শেখ হাসিনার মৃত্যুদণ্ডে ‘স্বৈরশাসনের কবর’ রচনা হয়েছে: মির্জা ফখরুল
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১৮:৫৭, ১৭ নভেম্বর ২০২৫ | আপডেট: ১৯:১১, ১৭ নভেম্বর ২০২৫
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। ছবি: সংগৃহিত
জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে শেখ হাসিনার মৃত্যুদণ্ড ঘোষণার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে এক ঐতিহাসিক বাঁকবদল ঘটেছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি নেতারা। রায় ঘোষণার পরপরই দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদের প্রতিক্রিয়ায় ফুটে ওঠে দীর্ঘদিনের স্বৈরশাসনবিরোধী আন্দোলনের আবেগ, ক্ষোভ এবং ন্যায়বিচারের প্রত্যাশা।
সোমবার (১৭ নভেম্বর) আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বে শেখ হাসিনাকে তিনটি পৃথক অভিযোগে মৃত্যুদণ্ড এবং আরও দুটি অভিযোগে আমৃত্যু কারাদণ্ড দেন। একই রায়ে সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল মৃত্যুদণ্ড এবং রাজসাক্ষী হিসেবে থাকা সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন পাঁচ বছরের কারাদণ্ডে দণ্ডিত হন।
রায় ঘোষণার পরপরই নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে মির্জা ফখরুল লিখেন— ‘আমরা বিশ্বাস করি, আজকের রায় শুধু শেখ হাসিনার অপরাধের বিচার নয়; বরং এই দেশের মাটিতে সবধরনের স্বৈরশাসনের কবর রচনা।’
তার ভাষায়, এ রায় শুধু একটি মামলার নিষ্পত্তি নয়, বরং চার দশকের বেশি সময় ধরে জমে থাকা স্বৈরতন্ত্রবিরোধী প্রতিরোধের প্রতীকী বিজয়।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ রায়ের প্রতিক্রিয়ায় বলেন, বাংলাদেশের ইতিহাসে এ রায় একটি মাইলফলক, কারণ এটি প্রমাণ করেছে— ‘ফ্যাসিস্ট স্বৈরাচার যত শক্তিশালী হোক না কেন, একদিন আদালতের কাঠগড়ায় দাঁড়াতেই হয়।’
তার মতে, দীর্ঘদিন ধরে রাষ্ট্রক্ষমতার অপব্যবহার, মানবাধিকার লঙ্ঘন ও হত্যার রাজনীতির যে সংস্কৃতি প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল, আজকের রায় সেই অন্ধকার অধ্যায়ের বিরুদ্ধে এক ঐতিহাসিক প্রতিরোধ।
তিনি আরও যোগ করেন, ‘ন্যায়বিচারের পথ এখন খুলে গেল। আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে একটি শক্তিশালী গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র নির্মাণের ভিত্তি তৈরি হলো। আমরা সেই রাষ্ট্র গড়ার প্রতিশ্রুতিতে অটল।’
যদিও তিনি মনে করেন, অপরাধের তুলনায় এ শাস্তি যথেষ্ট নয়; তবু এটিকে তিনি ভবিষ্যতের জন্য এক সতর্কবার্তা, এক শিক্ষা হিসেবে দেখছেন। তার ভাষায়—‘এ রায় শুধু অতীতের বিচার নয়; ভবিষ্যতের জন্যও বার্তা—এই দেশে আর কোনো একনায়কতন্ত্র বা ফ্যাসিবাদী শাসন ব্যবস্থা ফিরে আসবে না।’
তিনি প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন, গণঅভ্যুত্থানের সময় সংঘটিত অন্যান্য সব মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলাতেও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠিত হবে, এবং প্রতিটি নাগরিক তার প্রাপ্য সুবিচার পাবে।
রায় ঘোষণার পর রাজনৈতিক অঙ্গন উত্তপ্ত, তবে বিএনপির প্রতিক্রিয়া স্পষ্ট—তাদের কাছে এটি শুধু একটি বিচারের রায় নয়, বরং বাংলাদেশের গণতন্ত্র পুনর্গঠনের সম্ভাব্য নতুন সূচনা।
