ইস্টার দ্বীপের মূর্তিগুলো হুমকির মুখে
সমাজকাল ডেস্ক
প্রকাশ: ০২:৫৭, ১৭ আগস্ট ২০২৫

wiki-pidia
চিলির অন্তর্গত প্রশান্ত মহাসাগরের ছোট আগ্নেয় দ্বীপ রাপা নুই বা ইস্টার আইল্যান্ড বিশ্বজুড়ে পরিচিত এর রহস্যময় মোয়াই পাথরের মূর্তির জন্য। কিন্তু জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বাড়তে থাকায় দ্বীপটির ঐতিহ্যবাহী এই মূর্তিগুলো আগামী কয়েক দশকের মধ্যেই গুরুতর ঝুঁকির মুখে পড়তে পারে বলে নতুন এক গবেষণায় সতর্ক করা হয়েছে।
গবেষণার সতর্কবার্তা
জার্নাল অব কালচারাল হেরিটেজে প্রকাশিত গবেষণা অনুসারে, ২০৮০ সালের মধ্যেই মৌসুমি শক্তিশালী ঢেউ দ্বীপের পূর্ব উপকূলে অবস্থিত সবচেয়ে বড় আনুষ্ঠানিক প্ল্যাটফর্ম আহু টোঙ্গারিকি পর্যন্ত পৌঁছে যেতে পারে। এখানে দাঁড়িয়ে আছে দ্বীপের সবচেয়ে বিখ্যাত ১৫টি মোয়াই মূর্তি, যেগুলো শুধু পর্যটনশিল্পের কেন্দ্রবিন্দুই নয়, বরং রাপা নুই জনগোষ্ঠীর সাংস্কৃতিক পরিচয়ের প্রতীক।
হাওয়াই বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক নোয়া পাওয়া বলেন, “সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি বাস্তব। এটা ভবিষ্যতের হুমকি নয়, বরং এখন থেকেই পদক্ষেপ নেওয়ার সময়।”
সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ও অর্থনৈতিক গুরুত্ব
রাপা নুই দ্বীপজুড়ে প্রায় ৯০০ মোয়াই মূর্তি রয়েছে, যা ১০ম থেকে ১৬শ শতাব্দীর মধ্যে স্থানীয় জনগণ তাদের পূর্বপুরুষ ও প্রধানদের স্মরণে নির্মাণ করেছিলেন। এগুলো শুধু ইতিহাসের সাক্ষী নয়, বরং দ্বীপের পর্যটন আয়ের মূল উৎস। প্রতিবছর হাজার হাজার মানুষ এই বিশ্ব ঐতিহ্য দেখতে দ্বীপে ভিড় করে।
১৯৬০ সালে চিলির উপকূলে সংঘটিত বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী ভূমিকম্পের (মাত্রা ৯.৫) পর সৃষ্ট সুনামি রাপা নুই দ্বীপে আঘাত হেনে বহু মূর্তিকে ভেতরের দিকে ভাসিয়ে নিয়ে গিয়েছিল। পরে ১৯৯০-এর দশকে সেগুলো পুনর্নির্মাণ করা হয়। ফলে প্রকৃতির এই হুমকি একেবারেই নতুন নয়, বরং দীর্ঘ ইতিহাস বহন করে।
বিশ্ব ঐতিহ্যের ঝুঁকি
শুধু রাপা নুই নয়, ইউনেস্কোর সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিশ্বব্যাপী অন্তত ৫০টি বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থান বর্তমানে উপকূলীয় বন্যা ও ক্ষয়ের সরাসরি ঝুঁকির মুখে। ইউনেস্কো মুখপাত্রের মতে, “সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি এখন ইউনেস্কোর সামুদ্রিক ঐতিহ্যবাহী স্থাপনাগুলোর সবচেয়ে বড় হুমকি।”
প্রতিরোধের সম্ভাব্য উপায়
- গবেষকরা মনে করছেন, আহু টোঙ্গারিকিকে রক্ষায় বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করা যেতে পারে—
- উপকূলকে শক্তিশালী আর্মারিং বা সী-ওয়াল দিয়ে ঘেরা
- ব্রেকওয়াটার নির্মাণ করে ঢেউয়ের আঘাত কমানো
- প্রয়োজনে মূর্তিগুলো স্থানান্তর করা
তবে এসব পদক্ষেপ দ্রুত আলোচনায় আনা প্রয়োজন বলে সতর্ক করেছেন গবেষক পাওয়া। তার ভাষায়, “অপরিবর্তনীয় ক্ষতির অপেক্ষা না করে এখনই সক্রিয় হওয়ার সময়।”
ইস্টার দ্বীপের মোয়াই শুধু চিলির নয়, মানবসভ্যতার সাংস্কৃতিক উত্তরাধিকার। জলবায়ু পরিবর্তন এভাবে বৈশ্বিক ঐতিহ্য ধ্বংসের হুমকি হয়ে উঠছে। এই গবেষণা কেবল রাপা নুই নয়, বিশ্ব ঐতিহ্য রক্ষায় দ্রুত আন্তর্জাতিক পদক্ষেপের জরুরি প্রয়োজনের বিষয়টিও স্মরণ করিয়ে দিচ্ছে।