যুদ্ধবিরতির পরও গাজায় ধ্বংসযজ্ঞ
ইসরায়েলি বাহিনীর হাতে মাটির সঙ্গে মিশে গেছে ১,৫০০ ভবন
আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশ: ০৯:৪০, ১২ নভেম্বর ২০২৫
গাজায় যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার পরও ইসরায়েলি বাহিনীর নিয়ন্ত্রিত এলাকাগুলোতে ধ্বংসযজ্ঞ অব্যাহত রয়েছে। বিবিসি ভেরিফাইয়ের স্যাটেলাইট বিশ্লেষণে দেখা গেছে, গত এক মাসে সেখানে অন্তত ১,৫০০-র বেশি ভবন গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।
বিবিসির নতুন স্যাটেলাইট ছবিগুলো (সর্বশেষ ৮ নভেম্বরের) দেখায়, ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) নিয়ন্ত্রিত বহু এলাকায় পুরোপুরি গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে ঘরবাড়ি ও অবকাঠামো। অধিকাংশ ধ্বংসযজ্ঞ হয়েছে তথাকথিত ‘ইয়েলো লাইন’-এর ভেতরে, যা যুদ্ধবিরতির সময় ইসরায়েলি বাহিনীর প্রত্যাহার সীমা হিসেবে নির্ধারিত ছিল।
যুদ্ধবিরতির শর্ত অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্র, মিশর, কাতার ও তুরস্কের মধ্যস্থতায় ইসরায়েল সব ধরনের আকাশ ও স্থল অভিযান স্থগিত করতে সম্মত হয়েছিল। কিন্তু স্যাটেলাইট চিত্রে দেখা যাচ্ছে, গাজার দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের খান ইউনুস, আবাসান আল-কাবিরা এবং রাফাহর আল-বায়ুক এলাকায় একের পর এক বাড়িঘর, বাগান ও খামারবাড়ি মাটির সঙ্গে মিশিয়ে দেওয়া হয়েছে।
বাসিন্দা লানা খালিল বলেন, “আমাদের বাড়িটা ছিল এক স্বর্গ। এখন সব ধ্বংস। আমরা আল-মাওয়াসির তাঁবু থেকে ধ্বংসের শব্দ শুনতে পাই।”
বিবিসি ভেরিফাই জানায়, এসব ভবনের বেশিরভাগই যুদ্ধবিরতির আগ পর্যন্ত অক্ষত ছিল। পরে পরিকল্পিতভাবে বুলডোজার ও বিস্ফোরণে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়।
ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের সাবেক কর্মকর্তা ইটান শামির বলেন, “ইয়েলো লাইনের ভেতরের এলাকায় যুদ্ধবিরতির শর্ত প্রযোজ্য নয়। সেখানে হামাসের অবকাঠামো ধ্বংস করা হচ্ছে।”
অন্যদিকে সামরিক আইন বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক আদিল হক ও গবেষক এইচ.এ. হেলিয়ার বলেন, যুদ্ধবিরতির সময়ে এই ধ্বংস আন্তর্জাতিক মানবিক আইন লঙ্ঘন করে। কারণ যুদ্ধবিরতির সময় নাগরিক স্থাপনা ধ্বংসের কোনো বৈধতা নেই।
ইউরোপীয় কাউন্সিল অন ফরেন রিলেশনসের বিশ্লেষক হিউ লোভাট সতর্ক করেছেন, “এই ধ্বংসযজ্ঞ যদি চলতে থাকে, তবে যুদ্ধবিরতির ভবিষ্যৎ এবং ট্রাম্পের ২০ দফা গাজা শান্তি পরিকল্পনাই ঝুঁকিতে পড়বে।”
বর্তমানে গাজার ভেতর ও আশপাশে ইসরায়েলি সেনাদের উপস্থিতি এবং ভবন ধ্বংসের কার্যক্রমকে অনেক বিশেষজ্ঞ “নতুন বাস্তবতা তৈরির প্রচেষ্টা” হিসেবে দেখছেন।
