‘জাপানি হাঁটা’—মাত্র ৩০ মিনিটে ফিটনেস বাড়ানোর সহজ উপায়! জানুন
স্বাস্থ্য ডেস্ক
প্রকাশ: ১৯:১১, ২১ অক্টোবর ২০২৫

জাপানি ইন্টারভাল ওয়াকিং। ছবি: সংগৃহীত
জাপানের বিজ্ঞানীরা দুই দশক আগে তৈরি করেছিলেন এক অভিনব হাঁটার পদ্ধতি, যার নাম ‘জাপানি ইন্টারভ্যাল ওয়াকিং’। সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখা গেছে—মাত্র পাঁচ মাস এই নিয়মে হাঁটলে রক্তচাপ, পায়ের পেশির শক্তি ও হৃদ্যন্ত্রের কর্মক্ষমতা উল্লেখযোগ্যভাবে উন্নত হয়। আর এই সহজ ব্যায়ামেই এখন মুগ্ধ বিশ্বজুড়ে ফিটনেসপ্রেমীরা।
কী এই জাপানি হাঁটা?
এটি মূলত একটি ইন্টারভ্যাল ট্রেনিং, যেখানে আপনি হাঁটার সময় গতি পরিবর্তন করেন। তিন মিনিট দ্রুত হাঁটা (৭০% সামর্থ্যে) এবং পরের তিন মিনিট ধীরে হাঁটা (৪০% সামর্থ্যে)—এভাবে ৩০ মিনিট ধরে হাঁটলেই সম্পূর্ণ হয় এক সেশন।
এই কৌশলটি ২০০৭ সালে জাপানি গবেষকেরা উদ্ভাবন করেন, মূলত মধ্যবয়সী ও প্রবীণদের ফিটনেস বাড়াতে এবং ডায়াবেটিস বা স্থূলতার মতো জীবনধারাজনিত রোগ প্রতিরোধে সহায়তা করতে।
২০০৯ সালের এক রিভিউ স্টাডিতে দেখা যায়, টানা পাঁচ মাসের অনুশীলনে অংশগ্রহণকারীদের শারীরিক সক্ষমতা ও স্বাস্থ্য সূচক গড়ে ১০% থেকে ২০% পর্যন্ত উন্নত হয়।
কেন এটি কার্যকর
মার্কিন চিকিৎসক ড. সেরগিউ দারাবান্ট বলেন, “জাপানি হাঁটা নতুনদের জন্য সবচেয়ে সহজ ও কম ভীতিকর ব্যায়াম। এতে উচ্চমাত্রার ফিটনেস না থাকলেও শুরু করা যায়।”
এই হাঁটার ফলে—
- রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে থাকে
- রক্তসঞ্চালন ও হৃদ্যন্ত্রের কার্যক্ষমতা বাড়ে
- পায়ের পেশি মজবুত হয়
- উদ্বেগ ও মানসিক চাপ কমে
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সপ্তাহে চার থেকে পাঁচ দিন এই ব্যায়াম করলে আমেরিকান হার্ট অ্যাসোসিয়েশনের প্রস্তাবিত ১৫০ মিনিটের মাঝারি মাত্রার অ্যারোবিক ব্যায়ামের চাহিদা পূর্ণ হয়।
কোথায় ও কীভাবে করবেন
বাইরে খোলা জায়গায় হাঁটা সবচেয়ে উপকারী, কারণ প্রকৃতির সংস্পর্শে মানসিক প্রশান্তি মেলে।
যদি রাস্তাঘাট নিরাপদ না হয়, তাহলে ট্রেডমিল ব্যবহার করুন।
ট্রেডমিলের ইনক্লাইন ১–২% রাখলে বাইরের হাঁটার মতো প্রতিরোধ পাওয়া যায়।
দ্রুত হাঁটার সময় এমন গতিতে চলুন, যাতে আপনি প্রায় দৌড়ানোর কাছাকাছি কিন্তু দৌড়াতে না হয় (প্রায় ৪ মাইল প্রতি ঘণ্টা বা প্রতি মাইল ১৫ মিনিট)।
ড. ইরভিন সুলাপাস বলেন, “আপনাকে কষ্টে ক্লান্ত হতে হবে না, কিন্তু নিয়মিত থাকতে হবে।”
এরপর কীভাবে অগ্রগতি করবেন
যখন এই হাঁটায় অভ্যস্ত হয়ে যাবেন, তখন চাইলে জগিং বা ওজনযুক্ত ভেস্ট পরে হাঁটা শুরু করতে পারেন। এতে ক্যালোরি খরচ ও পেশি-শক্তি আরও বাড়বে।
তবে চিকিৎসকদের পরামর্শ, শুরুতেই উচ্চ মাত্রার ব্যায়াম নয়—ধীরে ধীরে অগ্রসর হওয়াই বুদ্ধিমানের কাজ।
ড. দারাবান্ট বলেন, “ব্যায়াম একটি ম্যারাথন, স্প্রিন্ট নয়। ধারাবাহিকতাই আসল।”
জাপানি হাঁটা শুধু শরীর নয়, মনকেও প্রশান্ত করে। প্রাকৃতিক পরিবেশে নিয়মিত এই হাঁটা মানসিক চাপ কমায়, ঘুম ভালো করে এবং দিনভর কর্মশক্তি জোগায়।
তাই জিমে না গিয়েও, জুতার ফিতে বেঁধে প্রতিদিন আধা ঘণ্টা ‘জাপানি হাঁটা’-তে বেরিয়ে পড়ুন—এটি হতে পারে আপনার জীবনের সবচেয়ে সহজ কিন্তু সবচেয়ে কার্যকর স্বাস্থ্য বিনিয়োগ।
সূত্র: সিএনএন