বিরল খনিজের সরবরাহে চীনা দাপট ঠেকাতে যুক্তরাষ্ট্র–অস্ট্রেলিয়া জোট
আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশ: ১৯:১৫, ২১ অক্টোবর ২০২৫

বিরল ও গুরুত্বপূর্ণ খনিজের বৈশ্বিক সরবরাহ শৃঙ্খলে চীনের প্রভাব কমাতে অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে ঐতিহাসিক চুক্তিতে পৌঁছেছে যুক্তরাষ্ট্র। সোমবার (২০ অক্টোবর) হোয়াইট হাউসে আয়োজিত এক বৈঠকে এই চুক্তি স্বাক্ষর করেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও অস্ট্রেলীয় প্রধানমন্ত্রী অ্যান্থনি আলবানিজ।
দুই দেশের যৌথ বিবৃতিতে জানানো হয়, পরবর্তী ছয় মাসের মধ্যে উভয় দেশই একশ কোটি ডলার করে মোট ২০০ কোটি ডলার বিনিয়োগ করবে খনিজ উত্তোলন ও প্রক্রিয়াজাত প্রকল্পে। পাশাপাশি ‘গুরুত্বপূর্ণ খনিজের ন্যূনতম মূল্য’ নির্ধারণে পশ্চিমা ব্যবসায়ীদের দাবিও চুক্তিতে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে।
লিথিয়াম, নিকেল, কোবাল্টসহ বিরল উপাদান বৈদ্যুতিক গাড়ি, উড়োজাহাজের ইঞ্জিন ও সামরিক সরঞ্জামে অপরিহার্য। যুক্তরাষ্ট্রের ভূতাত্ত্বিক জরিপ অনুযায়ী, বিশ্বের সবচেয়ে বড় খনিজ মজুত রয়েছে চীনের হাতে। তবে অস্ট্রেলিয়াও উল্লেখযোগ্য মজুত নিয়ে পশ্চিমা বিকল্প সরবরাহ শৃঙ্খল তৈরির প্রধান অংশীদার হতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।
হোয়াইট হাউজ জানায়, ৫৩০০ কোটি ডলার মূল্যের খনিজ সম্পদসমৃদ্ধ অঞ্চলে প্রথম ধাপের প্রকল্প শুরু হবে। যদিও নির্দিষ্ট খনিজ বা স্থানগুলোর নাম প্রকাশ করা হয়নি।
নতুন চুক্তিতে কী থাকছে
চুক্তির অধীনে দুই দেশ—খনি অনুমোদন প্রক্রিয়া দ্রুত করবে, খনিজ পুনঃব্যবহার (রিসাইক্লিং) জোরদার করবে, ভূতাত্ত্বিক সম্পদ মানচিত্রায়ন বাড়াবে, জাতীয় নিরাপত্তার কারণে গুরুত্বপূর্ণ সম্পদ বিক্রি নিয়ন্ত্রণ করবে।
চুক্তির এসব ধারা চীনের বিপুল বিনিয়োগ কৌশলকেই লক্ষ্য করছে। গত এক দশকে চীন কঙ্গো, আফ্রিকা ও দক্ষিণ আমেরিকায় একাধিক বৃহৎ খনি প্রকল্প কিনে নিয়েছে, যার মধ্যে বিশ্বের বৃহত্তম কোবাল্ট খনি ক্রয় (২০১৬) বিশেষভাবে আলোচিত।
বৈঠকের রাজনীতি ও কূটনৈতিক প্রেক্ষাপট
বৈঠকের শুরুতে কিছুটা তিক্ততা দেখা দেয়, যখন ট্রাম্প অস্ট্রেলীয় প্রতিনিধি কেভিন রাডকে উদ্দেশ করে বলেন,‘আপনাকে আমি পছন্দ করি না, সম্ভবত কোনো দিনও করব না।’ তবে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ট্রাম্পের কথোপকথন ছিল উষ্ণ ও সহযোগিতাপূর্ণ।
ট্রাম্প পরে সাংবাদিকদের বলেন, ‘আর এক বছরের মধ্যেই আমাদের হাতে এত বিরল খনিজ থাকবে যে, মানুষ জানবেই না এগুলো নিয়ে করবে কী।’
এই চুক্তি এসেছে চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সঙ্গে ট্রাম্পের বৈঠকের এক সপ্তাহ আগে, যখন দুই পরাশক্তির মধ্যে বাণিজ্য উত্তেজনা চরমে। বিশ্লেষকদের মতে, এই চুক্তি শুধু অর্থনৈতিক নয়, বরং একে ‘স্ট্র্যাটেজিক মিনারেল জোট’ হিসেবেও দেখা হচ্ছে।