বৃহস্পতিবার, ২৮ আগস্ট ২০২৫

| ১২ ভাদ্র ১৪৩২

গাজায় ইসরায়েলি হামলায় নিহত ৬৩

সমাজকাল ডেস্ক

প্রকাশ: ১১:৩০, ২৪ আগস্ট ২০২৫ | আপডেট: ১৩:৩৫, ২৪ আগস্ট ২০২৫

গাজায় ইসরায়েলি হামলায় নিহত ৬৩

গাজায় ইসরায়েলি সেনাদের টানা হামলা আরও অন্তত ৬৩ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। শনিবার গাজার সাবরা এলাকায় ইসরায়েলি ট্যাঙ্ক প্রবেশ করে নতুন করে স্থল অভিযান শুরু করেছে। অভিযানে একটি শিশুসহ একাধিক বেসামরিক মানুষের প্রাণহানি ঘটে।

দক্ষিণ গাজায় বেসামরিকদের ওপর হামলা

শনিবার ভোরে খান ইউনিসের উত্তর-পশ্চিমে আসদা এলাকায় বাস্তুচ্যুত পরিবারের তাবুতে গোলাবর্ষণ চালায় ইসরায়েলি বাহিনী। এতে ১৬ জন নিহত হন, যাদের মধ্যে ছয়জন শিশু। ছাড়া সারাদিন মানবিক সহায়তা সংগ্রহ করতে গিয়ে অন্তত ২২ ফিলিস্তিনি প্রাণ হারান। তাদের মধ্যে একজনকেমোরাগ অক্ষনামে পরিচিত বিতরণ কেন্দ্রের কাছে গুলি করে হত্যা করা হয়। নেটজারিম করিডরের কাছেও সহায়তা নিতে যাওয়া এক বেসামরিক নাগরিককে গুলি করে হত্যা করেছে ইসরায়েলি সেনারা।

ক্ষুধা দুর্ভিক্ষে মৃত্যু

ফিলিস্তিনি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে, গত ২৪ ঘণ্টায় অনাহার অপুষ্টিতে আরও আটজনের মৃত্যু হয়েছে, যাদের মধ্যে দুই শিশু রয়েছে। নিয়ে ইসরায়েলি যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে গাজায় অনাহারে মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২৮১-এ। এর মধ্যে ১১৪ জন শিশু।

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের প্রধান মুনির আল-বুরশ জানিয়েছেন,“দুর্ভিক্ষ নীরবে মানুষের দেহকে ক্ষয় করছে। শিশুদের জীবনধিকার কেড়ে নিচ্ছে। হাসপাতাল তাঁবু প্রতিদিন নতুন ট্র্যাজেডির সাক্ষী হচ্ছে।

জাতিসংঘের দুর্ভিক্ষ ঘোষণা

শুক্রবার জাতিসংঘ আনুষ্ঠানিকভাবে গাজায় দুর্ভিক্ষ ঘোষণা করেছে। মধ্যপ্রাচ্যে এই প্রথম কোনো অঞ্চলের জন্য এমন ঘোষণা এল। জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস একেমানবসৃষ্ট বিপর্যয়হিসেবে অভিহিত করেছেন।

বিশ্বব্যাপী খাদ্য নিরাপত্তা পর্যবেক্ষক প্রতিষ্ঠান আইপিসি জানিয়েছে, গাজার প্রায় লাখ ১৪ হাজার মানুষ ইতিমধ্যে দুর্ভিক্ষে ভুগছেন। সেপ্টেম্বরের শেষে এই সংখ্যা বেড়ে লাখ ৪১ হাজারে পৌঁছাতে পারে।

অনাহারকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার

ফিলিস্তিনি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বলেছে, গাজায় দুর্ভিক্ষ ঘোষণার সিদ্ধান্তটি দেরিতে এলেও তারা এটি স্বাগত জানায়। তাদের ভাষায়—“অনাহারের প্রকৌশল হচ্ছে গণহত্যারই এক অধ্যায়। স্বাস্থ্যখাত ধ্বংস, গণহত্যা, প্রজন্ম নিধনসবই একই পরিকল্পনার অংশ।

সহায়তা কাঠামো হত্যাযজ্ঞ

গত মে মাসে ইসরায়েল যুক্তরাষ্ট্র মিলে যে জিএইচএফ (GHF) নামে একতরফা সহায়তা কাঠামো চালু করেছে, সেটিকে জাতিসংঘ বড় বড় মানবিক সংস্থা অবৈধ অমানবিক আখ্যা দিয়েছে। ব্যবস্থার অধীনে সহায়তা সংগ্রহ করতে গিয়ে ইতিমধ্যে হাজার ৭৬ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন, আহত হয়েছেন ১৫ হাজারের বেশি।

দুই বছরের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ

২০২৩ সালের অক্টোবরে হামাসের অভিযানের পর শুরু হওয়া ইসরায়েলি হামলায় এখন পর্যন্ত গাজায় নিহতের সংখ্যা ৬২ হাজার ৬০০ ছাড়িয়েছে। ধ্বংসস্তূপে পরিণত হওয়া গাজায় অবরুদ্ধ প্রায় ২০ লাখ মানুষ প্রতিদিন ক্ষুধা, নিরাপত্তাহীনতা মানবিক সংকটে বেঁচে থাকার লড়াই চালাচ্ছেন।

গাজায় চলমান এই ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয় কেবল মধ্যপ্রাচ্যের জন্য নয়, বিশ্ব বিবেকের জন্যও এক কঠিন পরীক্ষা। অনাহারকে যুদ্ধের অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার আন্তর্জাতিক মানবিক আইন জেনেভা কনভেনশনের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন।

আরও পড়ুন

শীর্ষ সংবাদ: