বৃহস্পতিবার, ১৬ অক্টোবর ২০২৫

| ৩০ আশ্বিন ১৪৩২

৩৫ বছর পর রাকসু নির্বাচনে আজ ভোট

রাবি প্রতিনিধি

প্রকাশ: ০৩:২১, ১৬ অক্টোবর ২০২৫

৩৫ বছর পর রাকসু নির্বাচনে আজ ভোট

দীর্ঘ ৩৫ বছর পর আজ বৃহস্পতিবার অনুষ্ঠিত হচ্ছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি) কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (রাকসু), হল সংসদ ও সিনেট ছাত্র প্রতিনিধি নির্বাচনে ভোট গ্রহণ। ভোট চলবে সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত। 

এবারের নির্বাচনে রাকসুতে পদ রয়েছে ২৩টি। আর ১৫টি ২৫৫টি পদ রয়েছে হল সংসদে। সিনেটে ছাত্র প্রতিনিধি হিসাবে নির্বাচিত হবেন পাঁচজন। 

একজন ভোটার ৪৩টি ভোট দেবেন। ভোট দিতে ভোটার প্রতি সময় পাবেন ১০ মিনিট করে। অর্থাৎ গড়ে ১৪ সেকেন্ডে একটি করে ভোট দিতে হবে। 

১৯৭৩ সালের রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যাদেশ অনুসারে, প্রতি বছর রাকসু ও হল সংসদ নির্বাচন হওয়ার কথা। তবে বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা হওয়ার পর ৭২ বছরে ছাত্র সংসদ নির্বাচন হয়েছে মোট ১৬ বার।

এর মধ্যে প্রথম দুইবার ভোট হয়েছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র ইউনিয়ন (রাসু) নামে; বাকি ১৪ বার হয়েছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (রাকসু) নামে।

এখন পর্যন্ত যে ১৬ বার ছাত্র সংসদ গঠন হয়েছে, তার মধ্যে ১০ বারই হয়েছে পাকিস্তান আমলে। সে হিসেবে দেশ স্বাধীনের পর এবার সপ্তম বারের মতো এই ভোট হচ্ছে। 

নির্বাচনে ছাত্রদল, ছাত্রশিবির ও বাম সংগঠন মিলে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে ৯টি প্যানেল।

এর আগে সবশেষ রাকসু নির্বাচন হয়েছিল ১৯৮৯ সালে। সেই সংসদে (১৯৮৯-৯০) ভিপি হয়েছিলেন ছাত্রদলের রুহুল কবির রিজভী (বর্তমানে বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব), আর ভিপি হয়েছিলেন জাসদ ছাত্রলীগের রুহুল কুদ্দুস বাবু।

নির্বাচন কমিশনার অধ্যাপক মোস্তফা কামাল আকন্দ জানিয়েছেন, একজন প্রার্থী নির্দিষ্ট কেন্দ্রে ঢুকে পোলিং কর্মকর্তার কাছে সই করে ছয়টি ব্যালট পেপার পাবেন। এসব ব্যালট গোপন বুথে নিয়ে তা পূরণ করে স্বচ্ছ বাক্সে জমা দিতে হবে।

প্রথম ব্যালট পেপারে থাকছে সহসভাপতি (ভিপি), সাধারণ সম্পাদক (জিএস) ও সহসাধারণ সম্পাদক (এজিএস) প্রার্থীর তালিকা। দ্বিতীয়, তৃতীয় ও চতুর্থ ব্যালটে আছে বিভিন্ন সম্পাদকীয় পদপ্রার্থীদের নাম। পঞ্চম ব্যালটে থাকছে সিনেটে ছাত্র প্রতিনিধি পদপ্রার্থীদের নাম। আর ষষ্ঠ ব্যালটে থাকছে হল সংসদের প্রার্থীদের নাম।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ নির্বাচনে এবার মোট ভোটার ২৮ হাজার ৯০১ জন। এর মধ্যে নারী ভোটার ১১ হাজার ৩০৫। আর পুরুষ ভোটার ১৭ হাজার ৫৯৬ জন।

