বাউলশিল্পী আবুল সরকারের শাস্তি চাইলেন রাশেদ খাঁন
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১৪:৪৫, ২৫ নভেম্বর ২০২৫ | আপডেট: ১৪:৪৭, ২৫ নভেম্বর ২০২৫
বাউলশিল্পী আবুল সরকার ও গণঅধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খাঁন। কোলাজ ছবি
ধর্ম অবমাননার অভিযোগে গ্রেপ্তার হওয়া বাউলশিল্পী আবুল সরকারের কঠোর শাস্তি দাবি করেছেন গণঅধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খাঁন। মঙ্গলবার (২৫ নভেম্বর) নিজের ফেরিফায়েড ফেসবুকের এক পোস্টে তিনি এই দাবি জানান।
রাশেদ খাঁন এমন এক সময়ে এই বাউলশিল্পীর শাস্তি দাবি করলেন, যখন দেশজুড়ে বিভিন্ন শ্রেণি ও পেশার নাগরিকরা এবং দেশি-বিদেশী মানবাধিকার সংস্থাগুলো এই শিল্পীর মুক্তির দাবি জানিয়ে আসছে। এমনকি এসব ব্যক্তি ও সংগঠন দেশে ধর্ম-অবমাননার কথিত অভিযোগকে কেন্দ্র করে সম্প্রতি দেশের বিভিন্ন স্থানে হামলা, মব সন্ত্রাস, ভাঙচুর ও গ্রেপ্তারেরও তীব্র সমালোচনা করছে।
সর্বশেষ সোমবার এক বিবৃতিতে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) মানিকগঞ্জে বাউল শিল্পী আবুল সরকারের গ্রেপ্তার এবং তার সমর্থকদের ওপর শান্তিপূর্ণ মানববন্ধন চলাকালে সংঘটিত সমন্বিত মব-হামলার ঘটনা দেশব্যাপী ধর্মীয় সহাবস্থান, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি ও সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্যবিরোধী শক্তির ক্রমবর্ধমান বিকাশ, ধর্মান্ধতা ও সংখ্যাগুরুতান্ত্রিক অসহিষ্ণুতার বিপজ্জনক বিস্তৃতির উদ্বেগজনক উদাহরণ বলে মন্তব্য করে। এই ধরনের ঘটনা দেশের ধর্মীয় ও সামাজিক, সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্য ও সর্বোপরি মৌলিক মানবাধিকারের প্রতি চরম হুমকি বলেও মন্তব্য করেছে সংস্থাটি।
এরই মধ্যে ফেসবুকে এই বাউলশিল্পীর শাস্তি দাবি করলেন গণঅধিকার পরিষদের এই নেতা।
সকাল ১১টার দিকে তিনি ফেসবুকে লেখেন-
“বাউল আবুল সরকারের মুক্তি নয়, কঠোর শাস্তি চাই। এই বাউলের বক্তব্য একটু আগে শুনলাম। সে সমাজে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে এই ধরনের কটুক্তি করেছে। আপনি শিল্পী, আপনার শিল্পচর্চায় কেউ বাধা দিবেনা। কিন্তু আপনি আল্লাহ ও ধর্ম নিয়ে কটুক্তি করতে পারেন না। এমনকি হিন্দু ধর্ম ও হিন্দুধর্মাবলম্বীদের নিয়েও কটুক্তি করার অধিকার কারও নাই।”
রাশেদ খাঁন ফেসবুকে আরও লেখেন, “সবাই স্বাধীনভাবে এই দেশে ধর্মপালনের অধিকার পাবে, কিন্তু ধর্ম নিয়ে কটুক্তির অধিকার কারও নাই। বাউল আবুল সরকারের মুক্তি চাচ্ছেন, তারা আগে বাউল আবুল সরকারের বক্তব্য শুনুন। সে সমগ্র মুসলমানদের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করেছে, বাংলাদেশের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্টের চেষ্টা করেছে।”
তিনি লেখেন, “বাংলাদেশের আইন অনুযায়ী তার যথাযোগ্য শাস্তি হলে পরবর্তীতে কেউ আর এমন কটুক্তি করবেনা। আমরা সমাজে শান্তি চাই। ধর্ম নিয়ে বিতর্ক এবং বিভাজন চাইনা।”
এর আগে গত ৪ অক্টোবর মানিকগঞ্জের ঘিওর উপজেলায় এক সঙ্গীত অনুষ্ঠানে আবুল সরকারের বিরুদ্ধে ধর্ম অবমাননার অভিযোগ ওঠে। এ ঘটনার পর গত বৃহস্পতিবার ভোরে মাদারীপুরে তাকে গ্রেফতার করে মানিকগঞ্জে নিয়ে আসে।
এ ঘটনায় গত বৃহস্পতিবার সকালে আবুল সরকারের বিরুদ্ধে ঘিওর থানায় মামলা করেন ঘিওর বন্দর মসজিদের ইমাম মুফতি মো. আব্দুল্লাহ।
মামলায় অভিযোগ করা হয়েছে, গত ৪ নভেম্বর মানিকগঞ্জের ঘিওর উপজেলার জাবরাখালা পাগলীর মেলামঞ্চে গান পরিবেশনকালে ধর্ম অবমাননা করেছেন আবুল সরকার।
ওই মামলায় বৃহস্পতিবার তাকে মাদারীপুর থেকে আটক করে ডিবি পুলিশ। বিকালে মানিকগঞ্জ চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে সোপর্দ করা হলে বিচারক তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।
ঘিওর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. কহিনুর ইসলাম বলেন, বাউল শিল্পী আবুল সরকার গান পরিবেশনকালে ধর্ম সম্পর্কে বিভ্রান্তিমূলক কথা বলেছেন বলে মামলায় অভিযোগ করা হয়েছে। মামলাটি তদন্তাধীন।
