ফেরত পাঠানো ১৩৫ ফিলিস্তিনির মৃতদেহে অমানবিক নির্যাতনের চিহ্ন
আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশ: ১৪:৫১, ২১ অক্টোবর ২০২৫

গাজায় ফেরত পাঠানো হলো ১৩৫ জন ফিলিস্তিনির মৃতদেহ। ছবি: গেটি ইমেজেস
গাজায় ফেরত পাঠানো অন্তত ১৩৫ জন ফিলিস্তিনির মৃতদেহে ভয়াবহ নির্যাতনের চিহ্ন পাওয়া গেছে। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, মৃতদের অধিকাংশকেই ইসরায়েলের দক্ষিণাঞ্চলীয় নেগেভ মরুভূমির কুখ্যাত সডে টাইমান কারাগারে আটক রাখা হয়েছিল, যেখানে তাদের ওপর চালানো হয় নৃশংস নির্যাতন।
প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাতে বলা হয়েছে— কারও গলায় ফাঁসির দড়ির দাগ, কারও শরীর ট্যাঙ্কের চাকার নিচে থেঁতলে যাওয়া, আবার কারও হাত-পা প্লাস্টিকের রিস্ট্রেইন দিয়ে এমনভাবে বাঁধা যে রক্ত চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মহাপরিচালক ড. মুনির আল-বুরশ এবং খান ইউনিসের নাসের হাসপাতালের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, প্রত্যেক মৃতদেহের ব্যাগে হিব্রু ভাষায় লেখা ডকুমেন্ট পাওয়া গেছে, যাতে উল্লেখ ছিল— মৃতদেহগুলো সডে টাইমান কারাগার থেকে এসেছে।
নাসের হাসপাতালের প্রশাসনিক পরিচালক ইয়াদ বারহুম বলেন, “আমরা ১৩৫টি মৃতদেহ পেয়েছি, যার অধিকাংশের চোখ বাঁধা, হাত পেছনে বাঁধা ছিল এবং অনেকের শরীরে গুলির চিহ্ন ও ট্যাঙ্কচাপা পড়ার দাগ স্পষ্ট।”
একজন নিহত বন্দীর ভাই রামি জানান, “আমার ভাই মাহমুদ ইসমাইল শাবাতের দেহে ফাঁসির দড়ির দাগ ছিল, পা দুটি ছিল থেঁতলে যাওয়া। তার মৃতদেহ হাত বাঁধা অবস্থায় পাওয়া গেছে।”
একজন ইসরাইলি চিকিৎসক, যিনি নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক, মৃতদেহের ছবি দেখে বলেন, “হাত বাঁধার জন্য ব্যবহৃত প্লাস্টিক রিস্ট্রেইন রক্ত চলাচল বন্ধ করে দেয়। এতে মৃত্যুর সম্ভাবনা স্বাভাবিক।”
গাজার সাংবাদিক শাদি আবু সাইদো, যিনি ওই কারাগারে ১০০ দিন বন্দী ছিলেন, ভয়াবহ অভিজ্ঞতার কথা জানান। তিনি বলেন, “আমাকে আল-শিফা হাসপাতাল থেকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে ১০ ঘণ্টা সম্পূর্ণ নগ্ন অবস্থায় ঠাণ্ডায় রাখা হয়েছিল। প্রতিদিনই শারীরিক ও যৌন নির্যাতন চলত, কুকুর লেলিয়ে দিত কারারক্ষীরা। চিকিৎসা সেবা ছিল অপ্রতুল।”
ইসরাইলি মানবাধিকার সংস্থা ফিজিশিয়ানস ফর হিউম্যান রাইটস ইসরাইল (পিএইচআর) জানিয়েছে, “মৃতদেহগুলোর অবস্থা প্রমাণ করে এগুলো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়, বরং প্রাতিষ্ঠানিক নির্যাতনেরই নিদর্শন।” সংস্থাটির পরিচালক নাজি আব্বাস বলেন, “নিরপেক্ষ ও আন্তর্জাতিক তদন্ত ছাড়া এই হত্যাকাণ্ডের বিচার সম্ভব নয়।”
জাতিসংঘের তথ্যমতে, ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবরের পর থেকে ইসরাইলি কারাগারে অন্তত ৭৫ জন ফিলিস্তিনি বন্দীর মৃত্যু ঘটেছে। যদিও ইসরাইলি সেনাবাহিনী দাবি করেছে, বন্দীদের ‘যথাযথভাবে ও সতর্কতার সঙ্গে’ রাখা হচ্ছে, তবু মানবাধিকার সংস্থা ও জাতিসংঘের পক্ষ থেকে নিরপেক্ষ আন্তর্জাতিক তদন্তের দাবি জোরালোভাবে উঠেছে।