শেখ হাসিনার মৃত্যুদণ্ড বাংলাদেশের ‘অভ্যন্তরীণ বিষয়’: পাকিস্তান
আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশ: ০২:১৯, ২২ নভেম্বর ২০২৫ | আপডেট: ০২:৩৭, ২২ নভেম্বর ২০২৫
তাহির আন্দ্রাবি ও শেখ হাসিনা। ছবি: ডন
জুলাই গণঅভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে হওয়া মৃত্যুদণ্ডাদেশকে বাংলাদেশের ‘অভ্যন্তরীণ বিষয়’ হিসেবে উল্লেখ করেছে পাকিস্তান। একইসঙ্গে ভারতের দিল্লিতে সাম্প্রতিক বিস্ফোরণের জেরে কাশ্মীরিদের ওপর ভারতীয় কর্তৃপক্ষের ‘নির্বিচারে দমন-পীড়নের’ও নিন্দা জানিয়েছে ইসলামাবাদ।
শেখ হাসিনার প্রত্যর্পণ ইস্যুতে ঢাকা–দিল্লি উত্তেজনার মাঝে শুক্রবার পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সাপ্তাহিক ব্রিফিংয়ে মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র তাহির আন্দ্রাবি এসব কথা বলেন।
তাহির আন্দ্রাবি বলেন, “বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে সদ্যঘোষিত মৃত্যুদণ্ডাদেশটি সম্পূর্ণভাবে বাংলাদেশের ‘অভ্যন্তরীণ বিষয়’ এবং এ বিষয়টি দেশটির জনগণ নিজেদের সাংবিধানিক ও গণতান্ত্রিক কাঠামোর মধ্যেই সমাধানে সক্ষম।”
পাকিস্তানের গণমাধ্যম ডন এবং জিও নিউজের প্রতিবেদন থেকে এসব তথ্য জানা গেছে। প্রতিবেদনে বলা হয়, সোমবার মাসব্যাপী বিচার প্রক্রিয়া শেষে ঢাকার একটি ট্রাইব্যুনাল শেখ হাসিনাকে মৃত্যুদণ্ড দেয়। অভিযোগ ছিল—গত বছরের ছাত্র-নেতৃত্বাধীন গণঅভ্যুত্থানের সময় প্রাণঘাতী দমন-পীড়নের নির্দেশ দিয়েছিলেন তিনি। তখন কয়েকশ বা তারও বেশি মানুষ নিহত হয়। ১৫ মাস আগে হঠাৎ পতনের পর শেখ হাসিনা ভারতে পালিয়ে যান।
আগামী ফেব্রুয়ারির শুরুর দিকে হতে যাওয়া জাতীয় নির্বাচনের আগে এ রায় বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে আলোড়ন তুলেছে বলেও প্রতিবেদনে বলা হয়েছ।
ডনের প্রতিবেদনে বলা হয়, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল—যে আদালত রায় ঘোষণা করেছে—তা মূলত শেখ হাসিনাই গঠন করেছিলেন ১৯৭১ সালের যুদ্ধাপরাধের বিচার করার জন্য। ১৯৭৫ সালের সামরিক অভ্যুত্থানের সময় ইউরোপে থাকায় তিনি প্রাণে বেঁচে যান এবং সেখান থেকেই তার নতুন রাজনৈতিক উত্তরণ শুরু।
এতে আরও বলা হয়েছ, রায় ঘোষণার পর ঢাকা দিল্লিকে জানায়—হাসিনাকে ফেরত না পাঠানো হবে ‘অমিত্রসুলভ আচরণ’ এবং ‘ন্যায়বিচারের প্রতি অবমাননা’।প্রত্যর্পণ চুক্তি অনুসারে দিল্লির তাকে ফিরিয়ে দেওয়ার বাধ্যবাধকতা রয়েছে বলেও দাবি করে ঢাকা।
ডনের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যদিও এখন পর্যন্ত দিল্লিকে রাজি করাতে সফল হয়নি ঢাকা। ভারত জানিয়েছে, তারা বাংলাদেশের জনগণের “শান্তি, গণতন্ত্র, স্থিতিশীলতা ও অন্তর্ভুক্তির সর্বোত্তম স্বার্থ রক্ষায় প্রতিশ্রুতিবদ্ধ” এবং সব পক্ষের সঙ্গে গঠনমূলকভাবে সম্পৃক্ত থাকবে।
এতে আরও বলা হয়, এ পরিস্থিতি এমন সময়ে তৈরি হলো, যখন সাম্প্রতিক বছরগুলোতে পাকিস্তান–বাংলাদেশ সম্পর্ক উষ্ণতার নতুন পর্যায়ে প্রবেশ করছিল এবং দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যও বাড়তে শুরু করেছিল।
কাশ্মীর ইস্যুতে পাকিস্তানের নতুন বিবৃতি
দিল্লিতে সাম্প্রতিক বোমা বিস্ফোরণের পর ভারত অধিকৃত জম্মু–কাশ্মীরে কাশ্মীরিদের নির্বিচারে গ্রেপ্তার ও আটকে অভিযান চালানো হচ্ছে বলে একই দিনে অভিযোগ তুলেছে পাকিস্তান।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র আন্দ্রাবি বলেন, “ভারত অধিকৃত কাশ্মীরে ব্যাপক আটক, নির্বিচারে গ্রেপ্তার এবং মৌলিক স্বাধীনতার ওপর কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করা হচ্ছে। এটি মূলত কাশ্মীরি জনগণের ওপর সমষ্টিগত শাস্তি।”
পরিচয় ও ধর্মের ভিত্তিতে কাশ্মীরি যুবকদের ‘প্রোফাইলিংয়ের’ ঘটনাও উদ্বেগজনক বলে উল্লেখ করেন তিনি।
পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে বলা হয়, ভারত কাশ্মীরের জনসংখ্যাগত কাঠামো পরিবর্তন করতে চাচ্ছে, ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ধ্বংসের চেষ্টা চলছে, হাজারো কাশ্মীরি যুবক নিখোঁজ, বহু রাজনৈতিক প্রতিনিধি বন্দি অবস্থায় আছেন।
আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়, জাতিসংঘ, মানবাধিকার কাউন্সিল এবং জাতিসংঘের মানবাধিকার হাইকমিশনারকে পরিস্থিতি জরুরি ভিত্তিতে বিবেচনার আহ্বান জানিয়েছে পাকিস্তান।
বিবৃতিতে বলা হয়, “জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের প্রস্তাব ও কাশ্মীরি জনগণের আকাঙ্ক্ষার ভিত্তিতে একটি ন্যায়সঙ্গত, শান্তিপূর্ণ ও স্থায়ী সমাধান দক্ষিণ এশিয়ায় স্থায়ী শান্তির পূর্বশর্ত।”
