গাজা সিটি ধ্বংসস্তূপে: আসন্ন ইসরায়েলি আক্রমণে আতঙ্ক, মানবিক বিপর্
সমাজকাল ডেস্ক
প্রকাশ: ১১:০২, ২৫ আগস্ট ২০২৫

গাজা সিটি: ধ্বংসস্তূপে পরিণত এক ঐতিহাসিক নগরী, আসন্ন ইসরায়েলি অভিযানে আতঙ্কিত ফিলিস্তিনিরা
হাজার বছরের পুরোনো ইতিহাস ও ঐতিহ্যের নগরী গাজা সিটি আজ ভেঙে পড়েছে ভয়াবহ যুদ্ধ, ক্ষুধা ও ধ্বংসস্তূপের নিচে। একসময় প্রাণচাঞ্চল্যে ভরা এই শহর ছিল গাজার সাংস্কৃতিক ও আর্থিক কেন্দ্র, কিন্তু প্রায় দুই বছরের ইসরায়েলি অভিযানে এটি আজ আইনহীন নগরীতে পরিণত। আসন্ন নতুন ইসরায়েলি আক্রমণের খবর আরও শঙ্কা বাড়িয়ে দিয়েছে স্থানীয়দের মধ্যে।
ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট
গাজা সিটির ইতিহাস কয়েক হাজার বছরের পুরোনো। ফিলিস্তিনিদের বাস্তুচ্যুত হয়ে আশ্রয় নেওয়ার প্রধান নগরী এটি। ২০০৭ সালে হামাস ক্ষমতা দখলের পর থেকেই গাজা সিটি তাদের কার্যত রাজধানী হয়ে ওঠে। অবরোধ ও দমননীতি সত্ত্বেও আঞ্চলিক সহযোগিতা ও জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে কোনো রকমে জীবন চলছিল।
বর্তমান পরিস্থিতি: ধ্বংসস্তূপে নগরী
- শহরের উঁচু ভবনগুলো ধ্বংসস্তূপে পরিণত।
- রাস্তায় জমে আছে আবর্জনা ও নোংরা পানি, বাড়ছে রোগবালাই।
- হাসপাতালে চিকিৎসা নেই, ফার্মেসিতে ওষুধ নেই।
- বাজারে পণ্যের দাম নাগালের বাইরে, অনেক ক্ষেত্রেই লুট করা পণ্য।
- বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ, জেনারেটরের তারের জটিল জালে সীমিত আলো।
- রাত নামলেই সশস্ত্র গ্যাং ও চোরাকারবারিদের দৌরাত্ম্য।
একজন স্থানীয় বাসিন্দা জানিয়েছেন—“ক্ষুধা ও যুদ্ধের ক্লান্তি মানুষকে ত্রিশ বছর বয়সে সত্তরের মতো বুড়িয়ে দিয়েছে।”
হামাস: অদৃশ্য উপস্থিতি
হামাসের দৃশ্যমান উপস্থিতি আজ নেই। তাদের রাজনৈতিক কার্যালয় ও পুলিশ স্টেশন ধ্বংস হয়ে গেছে। তবে গোপনে তারা সংগঠিত হচ্ছে। নতুন গোষ্ঠী ‘আল রাদেয়া’ বাজারে ত্রাস সৃষ্টি করছে, যারা অভিযোগ তোলে ইসরায়েলের সহযোগী গ্যাংদের বিরুদ্ধে।
আসন্ন ইসরায়েলি আক্রমণ
ইসরায়েলি সেনারা বলছে, গাজা সিটি দখল নিতে ৬০ হাজার নতুন রিজার্ভ সেনা লাগবে।
অক্টোবর ৭ (যুদ্ধ শুরুর দুই বছর পূর্তি) তারিখকে প্রতীকী ডেডলাইন ধরে বেসামরিকদের সরে যেতে বলা হচ্ছে।
“হামাস মেট্রো” নামে পরিচিত টানেল নেটওয়ার্ক প্রত্যাশার চেয়ে অনেক জটিল।
আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় আশঙ্কা করছে, নতুন এই অভিযানে আবারও বিপুল বেসামরিক হতাহতের ঘটনা ঘটতে পারে।
মানবাধিকার সংস্থা ও বিশ্বশক্তিগুলো ইসরায়েলের বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধ, মানবাধিকার লঙ্ঘন ও খাদ্যসাহায্য অবরোধ করার অভিযোগ তুলেছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সামরিক সমাধান দিয়ে গাজা সংকট নিরসন সম্ভব নয়।
গাজা সিটি আজ শুধু যুদ্ধের মাঠ নয়, বরং মানবিক বিপর্যয়ের প্রতীক। ক্ষুধা, মৃত্যু, ধ্বংস ও অনিশ্চয়তার মধ্যে বেঁচে থাকা মানুষগুলো জানে না তাদের আগামী কেমন হবে। আসন্ন ইসরায়েলি অভিযানে এই নগরীর চূড়ান্ত ধ্বংস হয়ে গেলে বিশ্ব ইতিহাস হারাবে এক প্রাচীন নগরীর অস্তিত্ব, আর মানবতা হারাবে তার অমূল্য অংশ।