সেন্টমার্টিনের পথে তিন জাহাজে ১২শ পর্যটক
কক্সবাজার প্রতিনিধি
প্রকাশ: ১০:৩৭, ১ ডিসেম্বর ২০২৫
প্রতীক্ষার অবসান ঘটিয়ে অবশেষে কক্সবাজার থেকে তিনটি যাত্রীবাহী জাহাজ দেশের জনপ্রিয় পর্যটন গন্তব্য প্রবালদ্বীপ সেন্টমার্টিনের উদ্দেশে ছেড়ে গেছে।
সোমবার (১ ডিসেম্বর) সকাল ৭টা ১৫ মিনিটে কক্সবাজার শহরের নুনিয়ারছড়া বিআইডব্লিউটিএ ঘাট থেকে জাহাজগুলো রওনা দেয়। চলতি পর্যটন মৌসুমে কক্সবাজার–সেন্টমার্টিন রুটে এটি প্রথম যাত্রা, যেখানে অংশ নিয়েছেন প্রায় ১২শ পর্যটক।
ভোর থেকেই এমভি কর্ণফুলী এক্সপ্রেস, এমভি বার আউলিয়া ও কেয়ারি সিন্দাবাদ জাহাজে চড়তে দেশের নানা প্রান্ত থেকে ঘাটে ভিড় করতে থাকেন যাত্রীরা। টিকিট প্রদর্শনের পর যাত্রীরা জাহাজে উঠতে থাকলে প্রশাসনের পক্ষ থেকে সবাইকে উপহার হিসেবে দেওয়া হয় পরিবেশবান্ধব পানির বোতল।
ঢাকা থেকে আসা পর্যটক অরূপ হোসেন বলেন, “প্রথমবারের মতো সেন্টমার্টিন যাচ্ছি। রোমাঞ্চ লাগছে খুব। প্রশাসনের উদ্যোগও প্রশংসনীয়—আশা করি সময়টা অসাধারণ কাটবে।”
সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী প্রতিদিন সর্বোচ্চ দুই হাজার পর্যটক সেন্টমার্টিনে যেতে পারবেন। অনুমোদন পাওয়া জাহাজগুলোর টিকিট নিতে হবে বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ডের স্বীকৃত অনলাইন প্ল্যাটফর্ম থেকে। প্রতিটি টিকিটে ট্রাভেল পাস ও কিউআর কোড থাকবে; কোড ছাড়া টিকিটকে নকল বলে গণ্য করা হবে।
সি ক্রুজ অপারেটর ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সাধারণ সম্পাদক হোসাইন ইসলাম বাহাদুর জানান, মোট ছয়টি জাহাজ অনুমতি পেলেও চাহিদা অনুযায়ী আজ তিনটি জাহাজ যাত্রা করেছে। জোয়ার-ভাটা ও নাব্যতা বিবেচনায় প্রতিদিনের যাত্রাসূচি নির্ধারণ করা হয়েছে। সেন্টমার্টিনে পৌঁছে জাহাজগুলো বিকেলের দিকে কক্সবাজারে ফিরবে।
চট্টগ্রাম থেকে আসা পর্যটক রোকসানা আলী বলেন, “আগে টেকনাফ থেকে দ্রুত যাওয়া যেত। এখন কক্সবাজার থেকে সমুদ্রপথে যাত্রা বেশ দীর্ঘ—কিছুটা ক্লান্তিকর। তারপরও সেন্টমার্টিনের শান্ত প্রকৃতি সব কষ্ট ভুলিয়ে দেবে।”
ঘাটে প্রবেশের সময় তল্লাশি চলছে। সমুদ্রপথ ও দ্বীপে নিরাপত্তায় ট্যুরিস্ট পুলিশ নিয়োজিত। কক্সবাজার রিজিয়নের প্রধান অতিরিক্ত ডিআইজি আপেল মাহমুদ বলেন, “পর্যটকরা যাতে নির্বিঘ্নে যাত্রা উপভোগ করতে পারেন, সেজন্য সমুদ্র ও দ্বীপ—দুই জায়গাতেই আমরা নিরাপত্তা দিচ্ছি।”
সেন্টমার্টিনের জীববৈচিত্র্য রক্ষায় গত অক্টোবরে ১২টি নির্দেশনা জারি করেছে সরকার।
দ্বীপের পরিবেশ রক্ষায় রাতে সৈকতে আলো জ্বালানো, উচ্চ শব্দে অনুষ্ঠান, বারবিকিউ পার্টি, কেয়াবনে প্রবেশ, কেয়াফল সংগ্রহ ও ক্রয়-বিক্রয় এবং সামুদ্রিক কাছিম, পাখি, প্রবাল, রাজকাঁকড়া ও অন্যান্য জীববৈচিত্র্যের ক্ষতি পুরোপুরি নিষিদ্ধ।
সৈকতে মোটরসাইকেল, সি-বাইকসহ মোটরযান চলাচল বন্ধ এবং নিষিদ্ধ পলিথিন ও একবার ব্যবহার্য প্লাস্টিক ব্যবহারও নিরুৎসাহিত করা হয়েছে।
জেলা প্রশাসক আব্দুল মান্নান বলেন, “এই নির্দেশনা বাস্তবায়নে আমরা কঠোর। পর্যটক ও স্থানীয় সংশ্লিষ্টদের সহযোগিতা অত্যন্ত জরুরি।”
গত ১ নভেম্বর সেন্টমার্টিন পর্যটকদের জন্য উন্মুক্ত হলেও পুরো নভেম্বর দ্বীপে রাত্রিযাপনের ওপর নিষেধাজ্ঞা ছিল। ফলে পর্যটকদের আগ্রহ কম থাকায় নভেম্বর মাসে কক্সবাজার থেকে কোনো জাহাজ সেন্টমার্টিন যায়নি।
