বৃহস্পতিবার, ২৮ আগস্ট ২০২৫

| ১২ ভাদ্র ১৪৩২

রাশিয়ার পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্রে ইউক্রেনের ড্রোন হামলা

সমাজকাল ডেস্ক

প্রকাশ: ২০:১৭, ২৪ আগস্ট ২০২৫

রাশিয়ার পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্রে ইউক্রেনের ড্রোন হামলা

রবিবার রাশিয়ার গুরুত্বপূর্ণ বিদ্যুৎ ও জ্বালানি অবকাঠামোয় ব্যাপক ড্রোন হামলা চালিয়েছে ইউক্রেন। এ হামলায় সীমান্তবর্তী কুরস্ক অঞ্চলের একটি পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্রে আগুন লেগে যায় এবং উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের উস্ত-লুগায় অবস্থিত একটি জ্বালানি রপ্তানি টার্মিনালে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। হামলার লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হওয়া এই দুটি স্থাপনা রাশিয়ার জ্বালানি উৎপাদন ও রপ্তানি ব্যবস্থার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে বিবেচিত।

রুশ কর্মকর্তাদের বরাতে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম রয়টার্স জানায়, কুরস্ক পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্রের একটি ইউনিটে ড্রোন হামলার ফলে প্রধান একটি ট্রান্সফরমার ধ্বংস হয়ে যায়। এতে কেন্দ্রটির প্রায় অর্ধেক উৎপাদন ব্যবস্থা বন্ধ হয়ে যায় এবং সামগ্রিক উৎপাদন ক্ষমতা ৫০ শতাংশ হ্রাস পায়। তবে কর্তৃপক্ষ দাবি করেছে, দ্রুত অগ্নিনির্বাপণকর্মীরা ঘটনাস্থলে পৌঁছে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হয় এবং কোনো ধরনের তেজস্ক্রিয়তা ছড়িয়ে পড়ার ঝুঁকি তৈরি হয়নি। হতাহতের কোনো খবরও পাওয়া যায়নি।

অন্যদিকে উস্ত-লুগার জ্বালানি রপ্তানি টার্মিনালে ড্রোন ধ্বংসের পর এর ধ্বংসাবশেষে আগুন লেগে ব্যাপক অগ্নিকাণ্ড ঘটে। ওই টার্মিনালটি রাশিয়ার প্রাকৃতিক গ্যাস ও জ্বালানি রপ্তানির একটি গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র। আগুন দ্রুত ছড়িয়ে পড়ায় সেখানে কার্যক্রমে বড় ধরনের ব্যাঘাত সৃষ্টি হয়। হামলার পর থেকে রাশিয়ার সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করছে।

রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, গত শনিবার রাতে ইউক্রেন শতাধিক বিস্ফোরকবাহী কামিকাজি ড্রোন নিক্ষেপ করে রাশিয়ার অন্তত ১৩টি প্রদেশের দিকে। এর মধ্যে রুশ প্রতিরক্ষা বাহিনী ৯৫টির মতো ড্রোন আকাশেই ধ্বংস করে ফেলে। কুরস্ক অঞ্চলে ১০টি ড্রোন ধ্বংস করা হয়। তবুও কয়েকটি লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানতে সক্ষম হয়, যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো কুরস্ক পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্র ও উস্ত-লুগার জ্বালানি টার্মিনাল।

বিশ্লেষকদের মতে, ইউক্রেন শুরু থেকেই রাশিয়ার জ্বালানি অবকাঠামোকে তাদের আক্রমণের অন্যতম প্রধান লক্ষ্যবস্তু হিসেবে বিবেচনা করে আসছে। এর মাধ্যমে তারা রাশিয়ার অর্থনীতি ও যুদ্ধ পরিচালনার সক্ষমতাকে দুর্বল করার চেষ্টা করছে। এর আগে চলতি আগস্টের শুরুর দিকে ইউক্রেনীয় বাহিনী রাশিয়ার সরকারি তেল শোধন কোম্পানি সিজরানের একটি কারখানায় হামলা চালিয়েছিল, যা দেশের জ্বালানি সরবরাহ ব্যবস্থায় বড় ধরনের প্রভাব ফেলে।

এদিকে আন্তর্জাতিক মহলে এ হামলা নিয়ে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। পারমাণবিক স্থাপনায় আগুন লাগার ঘটনায় আন্তর্জাতিক পারমাণবিক শক্তি সংস্থা (আইএইএ) সতর্কতা জানিয়ে বলেছে, যুদ্ধক্ষেত্রে এ ধরনের অবকাঠামো সব সময় ঝুঁকির মুখে থাকে এবং এগুলোর নিরাপত্তা নিশ্চিত করা অত্যন্ত জরুরি। যদিও কুরস্ক বিদ্যুৎকেন্দ্রে তেজস্ক্রিয়তা ছড়িয়ে পড়ার কোনো খবর পাওয়া যায়নি, তবুও বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এ ধরনের হামলা যদি বারবার ঘটে তবে তা আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক নিরাপত্তার জন্য মারাত্মক হুমকি হয়ে দাঁড়াতে পারে।

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের সূচনা ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে। তারপর থেকে এই সংঘাত দিনে দিনে জটিল হয়ে উঠছে এবং হামলার ধরনও বদলাচ্ছে। ইউক্রেন এখন রাশিয়ার অভ্যন্তরীণ অবকাঠামোতে হামলার কৌশল জোরদার করেছে। সর্বশেষ হামলার ঘটনাটি প্রমাণ করে, দুই দেশের লড়াই কেবল সীমান্ত অঞ্চলে সীমাবদ্ধ নেই, বরং গভীরভাবে রাশিয়ার জ্বালানি অবকাঠামোকে টার্গেট করছে।

এই পরিস্থিতি আন্তর্জাতিক অঙ্গনে নতুন করে আলোচনার জন্ম দিয়েছে যে, যুদ্ধ দীর্ঘস্থায়ী হলে তা শুধু দুই দেশের নয়, সমগ্র ইউরোপের জ্বালানি নিরাপত্তা ও বিশ্ববাজারে জ্বালানির স্থিতিশীলতার ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলতে পারে। ইউক্রেনীয় বাহিনীর এই ধারাবাহিক আক্রমণ রাশিয়ার ওপর চাপ সৃষ্টি করছে, অন্যদিকে যুদ্ধের অবসান এখনও অনিশ্চয়তার ঘেরাটোপে রয়ে গেছে।

আরও পড়ুন

শীর্ষ সংবাদ: