শেখ হাসিনা, রেহানা ও টিউলিপ সিদ্দিকের দুর্নীতি মামলার রায় ১ ডিসেম্বর
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১৪:৩০, ২৫ নভেম্বর ২০২৫ | আপডেট: ১৪:৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৫
ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, তার বোন শেখ রেহানা এবং ব্রিটিশ এমপি টিউলিপ সিদ্দিক / ফাইল ছবি
ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, তার বোন শেখ রেহানা এবং যুক্তরাজ্যের ব্রিটিশ এমপি টিউলিপ সিদ্দিকসহ মোট ১৭ জনের বিরুদ্ধে দায়ের করা বহুল আলোচিত দুর্নীতি মামলার রায় ঘোষণা করা হবে আগামী ১ ডিসেম্বর। পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্পে অবৈধভাবে ১০ কাঠা জমি বরাদ্দ দেয়ার অভিযোগে মামলাটি করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
মঙ্গলবার (২৫ নভেম্বর) দুপুরে আদালতের বেঞ্চ সহকারী বেলাল হোসেন সাংবাদিকদের জানান যে, ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৪-এর বিচারক মো. রবিউল আলম রাষ্ট্রপক্ষ ও আসামিপক্ষের দীর্ঘ যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষে রায়ের এই দিন ঠিক করেন।
অভিযোগ ও মামলার পটভূমি
দুদকের মামলার নথি অনুযায়ী, তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ক্ষমতার অপব্যবহার করে রাজউককে অবৈধভাবে নির্দেশ দেন শেখ রেহানার নামে পূর্বাচলে ১০ কাঠা জমি বরাদ্দ দিতে। অভিযোগপত্রে বলা হয়—মিথ্যা হলফনামা ও জাল কাগজপত্রের মাধ্যমে এই প্লট পাওয়া হয় এবং এতে রাষ্ট্রীয় প্রকল্পে জালিয়াতি সংঘটিত হয়েছে।
মামলার সাক্ষ্য ও আদালত সূত্র জানায়, প্লট বরাদ্দের চাপ সৃষ্টির ক্ষেত্রে শেখ হাসিনার ভাগ্নি, ব্রিটিশ পার্লামেন্ট সদস্য টিউলিপ সিদ্দিকও ভূমিকা রেখেছিলেন। নিজের নামে জমি নিলেও মামলার মূল পরিকল্পনা ও চাপ প্রয়োগে জড়িত থাকার অভিযোগে তাকেও অন্যতম আসামি করা হয়।
সাক্ষ্য, নথিপত্র ও বিচার প্রক্রিয়া
মামলায় মোট ৩২ জন সাক্ষী আদালতে সাক্ষ্য দিয়েছেন। তারা একজন একজন করে বর্ণনা করেন—কীভাবে অবৈধ নির্দেশনা, ভুয়া হলফনামা ও নথিপত্র ব্যবহার করে সরকারি জমির মালিকানা নেওয়া হয়েছিল।
দুদকের আইনজীবীরা আদালতে প্লট বরাদ্দ সংক্রান্ত সকল সরকারি নথি, জাল কাগজ ও নির্দেশনামা উপস্থাপন করেন। তাদের দাবি, পুরো প্রক্রিয়াই ছিল একটি সুপরিকল্পিত জালিয়াতি এবং প্রতিটি পদক্ষেপে ক্ষমতার অপব্যবহার হয়েছে।
রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীরা বলেন, উপস্থাপিত প্রমাণ ও সাক্ষ্যের আলোকে প্রধান আসামিদের বিরুদ্ধে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ঘোষণার সম্ভাবনা রয়েছে।
টিউলিপ সিদ্দিকের ভূমিকা
সাক্ষীদের জবানবন্দিতে উঠে আসে, মায়ের নামে প্লট বরাদ্দ নিশ্চিত করতে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রীর ওপর চাপ সৃষ্টি করেছিলেন টিউলিপ সিদ্দিক। এই কারণে নিজে প্লট না পেলেও মামলায় তাকে অন্যতম মূল আসামি বিবেচনা করছে দুদক। রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীরা জানিয়েছেন, রায় ঘোষণায় টিউলিপ সিদ্দিকের বিরুদ্ধেও একই ধরনের সর্বোচ্চ সাজা হতে পারে।
আসামি পক্ষের যুক্তি
মামলার একমাত্র গ্রেপ্তার আসামি, রাজউকের সাবেক কর্মকর্তা খুরশিদ আলমের আইনজীবীরা যুক্তি দেন—তিনি একজন সরকারি কর্মকর্তা হিসেবে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশ পালন ছাড়া উপায় ছিল না। তাই তাকে দায়ী করা অন্যায়।
রায় ঘোষণা
সবশেষে উভয়পক্ষের যুক্তিতর্ক শুনে বিচারক মো. রবিউল আলম আগামী ১ ডিসেম্বর রায় ঘোষণার দিন ধার্য করেন। উচ্চপ্রোফাইল রাজনৈতিক পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে হওয়ায় মামলাটি ইতোমধ্যেই দেশের রাজনৈতিক পরিমণ্ডলে বিশেষ গুরুত্ব পেয়েছে।
