বৃহস্পতিবার, ২৮ আগস্ট ২০২৫

| ১২ ভাদ্র ১৪৩২

ইরানে আশুরা পালন করা  হয় যেভাবে

সমাজকাল

প্রকাশ: ০৭:৫১, ৬ জুলাই ২০২৫

ইরানে আশুরা পালন করা  হয় যেভাবে

ইরানে আশুরা পালন করা  হয় যেভাবে।ইরানে আশুরা উদযাপন একটি রাষ্ট্রীয় ও সামাজিক সমন্বিত রূপ পেয়েছে। 

সমাজকাল ডেস্ক

১০ মহররম কারবালার প্রান্তরে নবীজির দৌহিত্র হুসাইন (রা.) ও তার পরিবার-পরিজনের শাহাদাত মুসলমানদের হৃদয়ে গভীর শোকের আবহ সৃষ্টি করে। এই শোক ও স্মৃতিকে কেন্দ্র করে ইরানে আশুরা একটু বিভিন্নভাবে পালিত হয়। সুন্নি সমাজে আশুরা মূলত রোজা রাখা, দোয়া ও ইবাদতের মাধ্যমে পালন করা হলেও শিয়া সম্প্রদায়ের মধ্যে আশুরার রয়েছে স্বতন্ত্র ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক তাৎপর্য। শিয়াদের প্রধান আবাসভূমি ইরানে আশুরা পালনের রীতিনীতি শুধু ধর্মীয় নয়, বরং আদর্শিক ও রাজনৈতিক বার্তারও বাহক। ইরানে আশুরা উদযাপন একটি রাষ্ট্রীয় ও সামাজিক সমন্বিত রূপ পেয়েছে। একদিকে সরকারের নির্ধারিত গাইডলাইন অনুযায়ী উদযাপন হয়, অন্যদিকে অনেক অঞ্চলে ঐতিহ্যবাহী ও লোকজ রীতিনীতিও আশুরাকে ঘিরে পালন করা হয়। ফলে একই সঙ্গে সেখানে রাষ্ট্রীয় আনুষ্ঠানিকতা, ধর্মীয় আবেগ এবং সামাজিক বৈচিত্র্য, এই তিনটি ধারা বিদ্যমান। ইরানের ধর্মীয় নেতৃত্ব আশুরাকে প্রতিরোধ, আত্মত্যাগ ও বিপ্লবী চেতনার প্রতীক হিসেবে উপস্থাপন করে থাকে। অন্যদিকে বিভিন্ন অঞ্চল ও শ্রেণির মানুষ একে স্মরণ করেন নিজস্ব সংস্কৃতি, আবেগ ও ধর্মীয় বোধ অনুযায়ী। বর্তমান ইরানে আশুরা উদযাপন একদিকে যেমন রাষ্ট্রীয় মতাদর্শ ও ধর্মীয় কর্তৃত্বের বহিঃপ্রকাশ, অন্যদিকে তা জনগণের জীবন্ত বিশ্বাস, সংস্কৃতি ও আবেগেরও প্রতিচ্ছবি। রাষ্ট্রীয় অনুমোদনপ্রাপ্ত আয়োজন যেমন মধ্যবিত্ত সমাজে প্রভাব ফেলছে, তেমনি ঐতিহ্যবাহী রীতিনীতিও নিঃশব্দে টিকে আছে লোকসমাজে। এই দ্বৈত ধারা আশুরার উদযাপনকে ইরানে একটি অনন্য সংস্কৃতিমূলক ও আদর্শিক পরিসরে পরিণত করেছে, যা কেবল একটি ধর্মীয় দিন নয়, বরং জাতীয় ও রাজনৈতিক পরিচয়েরও অংশ হয়ে উঠেছে। রাষ্ট্রীয় আয়োজনে আশুরা  আশুরা ও আশুরার আচার-অনুষ্ঠান শিয়া মুসলিমদের কাছে সম্পূর্ন আবেগপূর্ণ একটি বিষয়। তাই ইরানে আশুরা উদযাপন গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করা হয়, কারণ আশুরাকে রাষ্ট্রের মতাদর্শের প্রেরণার মূল উৎস বলে মনে করা হয়। ইরানে রাষ্ট্রীয়ভাবে আশুরার কিছু অনুষ্ঠানকে সমর্থন ও প্রচার করা হয়, কিছু উপেক্ষা করা হয়, আবার কিছু রীতিনীতি নিষিদ্ধও করা হয়েছে। শিয়াদের ধারণা অনুযায়ী, রাসুল (সা.)-এর দৌহিত্র হুসাইন (রা.) ৬৮০ খ্রিস্টাব্দে আশুরার দিনে ন্যায়ের পক্ষে এক যুদ্ধে জড়ান। তিনি জানতেন যে তিনি ও তার অনুসারীরা শহীদ হবেন, কিন্তু ভবিষ্যৎ প্রজন্ম যেন তাদের আত্মত্যাগ থেকে শিক্ষা নিতে পারে, সেই উদ্দেশেই তিনি যুদ্ধ করেন। ইরানি সরকারের বর্ণনা অনুযায়ী, আশুরা মূলত প্রতিরোধ ও বীরত্বের প্রতীক। ইরানের প্রেসিডেন্ট রুহানি একবার বলেছিলেন, ‘আশুরার শিক্ষা হচ্ছে সংলাপ ও যুক্তির শিক্ষা’। কিছু ভিন্নমতাবলম্বী আলেম আশুরাকে সহনশীলতা ও শান্তির প্রতীক হিসেবে তুলে ধরতে চেয়েছেন। আনুষ্ঠানিক চিত্র : ইরানের আলেমরা আশুরাকে সরকারের নির্ধারিত গাইডলাইন অনুসরণ করে পালনের কথা বলেন। আশুরা উদযান উপলক্ষে অনেকে কালো পোশাক পরেন, বুকে ও মাথায় আঘাত করেন, একজন আলেম বক্তা আবেগঘন ভঙ্গিতে আশুরার গল্প বলেন, অনেক সময় অতিরঞ্জিত করে গল্প বলেন। শ্রোতারা তা শুনেন। ইরান সরকার অনুমোদিত আশুরা অনুষ্ঠানের মধ্যে আরেকটি চিত্র এমন রয়েছে, যেখানে মা-বাবারা তাদের শিশুকে নিয়ে আশুরার অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেন এবং হুসাইন (রা.)-এর শহীদ শিশুদের স্মরণ করেন। গ্রামীণ ও ঐতিহ্যবাহী রীতি : ইরানের বিভিন্ন অঞ্চলে বৈচিত্র্যময় ও ব্যতিক্রমধর্মী পদ্ধতিতে আশুরা পালিত হয়। যেমন শাহরে কুর্দে মোমবাতি নিয়ে পাহাড়ে প্রার্থনাযাত্রা, বিজার ও খোরামআবাদে গোলাপজল মেশানো কাদা মেখে মাতম, আর্দেবিলে পানি ভর্তি পাত্র বহন এবং খামেনি শাহরে বর্ণিল পোশাকে শিশুরা উৎসবে অংশ নেয়। রাষ্ট্রীয়ভাবে এসব রীতিকে তেমন গুরুত্ব দেওয়া হয় না। ফলে সাধারণ ইরানিদের অনেকে দেশের এই সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্যের বিষয়ে প্রায় জানেই না। আশুরা উপলক্ষে কারবালার ঘটনাকে স্মরণ করে নিজেকে আঘাত করে উদযাপনের দৃশ্য দেখা যায়। পূর্বে অনেক আলেম আশুরা পালনের এই রীতি সমর্থন করতেন। তবে বর্তমানে এসব রীতিকে উগ্রতা হিসেবে গণ্য করা হয়। এখন মাথায় ধারালো অস্ত্র দিয়ে আঘাত নিষিদ্ধ করা হয়েছে। ইরানের সর্বোচ্চ নেতাও ফতোয়া জারি করে একে হারাম ঘোষনা করেছেন।

আরও পড়ুন

শীর্ষ সংবাদ: