বৃহস্পতিবার, ২৮ আগস্ট ২০২৫

| ১২ ভাদ্র ১৪৩২

বিশ্বের বড় মঙ্গলের পাথর ৪ মিলিয়ন ডলারে নিলামে উঠতে পারে

সমাজকাল

প্রকাশ: ১৯:৪২, ৪ জুলাই ২০২৫

বিশ্বের বড় মঙ্গলের পাথর ৪ মিলিয়ন ডলারে নিলামে উঠতে পারে

সমাজকাল ডেস্ক বিশ্বের বড় মঙ্গলের পাথর ৪ মিলিয়ন ডলারে নিলামে উঠতে পারে, একটি উল্কাপিণ্ড, যা পৃথিবীতে আবিষ্কৃত মঙ্গলের সবচেয়ে বড় খণ্ড, চলতি মাসের শেষে নিলামে উঠতে যাচ্ছে এবং এটি থেকে ৪ মিলিয়ন ডলার পর্যন্ত পাওয়া যেতে পারে বলে আশা করা হচ্ছে। NWA 16788 নামে পরিচিত এই উল্কাপিণ্ডটির ওজন ৫৪ পাউন্ড (২৪.৫ কিলোগ্রাম), যা সাধারণ মঙ্গলীয় উল্কাপিণ্ডগুলোর তুলনায় অনেক বেশি। কারণ, বেশিরভাগ মঙ্গলীয় উল্কাপিণ্ডই ছোট টুকরো আকারে থাকে — এমনটাই জানিয়েছে নিলাম প্রতিষ্ঠান সথেবিস । উল্কাপিণ্ড হচ্ছে ধূমকেতু, গ্রহাণু বা উল্কা যখন পৃথিবীর বায়ুমণ্ডল ভেদ করে টিকে থাকে এবং মাটিতে পতিত হয় তখন তার যে অংশটুকু রয়ে যায়। ২০২৩ সালের নভেম্বরে নাইজারের দুর্গম আগাডেজ অঞ্চলে আবিষ্কৃত এই NWA 16788 উল্কাপিণ্ডটি সথেবিস-এর ভাষায় “একটি স্মরণীয় আবিষ্কার।” এটি এখন পর্যন্ত আবিষ্কৃত পৃথিবীর মাটিতে পাওয়া সবচেয়ে বড় মঙ্গলীয় খণ্ড এবং এর পরবর্তী বড় খণ্ডটির চেয়ে প্রায় ৭০% বড়। এছাড়াও, এটি একান্তই বিরল; কারণ এখন পর্যন্ত পৃথিবীতে মাত্র প্রায় ৪০০টি মঙ্গলীয় উল্কাপিণ্ড পাওয়া গেছে। সথেবিস-এর বিজ্ঞান ও প্রাকৃতিক ইতিহাস বিভাগের ভাইস চেয়ারম্যান ক্যাসান্দ্রা হ্যাটন এক বিবৃতিতে বলেন, “NWA 16788 একটি অসাধারণ আবিষ্কার — পৃথিবীতে পাওয়া সবচেয়ে বড় মঙ্গলীয় উল্কাপিণ্ড এবং এ ধরণের মধ্যে সবচেয়ে মূল্যবান যা কখনো নিলামে উঠেছে।” তিনি আরও বলেন,“সময় ও মহাকাশের দীর্ঘ যাত্রায় ক্ষয়প্রাপ্ত এই পাথর তার বিশাল আকার ও অনন্য লাল রঙের জন্য বিশেষভাবে আলাদা। এটি এমন এক প্রজন্মে একবারই দেখা যায় এমন আবিষ্কার, যা আমাদেরকে মঙ্গল গ্রহের সঙ্গে এক ছোঁয়াযোগ্য সংযোগ দেয় — এমন এক জগৎ, যা যুগ যুগ ধরে মানব কল্পনার অনুপ্রেরণা।” এই উল্কাপিণ্ডের অভ্যন্তরীণ গঠন বিশ্লেষণ করে বিজ্ঞানীরা ধারণা করছেন, এটি মঙ্গলগ্রহের পৃষ্ঠ থেকে উৎক্ষেপিত হয়েছিল একটি গ্রহাণু আঘাতের ফলে। সেই সংঘর্ষ এতটাই প্রবল ছিল যে, উল্কাটির কিছু অংশ কাচে রূপান্তরিত