পশ্চিম তীরে ইসরায়েলি দখলদার বসতি স্থাপনকারীদের ব্যাপক হামলা
আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশ: ১৮:৩৭, ১২ নভেম্বর ২০২৫
ইসরায়েলি দখলদার বসতি স্থাপনকারীদের আগুনে অধিকৃত পশ্চিম তীরের উত্তর তূলকারেমের বিধ্বস্ত বেইত লিদ গ্রাম। ছবি: এএফপি
অধিকৃত পশ্চিম তীরে নতুন করে উগ্র ইসরায়েলি দখলদার বসতি স্থাপনকারীদের আগুন-সন্ত্রাসে জ্বলে পুড়ছে ফিলিস্তিনিদের ঘরবাড়ি ও জমি। মঙ্গলবার (১১ নভেম্বর ২০২৫) উত্তর তূলকারেমের কাছে বেইত লিদ এলাকায় ডজনখানেক মুখোশধারী ইসরায়েলি দখলদার বসতি স্থাপনকারীরা এক ফিলিস্তিনি গুদামে হামলা চালিয়ে কয়েকটি লরি ও গুদামঘর পুড়িয়ে দেয়। একই সঙ্গে পাশের বেদুইন গ্রাম দেইর শরাফ ও আশপাশের কৃষিজমিতেও আগুন লাগিয়ে দেয় তারা।
হামলায় বেশ কয়েকজন ফিলিস্তিনি আহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে স্থানীয় কর্মকর্তারা। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে দেখা যায়, পাহাড়ের ঢালে মুখোশধারী যুবকরা আগুন ধরিয়ে দিচ্ছে, অন্যদিকে নারী ও শিশুদের চিৎকারে বাতাস ভরে গেছে।
ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের দেয়াল ও বসতি প্রতিরোধ কমিশনের প্রধান মুয়াইয়াদ শাবান বলেন, ‘এটি ভয়-সন্ত্রাস ছড়িয়ে ফিলিস্তিনিদের জমি থেকে উৎখাত করার পরিকল্পিত অভিযানের অংশ।’
ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) জানায়, ঘটনাস্থলে গিয়ে তারা সংঘর্ষ নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করে এবং কয়েকজন ইসরায়েলি নাগরিককে আটক করে। পরে আরও কয়েকজন বসতি দখলকারী সেনাদের ওপর হামলা চালালে একটি সামরিক যান ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
ইসরায়েলি পুলিশ চার সন্দেহভাজনকে গ্রেপ্তারের কথা নিশ্চিত করেছে।
প্রেসিডেন্ট আইজাক হারজগ এই ঘটনাকে ‘ভয়াবহ ও লজ্জাজনক’ বলে আখ্যায়িত করে বলেন, ‘সাধারণ নাগরিক ও আইডিএফ সদস্যদের ওপর সহিংসতা কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না।’
আইডিএফ সেন্ট্রাল কমান্ডের প্রধান মেজর জেনারেল আভি ব্লুথ বলেন, ‘এই অরাজক যুবকদের সহিংসতা নিরাপত্তা স্থিতিশীলতাকে হুমকির মুখে ফেলছে—এদের কঠোরভাবে দমন করতে হবে।’
জাতিসংঘের মানবিক সহায়তা দপ্তর (OCHA) জানিয়েছে, অক্টোবর মাসে পশ্চিম তীরে ইসরায়েলি দখলদার বসতি স্থাপনকারীদের সহিংসতা গত ২০ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছেছে।
মাত্র এক মাসে ২৬০টিরও বেশি হামলার ঘটনা ঘটেছে—অর্থাৎ দৈনিক গড়ে আটটি করে হামলা। এই হামলাগুলোর ফলে ১৪০ জনের বেশি ফিলিস্তিনি আহত হয়েছেন এবং অন্তত ৪২০০ গাছপালা ও চারাসহ ৭৭টি গ্রামে কৃষি ক্ষতি হয়েছে।
২০২৫ সালের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত প্রায় ১,৫০০টি বসতি-সংক্রান্ত হামলার নথি পেয়েছে জাতিসংঘ।
জাতিসংঘের জরুরি ত্রাণ সমন্বয়কারী টম ফ্লেচার এক বিবৃতিতে বলেছেন, ‘এই সহিংসতা প্রতিরোধ ও শাস্তি না দেওয়া আন্তর্জাতিক আইনের পরিপন্থী। অপরাধীদের বিচারের মুখোমুখি করা আবশ্যক।’
অলিভ ফল তোলার মৌসুম ফিলিস্তিনিদের জন্য শুধু অর্থনৈতিক নয়, সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যেরও প্রতীক। কিন্তু প্রতিবছরই এই সময় ইসরায়েলি দখলদার বসতি স্থাপনকারীরা হামলা চালায়। সাম্প্রতিক সহিংসতায় কৃষক, স্বেচ্ছাসেবী এমনকি বিদেশি সহায়তাকারীরাও আক্রান্ত হয়েছেন।
নাবলুসের কাছে বেইতা এলাকায় গত সপ্তাহে হামলায় ১৩ বছর বয়সী আইসাম মুয়াল্লা নামের এক কিশোরের মৃত্যু হয়, যে আগের মাসে আইডিএফ ছোড়া টিয়ার গ্যাসে অচেতন হয়ে কোমায় ছিল।
ইসরায়েলি মানবাধিকার সংস্থা পিসনাউ জানিয়েছে, ২০২৫ সালে পশ্চিম তীরে বসতি সম্প্রসারণের জন্য প্রকাশিত নতুন নির্মাণ-টেন্ডারের সংখ্যা ৫,৬৬৭—যা ইতিহাসে সর্বাধিক। এতে প্রায় ২৫ হাজার নতুন বাসিন্দা যুক্ত হওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে।
অধিকাংশ পরিকল্পনা ত্বরান্বিত করছেন পশ্চিম তীরের বেসামরিক বিষয়ের দায়িত্বে থাকা ইসরায়েলের অর্থমন্ত্রী ও চরমপন্থী নেতা বেজালেল স্মোত্রিচ। তিনি প্রকাশ্যেই বলেছেন, তার লক্ষ্য ‘পশ্চিম তীরকে কার্যত সংযুক্ত করা এবং ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার সম্ভাবনা শেষ করা।’
