বৃহস্পতিবার, ২৮ আগস্ট ২০২৫

| ১২ ভাদ্র ১৪৩২

চরম গরম প্রাণঘাতী হয়ে উঠছে:  সাম্প্রতিক তাপপ্রবাহই তার প্রমাণ

সমাজকাল

প্রকাশ: ১৩:০৮, ৯ জুলাই ২০২৫

চরম গরম প্রাণঘাতী হয়ে উঠছে:  সাম্প্রতিক তাপপ্রবাহই তার প্রমাণ

চরম গরম প্রাণঘাতী হয়ে উঠছে:  সাম্প্রতিক তাপপ্রবাহই তার প্রমাণ । নতুন এক গবেষণায় বলা হয়েছে, বৈশ্বিক উষ্ণতার কারণে সম্প্রতি ইউরোপীয় তাপপ্রবাহে মৃত্যুর হার তিন গুণ বেড়েছে।

সমাজকাল ডেস্ক

চরম গরম একটি প্রাণঘাতী হুমকি।  মানুষের তৈরি জলবায়ু সংকট  তাপমাত্রাকে বিপজ্জনক হারে  বাড়িয়ে তুলছে, যার প্রভাবে প্রাণহাণী আগের চেয়ে বহুগুণ বেড়েছে।  নতুন এক গবেষণায় বলা হয়েছে, বৈশ্বিক উষ্ণতার কারণে সম্প্রতি ইউরোপীয় তাপপ্রবাহে মৃত্যুর হার তিন গুণ বেড়েছে।

সপ্তাহজুড়ে ইউরোপের বিভিন্ন স্থানে তাপমাত্রা ১০০ ডিগ্রি ফারেনহাইটের (প্রায় ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস) ওপরে চলে যায়। বিভিন্ন পর্যটনকেন্দ্র বন্ধ হয়ে যায়, একাধিক দেশে দাবানল ছড়িয়ে পড়ে, আর ইউরোপের মতো এলাকায় — যেখানে সাধারণত শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ (এসি) ব্যবস্থার প্রচলন কম — মানুষ অসহায় হয়ে পড়ে। ফলাফল ছিল ভয়াবহ। এক ‘র‍্যাপিড অ্যানালাইসিস স্টাডি’ অনুযায়ী, কয়েক হাজার মানুষ এ তাপপ্রবাহে প্রাণ হারিয়েছে।

গবেষণা ও ফলাফল

ইমপেরিয়াল কলেজ লন্ডনের নেতৃত্বে পরিচালিত একদল গবেষক ২৩ জুন থেকে ২ জুলাই পর্যন্ত ইউরোপের ১২টি শহরে (যেমন: লন্ডন, প্যারিস, অ্যাথেন্স, মাদ্রিদ ও রোম) ১০ দিনের চরম গরমের তথ্য বিশ্লেষণ করেছেন।

তারা ঐতিহাসিক আবহাওয়ার তথ্য ব্যবহার করে হিসাব করেছেন, যদি মানুষ জীবাশ্ম জ্বালানি না পোড়াত এবং পৃথিবী ১.৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস উত্তপ্ত না হতো, তাহলে ওই সময় তাপমাত্রা কতটা কম হতে পারত।

ফলাফল অনুযায়ী, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ইউরোপের ওই তাপপ্রবাহ ১ থেকে ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেশি উত্তপ্ত হয়েছে। এরপর তারা তাপমাত্রা ও দৈনিক মৃত্যুর হার নিয়ে পূর্বের গবেষণা ব্যবহার করে অনুমান করেন, এতে কতজনের মৃত্যু হয়েছে।

মৃত্যুর পরিসংখ্যান

গবেষকরা দেখেছেন, ওই ১০ দিনে ১২টি শহরে আনুমানিক ২,৩০০ জনের মৃত্যু হয়েছে, যার মধ্যে ১,৫০০ জনই এমন যাঁরা জলবায়ু পরিবর্তন না হলে বেঁচে থাকতে পারতেন। অর্থাৎ, ৬৫ শতাংশ মৃত্যুর জন্য দায়ী বৈশ্বিক উষ্ণতা।

গবেষকদের মতে, “তাপমাত্রা সামান্য ২ বা ৩ ডিগ্রি বেড়ে গেলেই মৃত্যু হঠাৎ করে বেড়ে যায়।” এছাড়া, তাপদাহ সবচেয়ে ভয়াবহ আঘাত হানে যাঁরা হার্টের রোগ, ডায়াবেটিস বা শ্বাস-প্রশ্বাসের সমস্যায় ভোগেন তাদের ওপর।

এই মৃত্যুর ৮৮ শতাংশই ছিল ৬৫ বছর বা তার বেশি বয়সীদের মধ্যে। তবে ২০ থেকে ৬৫ বছর বয়সীদের মধ্যেও প্রায় ২০০ জনের মৃত্যু হয়েছে। বিশেষ করে মাদ্রিদের মতো শহরে দেখা গেছে, মৃত্যুর প্রায় ৯০ শতাংশই জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ঘটেছে।

দৃষ্টির অগোচরে ধ্বংস

গবেষক বেন ক্লার্ক বলেন, “তাপপ্রবাহ দাবানল বা ঝড়ের মতো ধ্বংসের দৃশ্যমান চিহ্ন রাখে না। এর প্রভাব নিঃশব্দ কিন্তু মারাত্মক। মাত্র ২ বা ৩ ডিগ্রির পার্থক্যই হাজার হাজার মানুষের জন্য জীবন-মৃত্যুর ব্যবধান তৈরি করে।”

কী করণীয়?

ইমপেরিয়াল কলেজের জলবায়ু বিজ্ঞানী ফ্রিডেরিকে ওটো বলেন, “তাপপ্রবাহকে আরও ভয়াবহ হওয়া থেকে রোধ করতে হলে আমাদের জীবাশ্ম জ্বালানি পোড়ানো বন্ধ করতে হবে। আমাদের শহরগুলোকে চরম গরম সহনশীলভাবে তৈরি করতে হবে এবং দরিদ্র ও ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠীকে রক্ষা করতে হবে — এটিই এখন সবচেয়ে জরুরি।”

ইউনিভার্সিটি অফ রিডিংয়ের গবেষক অক্ষয় দেওরাস বলেন, “এই গবেষণায় ব্যবহৃত নির্ভরযোগ্য পদ্ধতি প্রমাণ করে যে, জলবায়ু পরিবর্তন ইতোমধ্যেই ইউরোপে প্রাণঘাতী হয়ে উঠেছে।”

একই বিশ্ববিদ্যালয়ের জলবায়ুবিদ রিচার্ড অ্যালান যোগ করেন, “এই গবেষণা আরও প্রমাণ দেয়, জলবায়ু পরিবর্তন তাপপ্রবাহকে আরও তীব্র করে তুলছে। এখন মাঝারি মাত্রার গরমও বিপজ্জনক হয়ে উঠছে, আর রেকর্ড গরম হয়ে উঠছে নজিরবিহীন।”

তিনি আরও বলেন, “এটা শুধু গরম নয়, বরং একটি অঞ্চলে যখন প্রচণ্ড গরম ও দাবানল ছড়িয়ে পড়ে, তখন বিশ্বের অন্যপ্রান্তে ভারী বৃষ্টি ও ভয়াবহ বন্যা দেখা দেয়।”

(উদাহরণ: টেক্সাসের সাম্প্রতিক বন্যা)।

আরও পড়ুন

শীর্ষ সংবাদ: