বাংলাদেশ-কুয়েতের নতুন অধ্যায়
শ্রম, শিক্ষা, প্রতিরক্ষা ও ফ্লাইট সহযোগিতায় একাধিক চুক্তি শিগগির
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ২০:১৮, ১৯ অক্টোবর ২০২৫

ছবি: সংগৃহীত
বাংলাদেশ ও কুয়েতের মধ্যে শ্রম সহযোগিতাসহ বিভিন্ন খাতে নতুন চুক্তি স্বাক্ষর হতে যাচ্ছে। রবিবার (১৯ অক্টোবর) সকালে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় দুই দেশের প্রথম পররাষ্ট্র সচিব পর্যায়ের রাজনৈতিক পরামর্শ বৈঠক—ফরেন অফিস কনসালটেশন (এফওসি)—অনুষ্ঠিত হয়।
কুয়েতের প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দেন দেশটির এশিয়াবিষয়ক সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও রাষ্ট্রদূত সামি ঈসা জোহর হায়াত, আর বাংলাদেশের নেতৃত্বে ছিলেন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিব (পূর্ব ও পশ্চিম) ড. মো. নজরুল ইসলাম।
বৈঠকের পর রাষ্ট্রদূত জানান, খাদ্য নিরাপত্তা, সাইবার নিরাপত্তা, শিক্ষা ও উচ্চশিক্ষা, শিক্ষক-শিক্ষার্থী বিনিময় কর্মসূচি, সামরিক সহযোগিতা এবং বাংলাদেশি শ্রমিকদের কর্মসংস্থান—এসব ক্ষেত্রকে অগ্রাধিকার দিয়ে আলোচনা হয়। উভয়পক্ষই এসব ক্ষেত্রে সহযোগিতা সম্প্রসারণে একমত হয়েছে এবং শিগগির একাধিক নতুন চুক্তি স্বাক্ষরিত হবে।
দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের নতুন গতি
রাষ্ট্রদূত সামি হায়াত বলেন, “১৯৭৩ সালে কূটনৈতিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার পর এবারই প্রথম দুই দেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মধ্যে আনুষ্ঠানিক রাজনৈতিক পরামর্শ সভা অনুষ্ঠিত হলো। বৈঠকটি অত্যন্ত ফলপ্রসূ ছিল।”
তিনি আরও জানান, সকালে সেনাবাহিনীর প্রধানসহ বিভিন্ন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তার সঙ্গে বৈঠক শেষে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেনের সঙ্গে দেখা করেন এবং কুয়েতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবদুল্লাহ আলির স্বাক্ষরিত একটি চিঠি হস্তান্তর করেন, যেখানে দুই দেশের সম্পর্ক আরও জোরদারের ওপর জোর দেওয়া হয়েছে।
রাষ্ট্রদূত বলেন, “১৯৯০ সালের কুয়েত দখলদারত্বের সময় বাংলাদেশের অকুণ্ঠ সমর্থন ও সহায়তা কুয়েতের জনগণ আজও কৃতজ্ঞতার সঙ্গে স্মরণ করে। সেই সহযোগিতা আজও অব্যাহত আছে।”
ফ্লাইট ও শ্রমচুক্তিতে অগ্রগতি
বৈঠকে বেসামরিক বিমান চলাচল এবং ফ্লাইট সংখ্যা বৃদ্ধির বিষয়েও আলোচনা হয়। বর্তমানে কুয়েত এয়ারওয়েজ সপ্তাহে ৭টি, আল জাজিরা এয়ারওয়েজ ১৪টি এবং বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স ৩টি ফ্লাইট পরিচালনা করছে।
রাষ্ট্রদূত জানান, “খুব শিগগিরই নতুন রুট ও ফ্লাইট সংখ্যা বাড়ানোর বিষয়ে সমঝোতা কার্যকর হবে।”
এছাড়া, শ্রম সহযোগিতা চুক্তি নবায়নের প্রস্তুতি চলছে, যা আগামী উচ্চপর্যায়ের সফরকালে স্বাক্ষরিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
কূটনৈতিক ধারাবাহিকতা ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, ২০০৬ সালে এ ধরনের বৈঠক আয়োজনের বিষয়ে সমঝোতা হলেও এবারই প্রথম এফওসি অনুষ্ঠিত হলো। দুই দেশ ভবিষ্যতে এই আলোচনা ধারাবাহিকভাবে চালিয়ে যাওয়ার ব্যাপারে ঐকমত্যে পৌঁছেছে।
রাষ্ট্রদূত হায়াত বলেন, “বাংলাদেশ ও কুয়েতের বন্ধুত্ব কোনো এক দিনের নয়; এটি ৩৬ বছরের অবিচ্ছিন্ন সহযোগিতার ফল। এই সম্পর্ক আগামী দিনে আরও গভীর ও বহুমাত্রিক হবে।”