হয়ে যায়। সথেবিস জানায়, যখন এই খণ্ডটি পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে প্রবেশ করে, তখন তার বাইরের অংশে একটি কাচের আবরণ তৈরি হয়, যা এখনও এর পৃষ্ঠে দৃশ্যমান। বিতর্ক এবং বিজ্ঞানীদের মতবিরোধ: এমন একটি দুর্লভ ও গুরুত্বপূর্ণ উল্কাপিণ্ডকে বিক্রি করার পরিবর্তে বিজ্ঞান গবেষণার জন্য দান করা উচিত ছিল বলে মনে করেন অনেকে। এডিনবরার ইউনিভার্সিটি-র জীবাশ্মবিদ ও বিবর্তন বিশেষজ্ঞ স্টিভ ব্রুসাট সিএনএন-কে বলেন,“এই পাথর যদি কোনো ধনকুবেরের ভল্টে হারিয়ে যায়, তাহলে তা হবে অত্যন্ত দুঃখজনক। এটি একটি জাদুঘরে থাকা উচিত — যেখানে বিজ্ঞানীরা গবেষণা করতে পারবেন, আর সাধারণ মানুষ, বিশেষ করে শিশু ও পরিবারগুলো উপভোগ করতে পারবে।” তবে লেস্টার ইউনিভার্সিটির স্পেস ইন্সটিটিউটের প্ল্যানেটারি সায়েন্টিস্ট জুলিয়া কার্টরাইট বিষয়টি একটু ভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে দেখেন। তিনি বলেন,“উল্কাপিণ্ড খোঁজা, সংগ্রহ ও বিক্রির বাজার না থাকলে আমাদের সংগ্রহশালায় এত বেশি নমুনা থাকত না — আর এটাই বিজ্ঞানের অগ্রগতিকে চালনা করে।” তিনি এটিকে গবেষকদের ও সংগ্রাহকদের মাঝে একটি “সহবাসমূলক সম্পর্ক” হিসেবে বর্ণনা করেন। “যদি নমুনাগুলো খুঁজে না পাওয়া যেত, তাহলে আমাদের গবেষণার জন্য তেমন কিছু থাকত না, ফলে আমাদের জানার পরিমাণও এতটা হতো না।” কার্টরাইট বলেন, যদিও তিনি চাইতেন এই “অসাধারণ পাথরটি” গবেষণা বা জনসাধারণের প্রদর্শনীর জন্য ব্যবহৃত হোক, তবুও আশার কথা হলো—এই উল্কাপিণ্ডের একটি নমুনা চীনের পার্পল মাউন্টেন অবজারভেটরিতে সংরক্ষিত রয়েছে। তিনি আরও বলেন,“আমরা জানি না এই পাথর শেষ পর্যন্ত কোথায় যাবে। তবে আমি বিশ্বাস করি, বৈজ্ঞানিক আগ্রহ এতে থেকেই যাবে, আর হয়তো নতুন মালিকও এর থেকে কিছু শেখার আগ্রহ দেখাতে পারেন — ফলে আমরা এ থেকেই অনেক বৈজ্ঞানিক তথ্য পেতে পারি।” উল্লেখ্য, এর আগে ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে, একটি মঙ্গলীয় উল্কাপিণ্ড যার মধ্যে মঙ্গলের বায়ুমণ্ডল সংরক্ষিত ছিল, ক্রিস্টিজ নিলামে উঠেছিল। এর প্রাক্কলিত দাম ছিল ৩০,০০০–৫০,০০০ ডলার। কিন্তু এটি শেষ পর্যন্ত ২০০,০০০ ডলারে বিক্রি হয়। রিপোর্ট : সিএনএন অনুবাদ : সমাজকাল

আরও পড়ুন

শীর্ষ সংবাদ: