জুলাই সনদের অঙ্গীকারে সাত প্রতিশ্রুতি
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ২১:১২, ১৭ অক্টোবর ২০২৫ | আপডেট: ০১:১৭, ১৮ অক্টোবর ২০২৫

অবশেষে বহুল আলোচিত ‘জুলাই জাতীয় সনদ–২০২৫’ সই হলো। অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস এবং ঐকমত্য কমিশনের সদস্যরা এবং বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা শুক্রবার বিকেলে জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় এ সনদে সই করেন।
এই সনদকে বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ গণতান্ত্রিক রূপান্তরের ‘নতুন সামাজিক চুক্তি’ বলা হচ্ছে।
সমাজকালের পাঠকদের জন্য নিচে তুলে ধরা হলো জুলাই সনদের অঙ্গীকারনামার বিষয়গুলো ও তার তাৎপর্য—
১. গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার শপথ
২০২৪ সালের জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের রক্ত, ত্যাগ ও আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় অর্জিত এই নতুন সুযোগকে গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার ভিত্তি হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে।
অঙ্গীকার করা হয়েছে— “জুলাই জাতীয় সনদ–২০২৫”-এর পূর্ণ বাস্তবায়ন নিশ্চিত করা হবে; যাতে জনগণের অধিকার ফিরে পাওয়ার সংগ্রাম বাস্তবে পরিণত হয়।
২. জনগণই রাষ্ট্রের মালিক
সনদে বলা হয়েছে— “জনগণের অভিপ্রায়ই সর্বোচ্চ আইন।”
রাজনৈতিক দল ও জোটসমূহ ঐকমত্যের ভিত্তিতে এই সনদ গ্রহণ করেছে। এজন্য এটি সংবিধানে তফসিল বা সংযোজন হিসেবে যুক্ত করা হবে, যাতে এর আইনগত স্থায়িত্ব থাকে।
৩. আইনি সুরক্ষা ও আদালতনিরপেক্ষতা
সনদের বৈধতা বা প্রয়োজনীয়তা নিয়ে কোনো আদালতে প্রশ্ন তোলা হবে না। বরং সনদের প্রতিটি ধাপে আইনি ও সাংবিধানিক সুরক্ষা নিশ্চিত করা হবে, যাতে এটি বাস্তবায়নে কোনো জটিলতা না থাকে।
৪. গণঅভ্যুত্থানের ঐতিহাসিক স্বীকৃতি
১৬ বছরের গণতান্ত্রিক আন্দোলন এবং বিশেষত ২০২৪ সালের গণঅভ্যুত্থানকে বাংলাদেশের ইতিহাসে একটি রাষ্ট্রীয় ও সাংবিধানিক ঘটনা হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার ঘোষণা দেওয়া হয়েছে।
এই স্বীকৃতির মধ্য দিয়ে “জনগণের জাগরণ” ও “আওয়ামী ফ্যাসিবাদের অবসান”— দুই ঐতিহাসিক ঘটনাই নতুন রাজনৈতিক ভাষায় নথিভুক্ত হবে।
৫. শহীদ ও আহত জুলাই বীরদের মর্যাদা
সনদে প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে—
গুম, খুন ও নির্যাতনের শিকার ব্যক্তিদের বিচার নিশ্চিত করা হবে।
২০২৪ সালের অভ্যুত্থানে নিহতদের রাষ্ট্রীয় শহীদ মর্যাদা দেওয়া হবে।
আহতদের “জুলাই বীর যোদ্ধা” হিসেবে স্বীকৃতি, মাসিক ভাতা, চিকিৎসা, পুনর্বাসন ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হবে।
শহীদ পরিবার ও আহতদের আইনি দায়মুক্তি ও মৌলিক অধিকার সুরক্ষা থাকবে।
৬. রাষ্ট্রীয় সংস্কারের রূপরেখা
সনদে সংবিধান ও রাষ্ট্রব্যবস্থার গভীর সংস্কারের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে—
নির্বাচন ব্যবস্থা, বিচারব্যবস্থা, জনপ্রশাসন, পুলিশ, দুর্নীতি দমন কমিশনসহ রাষ্ট্রের প্রধান অঙ্গসমূহে কাঠামোগত পরিবর্তন আনতে প্রয়োজনীয় আইন, বিধি, প্রবিধান ও নতুন সংযোজন করা হবে।
৭. দ্রুত বাস্তবায়নের অঙ্গীকার
অন্তর্বর্তী সরকার ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে—
সনদের অবিলম্বে বাস্তবায়নযোগ্য সিদ্ধান্তসমূহ দ্রুততম সময়ে কার্যকর করতে হবে, কোনো প্রকার কালক্ষেপণ ছাড়াই।