বৃহস্পতিবার, ২৮ আগস্ট ২০২৫

| ১২ ভাদ্র ১৪৩২

আশুরার দিন যেসব ঘটনা সংঘটিত হয়েছে

সমাজকাল

প্রকাশ: ০৭:২৩, ৬ জুলাই ২০২৫

আশুরার দিন যেসব ঘটনা সংঘটিত হয়েছে

আশুরার দিন যেসব ঘটনা সংঘটিত হয়েছে। অনেকেই আশুরা বলতে কেবল কারবালার মর্মান্তিক ঘটনাকে বুঝেন। এ ধারণা সঠিক নয়। বরং পৃথিবীর শুরুর যুগ থেকেই আশুরা তাৎপর্যপূর্ণ একটি দিন। এ দিন অনেক গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা সংঘটিত হয়েছে।   মাইসারা জান্নাত ইসলামি বর্ষপঞ্জির প্রথম মাস মহররম। এই মাসের দশম দিনকে বলা হয় আশুরা। আশুরা মানব ইতিহাসে একাধিক স্মরণীয় ও যুগান্তকারী ঘটনার দিন। ইসলামের ইতিহাসে আশুরার গুরুত্ব বহু প্রাচীন। অনেকে ভাবেন, আশুরা কেবল কারবালার শোকাবহ ঘটনার সঙ্গে সম্পৃক্ত। বাস্তবে এর তাৎপর্য অনেক বিস্তৃত এবং বহু ঐতিহাসিক ঘটনার সঙ্গে জড়িত। তবে এ দিনের সবচেয়ে হৃদয়বিদারক ঘটনা কারবালা ট্র্যাজেডি। প্রিয় নবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর দৌহিত্র হজরত হোসাইন (রা.) এবং তার পরিবার ও সাহচর্যপ্রাপ্তদের শাহাদত মুসলিম উম্মাহর ইতিহাসে গভীর শোক ও চেতনার আবেগ বয়ে আনে। পৃথিবীতে অনেক স্মরণীয় ও যুগান্তকারী ঘটনা আশুরার দিন ঘটেছিল। মহররম সংগ্রামী শিক্ষা এবং আত্মসচেতনতার মাস। মুসলমানদের ঐতিহ্যবাহী চেতনা খুঁজে পাওয়ার মাস। মহররম আসে দায়িত্ব পালনে সাহসিকতার পথপ্রদর্শক হিসেবে। আসে নির্ভীকভাবে পথচলার কল্যাণময় শুভবার্তা নিয়ে। মহররম আসে পুরনো বছরের জরাজীর্ণতাকে ধুয়ে-মুছে নতুন সাজে সজ্জিত করতে। এ মাস আসে আমাদের নতুন শপথ ও প্রত্যয় গ্রহণের অঙ্গীকার নিয়ে। মহররম মাস এলে মুসলিম বিশ্বে জেগে ওঠে ইসলামি সংস্কৃতি, এ মাসে বহু উল্লেখযোগ্য ও ইতিহাস প্রসিদ্ধ ঘটনা সংঘটিত হওয়ায় বিভিন্ন দিক দিয়ে এর গুরুত্ব অপরিসীম। আশুরার দিন সংঘটিত হওয়া কয়েকটি ঐতিহাসিক ঘটনা তুলে ধরা হলো। আশুরার দিন আকাশ-জমিন ও পাহাড়-পর্বত সবকিছু সৃষ্টি করা হয়। হজরত আদম (আ.)-কে সৃষ্টি এবং জান্নাতে প্রবেশ করানো হয়। হজরত আদম (আ.)-কে জান্নাত থেকে দুনিয়ায় পাঠানো এবং গুনাহ মার্জনার পর হাওয়া (আ.)-এর সঙ্গে আরাফাতের ময়দানে জাবালে রহমতে তার পুনরায় সাক্ষাৎ লাভ হয়। হজরত নুহ (আ.) মহাপ্লাবন শেষে জুদি পাহাড়ে অবতরণ করেন। হজরত ইব্রাহিম (আ.) নমরুদের প্রজ্জ্বলিত অগ্নিকুণ্ড থেকে মুক্তি লাভ করেন। দীর্ঘ ১৮ বছর রোগ ভোগের পর হজরত আইয়ুব (আ.) দুরারোগ্য ব্যাধি থেকে মুক্তি লাভ করেন। আশুরার দিন হজরত সুলাইমান (আ.)-কে পৃথিবীর একচ্ছত্র রাজত্বদান করা হয়। হজরত সুলায়মান (আ.)-কে হারানো বাদশাহী ফিরিয়ে দেওয়া হয়। হজরত ইউনুস (আ.)-কে ৪০ দিন পর দজলা নদিতে মাছের পেট থেকে উদ্ধার করা হয়। হজরত মুসা (আ.) ফেরাউনের কবল থেকে রক্ষা পান। হজরত ঈসা (আ.)-এর পৃথিবীতে আগমন এবং জীবিত অবস্থায় আসমানে উত্তোলন। হজরত দাউদ (আ.)-কে বিশেষ সম্মানে ভূষিত করা হয়। হজরত ইয়াকুব (আ.)-এর হারানো পুত্র হজরত ইউসুফ (আ.)-এর সঙ্গে সাক্ষাৎ লাভ। প্রিয় নবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) মক্কা থেকে হিজরত করতে মদিনায় যান। হজরত ইমাম হোসাইন (রা.) এবং তার ৭৭ ঘনিষ্ঠজন স্বৈরশাসক ইয়াজিদের সৈন্যের মাধ্যমে কারবালা প্রান্তরে নির্মমভাবে শাহাদতবরণ করেন। (ফাতহুল বারী ৪/২৯১) অনেকে ‘আশুরা’ বলতে কারবালার ঘটনাই বোঝেন। যদিও ইসলামে আশুরার রোজা কিংবা ফজিলতের সঙ্গে কারবালার ঘটনার কোনো সম্পর্ক নেই। তবে ঐতিহাসিক ঘটনা হিসেবে কারবালার ঘটনা পর্যালোচনা করা আমাদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। মুসলিম উম্মাহর জন্য এ ঘটনা অত্যন্ত বেদনাদায়ক। এখান থেকে শিক্ষণীয় অনেকবিষয় রয়েছে। হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর ইন্তেকালের ৫০ বছর পর ৬১ হিজরি সালের মহররম মাসের ১০ তারিখ শুক্রবার ইরাকের কারবালা নামক স্থানে তারই উম্মতের কিছু মানুষের হাতে নির্মমভাবে শহীদ হন প্রিয়তম দৌহিত্র হজরত হোসাইন (রা.)। এ ঘটনা মুসলিম উম্মাহর মধ্যে সৃষ্টি করেছে বিভক্তি ও বিভ্রান্তি। অনেক মিথ্যা ও ভিত্তিহীন কাহিনী এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে মুসলিম উম্মাহর মধ্যে ছড়ানো হয়েছে। এসব বিষয়ে আমাদের সতর্ক থাকা প্রয়োজন। অনেকেই আশুরা বলতে কেবল কারবালার মর্মান্তিক ঘটনাকে বুঝেন। এ ধারণা সঠিক নয়। বরং পৃথিবীর শুরুর যুগ থেকেই আশুরা তাৎপর্যপূর্ণ একটি দিন। এ দিন অনেক গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা সংঘটিত হয়েছে।  

আরও পড়ুন

শীর্ষ সংবাদ: