কোরআনে যাদের সফল বলা হয়েছে
সমাজকাল ডেস্ক
প্রকাশ: ২১:৫৬, ১৬ আগস্ট ২০২৫

মানুষের জীবনের সাফল্যকে আমরা সাধারণত দুনিয়ার সীমিত সুখ-স্বাচ্ছন্দ, পদ-পদবি বা ধন-সম্পদের প্রাচুর্যের মাধ্যমে বিচার করি। অথচ কোরআনের দৃষ্টিতে এগুলোই প্রকৃত সাফল্যের মানদণ্ড নয়। কোরআন মানুষকে শিখিয়েছে দুনিয়ার জীবন ক্ষণস্থায়ী, আর আখেরাতের জীবনই চিরস্থায়ী। তাই যে ব্যক্তি দুনিয়ায় আল্লাহর নির্দেশ মেনে চলবে, ইমান ও সৎকর্মে অবিচল থাকবে এবং পাপ থেকে বেঁচে থাকবে, প্রকৃত সফলতা তারই জন্য সংরক্ষিত।
কোরআন স্পষ্ট ঘোষণা দিয়েছে, ‘যে জাহান্নাম থেকে রক্ষা পেল এবং জান্নাতে প্রবেশ করলে, সেই প্রকৃত সফল।’ এই সফলতার পথে রয়েছে আল্লাহ ও রাসুলের আনুগত্য, ইবাদত করা, ধৈর্য ও সত্যের পথে অবিচল থাকা, আত্মশুদ্ধি অর্জন এবং সমাজে সৎকাজের আদেশ ও অসৎকাজের নিষেধ। আল্লাহতায়ালা কোরআনে বারবার মুমিনদের সফলতার সংবাদ দিয়েছেন, যেখানে জান্নাতের অনন্ত সুখ, নির্মল নদী, সবুজে ঘেরা উদ্যান ও অনন্য মর্যাদা তাদের জন্য অপেক্ষমাণ। একজন মুমিনের দৃষ্টি কেবল দুনিয়ার সাময়িক লাভের দিকে নয়, বরং আখেরাতের চিরস্থায়ী মুক্তি ও আল্লাহর সন্তুষ্টির দিকে নিবদ্ধ থাকা উচিত। মহান আল্লাহ পবিত্র কোরআনের বিভিন্ন আয়াতে সফলকাম মানুষের বর্ণনা দিয়েছেন। তাদের ব্যাপারে বিবরণী উল্লেখ করা হলো।
সৎকর্মপরায়নশীল : আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করা এবং সেই অনুযায়ী সৎকর্ম করা সফলতার প্রথম সোপান। কোরআনে বর্ণিত হয়েছে, ‘যারা অদৃশ্যের প্রতি ইমান আনে, নামাজ আদায় করে এবং আমি তাদের যে রিজিক দিয়েছি তা থেকে ব্যয় করে। আর যারা ইমান আনে তাতে, যা আপনার প্রতি নাজিল করা হয়েছে এবং যা আপনার আগে নাজিল করা হয়েছে। আর আখেরাতের প্রতি তারা পূর্ণ বিশ্বাস রাখে। তারা তাদের রবের পক্ষ থেকে হেদায়েতের ওপর রয়েছে এবং তারাই সফলকাম।’ (সুরা বাকারা ৩-৫) সৎকাজের গুরুত্ব বোঝাতে গিয়ে আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘যারা ইমান আনে ও সৎকর্ম করে, তাদের জন্য রয়েছে জান্নাত, যার তলদেশে প্রবাহিত হবে নহরসমূহ। সেখানে তারা চিরকাল অবস্থান করবে। এটাই মহা সাফল্য। (সুরা বুরুজ ১১-১২)
নামাজ প্রতিষ্ঠা ও আখেরাতে বিশ্বাস : আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘এগুলো প্রজ্ঞাপূর্ণ কিতাবের আয়াত, সৎকর্মশীলদের জন্য হেদায়েত ও রহমতস্বরূপ, যারা নামাজ প্রতিষ্ঠা করে এবং জাকাত দেয়, আর তারাই আখেরাতে দৃঢ় বিশ্বাস পোষণ করে, তারাই তাদের রবের পক্ষ থেকে হেদায়েতের ওপর এবং তারাই সফলকাম।’ (সুরা লুকমান ২-৫)
ধৈর্যধারণ করা : ধৈর্যের বিনিময়ে জান্নাতের কথা কোরআন মাজিদের বেশ কয়েকটি আয়াতে এসেছে। মূলত ধৈর্যের বড় একটি প্রকার হলো, ইবাদত-বন্দেগি যথাযথভাবে আদায় করার ড়্গেত্রে ধৈর্য। আরেক প্রকার হলো, গুনাহ থেকে বেঁচে থাকার ড়্গেত্রে ধৈর্য। ধৈর্যের তৃতীয় প্রকার হলো, বিপদাপদে ধৈর্য। মোটকথা আল্লাহতায়ালার নির্দেশ পালন ও নিষেধ থেকে বিরত থাকার জন্য ধৈর্যের গুণটি অপরিহার্য। ধৈর্য সম্পর্কে কোরআন মাজিদে বলা হয়েছে, ‘তোমাদের কাছে যা কিছু আছে তা নিঃশেষ হয়ে যাবে, আর আল্লাহর কাছে যা আছে তা স্থায়ী। যারা সবর করে আমি তাদের উৎকৃষ্ট কাজ অনুযায়ী অবশ্যই তাদের প্রতিদান দেব।’ (সুরা নাহল ৯৬) কিয়ামত দিবসের বিবরণ প্রসঙ্গে আল্লাহতায়ালা ইরশাদ করেন, ‘তারা যে সবর করেছিল সে কারণে আজ আমি তাদের এমন প্রতিদান দিলাম যে, তারা সফল হয়ে গেল।’ (সুরা মুমিনুন ১১১)
সত্যের পথে অবিচল থাকা : যেকোনো পরিস্থিতিতে ধৈর্যধারণ করা এবং সত্যের পথে অবিচল থাকা সফলতার জন্য অপরিহার্য। কোরআনে কারিমে বর্ণিত হয়েছে, ‘হে মুমিনরা! ধৈর্যধারণ করো, দৃঢ়তা প্রদর্শন করো, নিজেদের প্রতিরক্ষাকল্পে পারস্পরিক বন্ধন মজবুত করো এবং আল্লাহকে ভয় করো, যাতে তোমরা সফলকাম হতে পারো।’ (সুরা আলে ইমরান ২০০)
আত্মশুদ্ধি অর্জন : আল্লাহর ওই সমস্ত বান্দাই সফল ও কামিয়াব হবে, যারা নিজের অন্তরকে মন্দ চরিত্র ও শিরক থেকে পবিত্র করে আত্মশুদ্ধি অর্জন করবে। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘নিশ্চয় সাফল্য লাভ করবে সে, যে নিজেকে পরিশুদ্ধ করে।’ (সুরা আলা ১৪)
সৎকাজের আদেশ ও অসৎকাজে নিষেধ : সমাজের কোথাও অন্যায়-অপকর্ম হতে দেখলে অকারণে চুপ থাকা কোনো মুসলিমের জন্য বৈধ নয়। যথাসাধ্য সৎকাজের আদেশ দেওয়াও একজন মুসলিমের নৈতিক দায়িত্ব। এ ব্যাপারে শরিয়তে যথেষ্ট গুরুত্ব বর্ণনা করা হয়েছে। মহান আল্লাহ বলেন, ‘তোমরাই শ্রেষ্ঠ জাতি, মানুষের (কল্যাণের) জন্য তোমাদের বের হয়েছে, তোমরা সৎকাজের নির্দেশ দান করবে, অসৎকাজে বাধা প্রদান করবে এবং আল্লাহর প্রতি ইমান রাখবে। (সুরা আলে ইমরান ১১০)
আল্লাহ ও রাসুলের আনুগত্য : মহান আল্লাহ ও তার রাসুল (সা.)-এর আনুগত্য করা, তাদের দেখানো পথে জীবন পরিচালনা করা সফলতার পূর্বশর্ত। কোরআন মাজিদে ইরশাদ হয়েছে, ‘যে ব্যক্তি আল্লাহ ও তার রাসুলের আনুগত্য করবে, তিনি তাকে এমন জান্নাতে প্রবেশ করাবেন, যার তলদেশে নহরসমূহ প্রবাহিত। তারা তাতে থাকবে চিরদিন। আর এটাই মহা সফলতা। পক্ষান্তরে যে ব্যক্তি আল্লাহ ও তার রাসুলের অবাধ্যতা করবে এবং তার নির্ধারিত সীমালঙ্ঘন করবে, তিনি তাকে প্রবেশ করাবেন জাহান্নামে, যাতে সে সর্বদা থাকবে এবং তার জন্য থাকবে লাঞ্ছনাকর শাস্তি।’ (সুরা নিসা ১৩-১৪)