ঈদুল আজহায় গুরুত্বপূর্ণ চার কাজ
প্রকাশ: ১৩:০৭, ৭ জুন ২০২৫
ঈদুল আজহায় গুরুত্বপূর্ণ চার কাজ রয়েছে। প্রতি বছর জিলহজ মাসের দশম দিনে বিশ্বের কোটি কোটি মুসলমান উদযাপন করে পবিত্র ঈদুল আজহা, যা ইসলামের অন্যতম প্রধান ধর্মীয় উৎসব। এই দিনটি শুধু আনন্দ-খুশির নয়, বরং ত্যাগ, তাকওয়া ও আত্মশুদ্ধির এক অনন্য শিক্ষার দিন।
মাইসারা জান্নাত
প্রতি বছর জিলহজ মাসের দশম দিনে বিশ্বের কোটি কোটি মুসলমান উদযাপন করে পবিত্র ঈদুল আজহা, যা ইসলামের অন্যতম প্রধান ধর্মীয় উৎসব। এই দিনটি শুধু আনন্দ-খুশির নয়, বরং ত্যাগ, তাকওয়া ও আত্মশুদ্ধির এক অনন্য শিক্ষার দিন। ঈদুল আজহার মূল শিক্ষা নিহিত রয়েছে কোরবানির মধ্য দিয়ে নিজের ভেতরের পশুত্ব, স্বার্থপরতা ও অহংকারকে বিসর্জন দিয়ে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের চেষ্টা করার মধ্যে। আর এই উপলক্ষেই প্রতিবছর হজের পবিত্র আহ্বানে সাড়া দিয়ে বিশ্ব জুড়ে লাখো মুসলমান পাড়ি জমান মক্কায়। যারা হজ পালন করেন, তাদের ঈদুল আজহা হয়ে উঠে আরো তাৎপর্যময়।
ঈদুল আজহা বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ আনুষ্ঠানিকতায় পরিপূর্ণ। এর মধ্যে প্রধান চারটি কাজ হলো তাকবির, ঈদের নামাজ, কোরবানি ও আনন্দ ভাগাভাগি। প্রতিটি অনুষঙ্গেই নিহিত রয়েছে গভীর অর্থ, ইসলামি সংস্কৃতি ও রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর সুন্নাহর অনুসরণ। এগুলো সম্পর্কে বিস্তারিত বিবরণী উল্লেখ করা হলো।
তাকবির : ঈদুল আজহার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ রীতি হলো তাকবির। জিলহজের ৯ তারিখ ফজরের নামাজ থেকে শুরু করে ১৩ তারিখ আসর পর্যন্ত প্রতিটি ফরজ নামাজের পর উচ্চ কণ্ঠে তাকবির পাঠ করা সুন্নত। তাকবির হলো, ‘আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু, আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার, ওয়া লিল্লাহিল হামদ।’ এর মাধ্যমে মুসলমানরা আল্লাহর মহিমা ঘোষণা করেন এবং তার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। এই ধ্বনি ঈদের আবহকে আত্মিকভাবে জাগ্রত করে, পরিবেশকে করে উদ্দীপ্ত।
ঈদের নামাজ : ঈদুল আজহার সকালে মুসলমানরা সমবেত হন ঈদের নামাজ আদায়ের জন্য। ঈদের নামাজ দুই রাকাত, যাতে প্রতি রাকাতে অতিরিক্ত তিনটি করে তাকবির দেওয়া হয়। এতে আজান কিংবা ইকামতের প্রয়োজন নেই। নামাজের পর খুতবা দেওয়া সুন্নত, যা শোনা মুস্তাহাব। তবে খুতবা শুরু হয়ে গেলে তা উপস্থিত মুসল্লিদের জন্য শোনা ওয়াজিব। ইচ্ছাকৃতভাবে খুতবা ছেড়ে দেওয়া গুনাহ। তবে এর কারণে ঈদের নামাজে কোনো কমতি হবে না। (দুররুল মুখতার ২/১৬৬)
রাসুল (সা.)-এর আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ সুন্নত হলো, নামাজে যাওয়ার সময় এক রাস্তা দিয়ে যাওয়া এবং ফেরার সময় অন্য রাস্তা দিয়ে ফেরা। এতে সমাজে ঈদের বার্তা ছড়িয়ে পড়ে এবং বেশি সংখ্যক মানুষের সঙ্গে সাক্ষাৎ সম্ভব হয়।
কোরবানি : ঈদুল আজহার মূল ইবাদত হলো কোরবানি। উট, গরু, ছাগল, ভেড়া, দুম্বা ও মহিষ দ্বারা কোরবানি করা যায়। হজরত ইব্রাহিম (আ.)-এর ত্যাগ এবং আল্লাহর প্রতি আনুগত্যের স্মরণে এই ইবাদত প্রতিবারই আমাদের এই আত্মজিজ্ঞাসায় আহ্বান করে, ‘আমি কি আমার প্রিয়তম কিছু আল্লাহর জন্য উৎসর্গ করতে প্রস্তুত?
কোরবানির মাংস তিন ভাগে ভাগ করা উত্তম। এক অংশ আত্মীয়স্বজনের জন্য, এক অংশ দরিদ্রদের জন্য এবং এক অংশ নিজের পরিবারের জন্য রাখা। এর মাধ্যমে সমাজে সমতা ও সহমর্মিতা সৃষ্টি হয়।
আনন্দ ভাগাভাগি : ঈদের দিনটি মুসলমানদের জন্য আনন্দ ও উচ্ছ্বাসের দিন। ঈদের দিন রাসুলুল্লাহ (সা.) সুন্দর পরিচ্ছন্ন কাপড় পরিধান করতেন, আনন্দিত হতেন এবং পরিবারের সঙ্গে আনন্দ ভাগাভাগি করতেন। ঈদের দিনে আত্মীয়স্বজন, প্রতিবেশী ও বন্ধুদের সঙ্গে সাক্ষাৎ ও কুশল বিনিময়ও সুন্নাহর অন্তর্ভুক্ত। ঈদের দিন সাহাবিরা একে অপরকে বলতেন, ‘তাকাব্বালাল্লাহু মিন্না ওয়া মিনকুম।’ অর্থাৎ আল্লাহ আমাদের ও তোমাদেরকে কবুল করুন। এই বাক্য শুধুই শুভেচ্ছা বার্তা নয়, বরং এমন এক দোয়া, যার মধ্যে নিহিত রয়েছে ভ্রাতৃত্বের মজবুত বন্ধন।