হামাস প্রস্তাব মেনে নেওয়ার পরও যুদ্ধবিরতিতে অনড় নেতানিয়াহু
সমাজকাল ডেস্ক
প্রকাশ: ১১:৩৪, ২৬ আগস্ট ২০২৫

প্রায় এক সপ্তাহ আগে কাতার ও মিসরের মধ্যস্থতায় দেওয়া সর্বশেষ যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব হামাস গ্রহণ করলেও ইসরায়েল এখনো কোনো জবাব দেয়নি। অথচ প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু প্রকাশ্যে দাবি করছেন, তিনি “তাৎক্ষণিকভাবে” আলোচনায় বসতে চান বন্দিদের মুক্তি ও যুদ্ধের অবসানের জন্য।
নীতি পরিবর্তন ও দ্বৈত কৌশল
গত দেড় বছর ধরে ধাপে ধাপে আংশিক যুদ্ধবিরতিতেই সীমাবদ্ধ ছিলেন নেতানিয়াহু। কিন্তু এখন তিনি চাইছেন একেবারে সমন্বিত একটি চুক্তি—যেখানে সব বন্দির মুক্তি ও যুদ্ধের অবসান ঘটবে কেবল ইসরায়েলের শর্তে।
এদিকে তিনি একযোগে গাজা সিটিতে আইডিএফের ব্যাপক সামরিক অভিযানও এগিয়ে নিচ্ছেন। ইসরায়েলি কর্মকর্তারা বলছেন, হামাসকে নমনীয় হতে বাধ্য করেছে এই নতুন সামরিক চাপের হুমকি।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাব: ট্রাম্প ফ্যাক্টর
নতুন কৌশলের ব্যাখ্যা অনেকাংশেই খুঁজে পাওয়া যায় ওয়াশিংটনে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রকাশ্যে ইসরায়েলের অবস্থান সমর্থন করেছেন। তার ভাষায়,“হামাস কেবল ধ্বংসের মুখোমুখি হলে বন্দিদের ফেরত পাওয়া যাবে।”
গত জুলাইয়ে দোহা বৈঠকে অচলাবস্থার পর ট্রাম্প আংশিক সমঝোতা প্রক্রিয়ার ওপর আস্থা হারান এবং মনে করেন, হামাস আসলে কোনো চুক্তি চায় না। এর পরপরই নেতানিয়াহুর কার্যালয় কৌশল বদলে “সব অথবা কিছুই নয়” অবস্থান নেয়।
ইসরায়েলের শর্ত ও হামাসের অস্বীকৃতি
সর্বশেষ নিরাপত্তা মন্ত্রিসভায় নেতানিয়াহু যুদ্ধ শেষ করার জন্য পাঁচটি শর্ত ঘোষণা করেছেন:
হামাসের সম্পূর্ণ নিরস্ত্রীকরণ
সব বন্দির মুক্তি
গাজা অঞ্চল নিরস্ত্রীকরণ ও ইসরায়েলের নিরাপত্তা নিয়ন্ত্রণ
হামাস বা ফাতাহ নয়, বিকল্প প্রশাসন প্রতিষ্ঠা
কিন্তু হামাস নিরস্ত্রীকরণের যে কোনো শর্তকে লাল দাগ হিসেবে ঘোষণা করেছে।
অভ্যন্তরীণ সংকট: বন্দি পরিবার ও জনমত
ইসরায়েলে জনমতের বড় অংশ যুদ্ধবিরতি ও বন্দি মুক্তির পক্ষে থাকলেও নেতানিয়াহুর জোটসঙ্গী কট্টর ডানপন্থী নেতারা (ইতামার বেন গিভির ও বেজালেল স্মোত্রিচ) যেকোনো যুদ্ধবিরতির তীব্র বিরোধিতা করছেন।
এ কারণে এতদিনের আংশিক চুক্তিগুলো করা হয়েছিল ধাপে ধাপে, যাতে আবার যুদ্ধ শুরু করা যায়।
কিন্তু এখন পরিবারগুলো রাস্তায় নেমে সরকারের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। গত শুক্রবার বিক্ষোভে এক মা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন:“আপনি অযৌক্তিক শর্ত বসাচ্ছেন, সেনাদের মৃত্যু ফাঁদে ঠেলে দিচ্ছেন এবং আমার ছেলেকে মৃত্যুদণ্ড দিচ্ছেন।”
বিশ্লেষণ: যুদ্ধ নাকি সময় কেনা?
ইসরায়েলি বিশ্লেষকদের মতে, নেতানিয়াহু জানেন হামাস এসব শর্ত মানবে না। তবু তিনি তা জেনেশুনেই সামনে আনছেন, কারণ এতে যুদ্ধ দীর্ঘায়িত হয় এবং তাঁর রাজনৈতিক টিকে থাকা নিশ্চিত হয়।
হারেৎজের কূটনৈতিক ভাষ্যকার চেইম লেভিনসন বলেন,“নেতানিয়াহুর প্রকৃত উদ্দেশ্য হলো সময় কেনা। তিনি শান্তির কথা বলেন, কিন্তু যুদ্ধের কৌশল চালিয়ে যাচ্ছেন।”
বর্তমানে ইসরায়েলের রাজনৈতিক নেতৃত্ব ও সাধারণ মানুষের মধ্যে স্পষ্ট বিভাজন তৈরি হয়েছে। পরিবারগুলো যুদ্ধের অবসান ও বন্দিদের ফেরত চায়, অথচ নেতানিয়াহুর কট্টর জোটসঙ্গীরা যুদ্ধ চালিয়ে যেতে চাইছে। আন্তর্জাতিক মহলও দ্বিধায় পড়েছে—হামাস প্রস্তাবে সায় দেওয়ার পরও ইসরায়েল কেন নীরব, সেই প্রশ্ন ঘুরছে বিশ্বজুড়ে।
খবর : সিএনএন