৪৫০০ বছর আগের মমির হাড়
সমাজকাল
প্রকাশ: ১৭:১৩, ৪ জুলাই ২০২৫

৪৫০০ বছর আগের মমির হাড়, মিললো প্রমাণ, মেসোপটেমিয়ার রক্ত বইছে প্রাচীন মিশরে!
সমাজকাল ডেস্ক :
একজন প্রাচীন মিশরীয়ের হাড় থেকে প্রাপ্ত ডিএনএ-পরীক্ষা প্রমাণ করলো, তার এক-পঞ্চমাংশ পূর্বপুরুষ এসেছিলেন আজকের ইরাকের মেসোপটেমিয়া অঞ্চল থেকে। এই আবিষ্কার ইতিহাসবিদদের কাছে ঐতিহাসিক সত্যকে রঙিন করে তুলেছে – যা এতদিন শুধু অনুমানের উপর দাঁড়িয়ে ছিল।
৪৫০০ বছর আগে দক্ষিণ মিশরের নুয়ারায়ত গ্রামে বসবাস করা এই মানুষটি ছিলেন একজন পেশাদার কুমার (পটারি শিল্পী)। তিনি মৃত্যুকালে প্রায় ৬০ বছর বয়সী ছিলেন এবং তাঁকে মাটির তৈরি একটি কফিনে সমাহিত করা হয়েছিল।
ইতিহাসের নতুন অধ্যায়: মিশর ও মেসোপটেমিয়ার সংযোগ
লন্ডনের ফ্রান্সিস ক্রিক ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক পন্টাস স্কোগলুন্ড জানান,“প্রাচীন ডিএনএ বিশ্লেষণ ইতিহাসকে নতুন দৃষ্টিতে উপস্থাপন করছে। এতে শুধু রাজা-রাজড়াদের নয়, সাধারণ মানুষের জীবনকাহিনিও উন্মোচিত হচ্ছে।”
ডিএনএ নেওয়া হয়েছিল মৃত ব্যক্তির কানের ভেতরের হাড় থেকে। এত বছর পরে সেই হাড় থেকে পূর্ণাঙ্গ জিনগত তথ্য পাওয়া একটি বিরল ঘটনা। গবেষণাটি পরিচালনা করেছে Liverpool John Moores University এবং World Museum Liverpool।
এই ব্যক্তি যে সত্যিকার অর্থেই মিশরেই বেড়ে উঠেছেন, তা নিশ্চিত করেছেন গবেষকরা তাঁর দাঁতের রাসায়নিক বিশ্লেষণের মাধ্যমে। কিন্তু তাঁর পূর্বপুরুষদের একাংশ এসেছিলেন আজকের ইরাক, সিরিয়া বা মেসোপটেমিয়া অঞ্চল থেকে – যেখানে সেই সময়ে গড়ে উঠছিল পৃথিবীর প্রথম নগরসভ্যতা।
কুমারের জীবনকাহিনি ফুটে উঠছে হাড়ে হাড়ে
অধ্যাপক জোয়েল আইরিশ জানান,“তিনি সারাজীবন কঠোর পরিশ্রম করেছেন। তাঁর হাড়ে রয়েছে বসে কাজ করার স্পষ্ট চিহ্ন, পিঠ বাঁকিয়ে পাত্র বানানোর অভ্যাস, ভারি বস্তু বহনের চিহ্ন এবং কাঁধ ও বাহুতে অতিরিক্ত পেশির ছাপ।”
যারা কুমার ছিলেন, তাদের মতো করে তিনি মাটির পাত্র বানাতেন, সম্ভবত ঘূর্ণায়মান চাকায়। এটি নিশ্চিত করেছেন একটি সমসাময়িক সমাধির চিত্রলিপির (pictogram) বিশ্লেষণ করে গবেষকরা।
মিশরীয় সভ্যতা গঠনে ভূমিকা রেখেছিল পশ্চিম এশিয়া?
গবেষক অ্যাডেলিন মোরেজ জ্যাকবস বলেন,“এটাই প্রথমবারের মতো প্রমাণ হলো যে, প্রাচীন মিশর ও মেসোপটেমিয়ার মধ্যে বাস্তব জনগোষ্ঠীর স্থানান্তর ঘটেছিল – শুধু সংস্কৃতি নয়, রক্তেরও বিনিময় হয়েছিল।”
পুরাতত্ত্ববিদদের মতে, এই সংযোগ হয়তো সেই সময়ে মিশরে কৃষি, পশুপালন ও লেখার প্রাথমিক ধারণা ছড়িয়ে দিতে সহায়ক ছিল।
বিস্ময়কর এক বেঁচে যাওয়া
এই কঙ্কালটি ১৯০২ সালে খনন করে সংগ্রহে রাখা হয় World Museum Liverpool-এ। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় লিভারপুল শহরে বোমা হামলায় বেশিরভাগ কঙ্কাল ধ্বংস হলেও এই নমুনাটি অলৌকিকভাবে রক্ষা পায়।
এই গবেষণা শুধু একটি মানুষের নয়, বরং পুরো প্রাচীন সভ্যতার গঠন ও বিকাশকে নতুন করে ব্যাখ্যা করছে। লেখনী, কৃষি ও সংস্কৃতির যে ধারাকে আমরা আলাদাভাবে চিনতাম, তা আসলে হাজার কিলোমিটার দূরের জনপদের মিলিত রক্তে গাঁথা।
সূত্র: বিবিসি