ইউরোপের সেনারা প্রস্তুত: যুদ্ধবিরতি হলে ইউক্রেনে শান্তিরক্ষায় যাবে ন্যাটো মিত্ররা
আন্তজাতিক ডেস্ক
প্রকাশ: ১২:০৬, ২১ অক্টোবর ২০২৫ | আপডেট: ১২:১২, ২১ অক্টোবর ২০২৫

যুক্তরাজ্যের প্রতিরক্ষামন্ত্রী জন হিলি। ছবি : ওজটেক রাদওয়ানস্কি
রাশিয়া–ইউক্রেন যুদ্ধ নতুন এক সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে। যুক্তরাজ্যের প্রতিরক্ষামন্ত্রী জন হিলি ঘোষণা দিয়েছেন—ডোনাল্ড ট্রাম্প ও ভ্লাদিমির পুতিনের আলোচনায় যদি যুদ্ধবিরতি চুক্তি হয়, তবে ইউরোপীয় সেনারা “প্রস্তুত ইউক্রেনে মোতায়েন হতে”।
হিলি সোমবার লন্ডনে লর্ড মেয়রের বার্ষিক প্রতিরক্ষা বক্তৃতায় বলেন, “যদি প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প শান্তিচুক্তি আনতে পারেন, আমরা সেই শান্তি সুরক্ষায় সাহায্য করতে প্রস্তুত।”
তবে তিনি জোর দিয়ে বলেন, “ইউক্রেনীয়রাই ঠিক করবে, তাদের হয়ে কী এবং কীভাবে আলোচনায় সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।”
যুদ্ধবিরতির পর শান্তিরক্ষী বাহিনী
যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার নেতৃত্বে গত মার্চে গঠিত “কোলিশন অব দ্য উইলিং” নামের জোটে ইউরোপের ২৬টি দেশ যুক্ত রয়েছে। এই জোট ইতিমধ্যেই ইউক্রেনে যুদ্ধবিরতির পর শান্তি নিশ্চিত করতে যৌথ সেনা মোতায়েনের বিস্তারিত পরিকল্পনা তৈরি করেছে।
প্রতিরক্ষামন্ত্রী জানান, ৩৮টি দেশের ২০০-রও বেশি সামরিক পরিকল্পনাবিদ ছয় মাস ধরে কাজ করছেন, যাতে যুদ্ধবিরতি কার্যকর হলে দ্রুত সেনা পাঠানো যায়।
এর অংশ হিসেবে যুক্তরাজ্য ১০০ মিলিয়ন পাউন্ডেরও বেশি ব্যয়ে প্রস্তুতিমূলক কাজ শুরু করেছে।
পরিকল্পনা অনুযায়ী, ব্রিটিশ সেনারা এক বহুজাতিক শান্তিরক্ষী বাহিনীর অংশ হয়ে ইউক্রেনের সীমান্ত নিরাপত্তা ও যুদ্ধবিরতি তদারকি করবে।
“দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ সময়”
হিলি সতর্ক করে বলেন, “আমরা এমন এক নতুন হুমকির যুগে প্রবেশ করছি, যা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ইউরোপে আর দেখা যায়নি।”
তার দাবি, রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এখন ব্রিটেনকে নিজের ‘নম্বর ওয়ান শত্রু’ হিসেবে দেখছেন, কারণ যুক্তরাজ্য ইউক্রেনকে সবচেয়ে জোরালোভাবে সহায়তা দিচ্ছে।
এদিকে ব্রিটিশ সেনাদের জন্য নতুন আইন চালু করা হচ্ছে, যাতে দেশের সামরিক ঘাঁটির আকাশে সন্দেহভাজন ড্রোন নামানোর অনুমতি দেওয়া হবে। সাম্প্রতিক মাসগুলোতে ইউরোপজুড়ে কয়েকবার রহস্যজনক ড্রোন উড়তে দেখা গেছে।
ট্রাম্প–পুতিন বৈঠক ও জেলেনস্কির অবস্থান
গত বৃহস্পতিবার এক আকস্মিক ফোনালাপের পর ডোনাল্ড ট্রাম্প ও ভ্লাদিমির পুতিন হাঙ্গেরির রাজধানী বুদাপেস্টে সাক্ষাতের পরিকল্পনা করছেন। তবে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কিকে বৈঠকে আমন্ত্রণ জানানো হয়নি।
জেলেনস্কি জানিয়েছেন, তিনি আলোচনায় যোগ দিতে প্রস্তুত—কিন্তু “ভূখণ্ডের প্রশ্নে কোনো ছাড় দেওয়া হবে না”।
মার্কিন গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়, সাম্প্রতিক ওয়াশিংটন বৈঠকে ট্রাম্প জেলেনস্কিকে ডনবাস অঞ্চল রাশিয়াকে ছেড়ে দিতে চাপ দেন, যা নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে উত্তপ্ত বিতর্ক হয়।
বর্তমানে রাশিয়া ডোনেৎস্কের ৭০ শতাংশ এবং লুহানস্ক প্রদেশের প্রায় পুরো অংশ দখলে রেখেছে।
রাশিয়ার ক্ষয়ক্ষতি ও নতুন বাস্তবতা
হিলি জানান, ইউক্রেনে রুশ সেনাদের মোট হতাহতের সংখ্যা এক মিলিয়নের বেশি, এবং রুশ সরকার তাদের ৪০ শতাংশ বাজেট সামরিক খাতে ব্যয় করছে।
তবুও, সাম্প্রতিক মাসগুলোতে মস্কো বিদ্যুৎকেন্দ্রসহ ইউক্রেনের অবকাঠামোয় ব্যাপক হামলা চালিয়ে জরুরি বিদ্যুৎঘাটতি তৈরি করেছে।
এ অবস্থায় ইউরোপের নেতারা ট্রাম্পের অবস্থান নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। পোল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী ডোনাল্ড টাস্ক সতর্ক করে বলেছেন—“অবনতির পথ কখনও স্থায়ী শান্তি বয়ে আনে না।”
ফিনল্যান্ডের প্রেসিডেন্ট আলেকজান্ডার স্টাব যোগ করেন,“ভূখণ্ড সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত কেবল ইউক্রেনের জনগণই নিতে পারে। আমরা কখনও ক্রিমিয়া, ডোনেৎস্ক বা লুহানস্ককে রাশিয়ার অংশ হিসেবে স্বীকৃতি দেব না।”
সূত্র: বিবিসি, দ্য গার্ডিয়ান, এপি, স্কাই নিউজ