রাকসুতে মোট পদ ২৩টি; মোট প্রার্থী ২৪৭। এর মধ্যে পুরুষ ২২২ জন এবং নারী প্রার্থী ২৫ জন।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে মোট হল ১৭টি। প্রত্যেক হল ছাত্র সংসদে ১৫টি করে মোট পদ রয়েছে ২৫৫টি; যার বিপরীতে ভোট করছেন ৬০১ জন। এর মধ্যে ছেলেদের ১১টি হলের ৪৬০ জন প্রার্থী রয়েছেন; বাকি ৬টি নারী হলের প্রার্থী সংখ্যা ১৪১।

ভোটগ্রহণ হবে বিশ্ববিদ্যালয়ের ৯টি একাডেমিক ভবনে স্থাপিত ১৭টি কেন্দ্রে। ভোটারদের মধ্যে ৩৯  শতাংশ নারী ও ৬১ শতাংশ পুরুষ।

ভোটের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে নেওয়া হয়েছে ত্রিমাত্রিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা (থ্রি ডাইমেনশনাল সিকিউরিটি)। প্রতিটি ভোটারকে ছবিসহ পরিচয়পত্র যাচাই, ইউনিক ভোটার আইডি নম্বর যাচাই ও সন্দেহ হলে কিউআর কোড স্ক্যান করে চূড়ান্ত পরিচয় নিশ্চিত করা হবে।

অমোচনীয় কালি ছাড়াও পরিচয় যাচাইয়ের জন্য অতিরিক্ত প্রযুক্তিগত পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।

নির্বাচন ঘিরে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে অতিরিক্ত আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মোতায়েন থাকবে। এর মধ্যে ২ হাজার পুলিশ সদস্য, ৬ প্লাটুন বিজিবি ও ১২ প্লাটুন র‌্যাব মোতায়েন থাকবে। 

প্রতিটি ভোটকেন্দ্র সিসিটিভি ক্যামেরার আওতায় থাকবে। ভোটগ্রহণ হবে স্বচ্ছ ব্যালট বাক্সে।

ব্যালটপেপার ছাপানো নিয়ে বিতর্ক এড়াতে বিশ্ববিদ্যালয়ের অভিজ্ঞ পরীক্ষাকেন্দ্রিক প্রতিষ্ঠান দিয়ে ব্যালট তৈরি করা হয়েছে। মোট ভোটারের সমান সংখ্যক ব্যালট ছাপানো হয়েছে ২৮ হাজার ৯০১টি। কোনো কেন্দ্রে অতিরিক্ত বা কম ব্যালট যাবে না।

নির্বাচন কমিশনার জানান, প্রতি ভোটারকে ৬ পৃষ্ঠার ব্যালট দেওয়া হবে। তাই ভোটগ্রহণের পরই গণনা শুরু করে সর্বোচ্চ ১৭ ঘণ্টার মধ্যে ফল প্রকাশের লক্ষ্য নিয়েই কাজ করছেন তাঁরা। ভোট শেষে ১৭টি কেন্দ্রে ১০২ টি মেশিনে ভোট গণনা হবে। ফল ঘোষণা করা হবে কাজী নজরুল ইসলাম মিলনায়তনে।

নির্বাচন কমিশনার মোস্তফা কামাল আকন্দ জানিয়েছেন, নয়টি ভবনে ভোট গ্রহণ শেষে সব ব্যালট বাক্স নেওয়া হবে কাজী নজরুল ইসলাম মিলনায়তনে। ভোট গণনার সুবিধার্থে ১০০টি করে ব্যালট দিয়ে পৃথক বান্ডেল করা হবে। এ বান্ডেলর ভেটি গোনা হবে ওএমআর মেশিনে যা পর্যবেক্ষণ করবে বিশেষজ্ঞ প্যানেল। সবমিলিয়ে তিনটি ধাফে চূড়ান্ত ফল তৈরি হবে। একটি হলের ফল তৈরি শেষে আরেকটির গণনা শুরু হবে। তাতে ২৮৩টি পদের ফল জানাতে ১২ থেকে ১৫ ঘণ্টা সময় লেগে যেতে পারে।

আরও পড়ুন