আতশবাজির উল্লাসের পর বায়ুদূষণে বিপর্যস্ত দিল্লি
আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশ: ১৭:৩৫, ২১ অক্টোবর ২০২৫

ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লি আবারও দমবন্ধ করে তুলেছে দীপাবলির আতশবাজি। উৎসবের পরদিনই শহরজুড়ে নেমে এসেছে ঘন বিষাক্ত ধোঁয়া। মঙ্গলবার সকালে দিল্লির বাতাসে দূষণের মাত্রা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (WHO) নিরাপদ সীমার কয়েকগুণ ছাড়িয়ে যায়—এক পর্যায়ে এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্স (AQI) ৩৫০-এর ওপরে উঠে `অত্যন্ত গুরুতর’ বা তীব্র পর্যায়ে পৌঁছায়।
দীপাবলির রাতে লাখো মানুষ আতশবাজি ফুটিয়ে উৎসবের আনন্দে মেতে উঠেছিল। কিন্তু সেই উচ্ছ্বাসের ধোঁয়ায় মঙ্গলবার সকালেই শহর যেন শ্বাস নিতে ভুলে গেছে। দিল্লির বিভিন্ন এলাকায় রাস্তা, ভবন, এমনকি ঐতিহাসিক লালকেল্লাও ঘন ধোঁয়াশায় ঢেকে যায়। পর্যটক বেদান্ত পাচকান্দে বলেন, `এমন দূষণ আমি আগে কখনও দেখিনি, সামনের মানুষকেও দেখা যাচ্ছে না।‘
দিল্লির এই অবস্থাকে অনেকেই তুলনা করছেন `গ্যাস চেম্বার’-এর সঙ্গে। শহরের হাসপাতালগুলোতেও বেড়েছে শ্বাসকষ্ট ও অ্যালার্জি রোগীর সংখ্যা। শিশুরা ও প্রবীণ নাগরিকেরা সবচেয়ে বেশি বিপর্যস্ত।
ভারতের সুপ্রিম কোর্ট গত সপ্তাহে সীমিত পরিসরে ‘সবুজ আতশবাজি’ ব্যবহারের অনুমতি দিয়েছিল—যা সাধারণ আতশবাজির তুলনায় প্রায় ৩০ শতাংশ কম দূষণ ছড়ায়। আদালত নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে ব্যবহারের নির্দেশ দিলেও বাস্তবে সেই নির্দেশনা মানেননি অধিকাংশ নাগরিক। ফলে গত বছরের পুনরাবৃত্তি ঘটেছে এবারও।
প্রতি বছর শীত আসার সঙ্গে সঙ্গে দিল্লির বাতাস ভারী হয়ে ওঠে। আতশবাজির ধোঁয়া, ঠান্ডা আবহাওয়া এবং পার্শ্ববর্তী রাজ্যগুলোর কৃষিজ খড় পোড়ানোর ধোঁয়া মিলেই রাজধানীকে ঢেকে ফেলে। প্রায় ৩ কোটি মানুষের শহরটি বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত নগরগুলোর তালিকায় প্রায় প্রতি বছরই শীর্ষে উঠে আসে।
দূষণ কমাতে দিল্লি প্রশাসন নির্মাণকাজে বিধিনিষেধ আরোপ করেছে, ডিজেলচালিত জেনারেটর ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। কিন্তু পরিবেশবিদরা বলছেন, এটি `ক্ষতচাপার ওপর ওষুধ লাগানোর মতো।‘ দীর্ঘমেয়াদি সমাধান ছাড়া এমন সংকট থেকে মুক্তি সম্ভব নয়।
বানারস হিন্দু বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানী ড. মনোজ কে. শ্রীবাস্তবের মতে, বায়ুদূষণের কারণে ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলে সূর্যালোকের পরিমাণও কমে যাচ্ছে। এতে সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদন, কৃষি এবং মানুষের স্বাস্থ্য—সবই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। তার ভাষায়, `বায়ুদূষণ এখন শুধু পরিবেশের নয়, আমাদের ভবিষ্যতেরও শত্রু।‘