন, তাপমাত্রা বৃদ্ধির সঙ্গে স্বাস্থ্যঝুঁকি ও উৎপাদনশীলতা হ্রাসের সরাসরি সম্পর্ক রয়েছে।
প্রতিবেদনটি সংকট মোকাবিলায় সমন্বিত পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে। সুপারিশগুলোর মধ্যে রয়েছে—
জাতীয় পর্যায়ে তাপ-প্রস্তুতি পরিকল্পনা জোরদার
স্বাস্থ্যসেবায় তাপঘটিত রোগ মোকাবিলার সক্ষমতা বৃদ্ধি
নগরে সবুজায়ন ও ছায়াশীতল অবকাঠামো উন্নয়ন
আবহাওয়া ও স্বাস্থ্যসংক্রান্ত তথ্যের নির্ভুল সংগ্রহ ও ব্যবহার
আন্তর্জাতিক সহায়তা এবং সরকারি-বেসরকারি অর্থায়নের সমন্বয়
বিশ্ব র্যাংকিংয়ে বাংলাদেশ
উষ্ণ আবহাওয়ার ঝুঁকির দিক থেকে বাংলাদেশ বর্তমানে বিশ্বে দ্বিতীয় স্থানে। অর্থাৎ কার্যকর নীতি ও বিনিয়োগ ছাড়া ভবিষ্যতে এই সংকট আরও গভীর হতে পারে।