বৈশ্বিক প্লাস্টিক চুক্তি ভেস্তে গেল: বিভক্ত বিশ্বে জলবায়ু সংকট আরও গভীর
সমাজকাল ডেস্ক
প্রকাশ: ১৪:২৩, ১৬ আগস্ট ২০২৫

প্লাস্টিক দূষণ রোধে বৈশ্বিক চুক্তি করার লক্ষ্যে জাতিসংঘের উদ্যোগে ২০২২ সাল থেকে ছয় দফা বৈঠক হলেও সর্বশেষ জেনেভা আলোচনাও ভেস্তে গেছে। বৃহস্পতিবার শেষ হওয়ার কথা থাকলেও সারারাত আলোচনার পরও কোনো সমাধান হয়নি।
যুক্তরাজ্যের মেরিন মন্ত্রী এমা হার্ডি হতাশা প্রকাশ করে বলেন, “প্লাস্টিক দূষণ একটি বৈশ্বিক সংকট। কোনো দেশ একা এটি সমাধান করতে পারবে না।”
দ্বন্দ্বের মূল কারণ
প্লাস্টিক উৎপাদন কমানো: যুক্তরাজ্য, ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ প্রায় ১০০ দেশ উৎপাদন কমানোর দাবি তোলে।
তেলসমৃদ্ধ দেশগুলোর অবস্থান: সৌদি আরব, রাশিয়াসহ জ্বালানি-নির্ভর রাষ্ট্রগুলো উৎপাদন চালিয়ে যাওয়ার পক্ষে অবস্থান নেয় এবং শুধু পুনর্ব্যবহারকে সমাধান হিসেবে প্রস্তাব করে।
শিল্পখাতের যুক্তি: যুক্তরাষ্ট্রের প্লাস্টিক প্রযোজক প্রতিষ্ঠানগুলো দাবি করে, প্লাস্টিক আধুনিক জীবনের অপরিহার্য উপাদান; বিকল্প উপাদান অপ্রত্যাশিত ক্ষতি ডেকে আনতে পারে।
ক্ষুব্ধ দ্বীপ রাষ্ট্র
প্রশান্ত মহাসাগরের দ্বীপ রাষ্ট্র পালাউ অভিযোগ করেছে, আলোচনায় কোনো অগ্রগতি না হওয়া তাদের জন্য অন্যায়। তারা বলেছে, “আমরা ন্যূনতম অবদান রেখেও সর্বোচ্চ ক্ষতির শিকার হচ্ছি।”
বিজ্ঞানীদের সতর্কবার্তা
মাইক্রোপ্লাস্টিক এখন মাটি, নদী, বাতাস এমনকি মানবদেহের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গেও পাওয়া যাচ্ছে।
মাত্র ১০% প্লাস্টিক পুনর্ব্যবহারযোগ্য; ২০-৩০% পর্যন্ত বাড়ালেও দূষণ রোধ করা যাবে না।
বিষাক্ত রাসায়নিক প্লাস্টিক মানবস্বাস্থ্যের জন্যও গুরুতর হুমকি।
সম্ভাব্য সমাধান
এক রঙের প্লাস্টিক বোতল: পুনর্ব্যবহার সহজ করার জন্য প্রস্তাব এসেছে।
প্রস্তুতকারক কর : নেসলে ও ইউনিলিভারের মতো কোম্পানি প্লাস্টিকের ওপর কর আরোপের প্রস্তাব দিয়েছে, যাতে তহবিল তৈরি করে পুনর্ব্যবহার বাড়ানো যায়।
নতুন আলোচনার প্রতিশ্রুতি: আলোচনার চেয়ার লুইস ভায়াস জানিয়েছেন, ভবিষ্যতে আবারও আলোচনা ডাকা হবে।
পরিবেশবাদীদের ক্ষোভ
গ্রিনপিস জানিয়েছে, “তেল উৎপাদনকারী দেশগুলো অর্থনৈতিক স্বার্থকে অগ্রাধিকার দিয়ে বৈশ্বিক স্বাস্থ্যের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছে।” তারা সতর্ক করেছে, চুক্তি ব্যর্থ হওয়া মানে জীবাশ্ম জ্বালানি স্বার্থের বিরুদ্ধে আরও দৃঢ় প্রতিরোধ গড়ে তোলা দরকার।
প্লাস্টিক উৎপাদন ১৯৫০ সালের ২ মিলিয়ন টন থেকে ২০২২ সালে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪৭৫ মিলিয়ন টনে। এই ধারা অব্যাহত থাকলে আগামী প্রজন্ম ভয়াবহ পরিবেশ বিপর্যয়ের মুখে পড়বে। তাই প্রশ্ন থেকেই যায়—বিশ্ব কি উৎপাদন কমানোর সাহসী সিদ্ধান্ত নেবে, নাকি পুনর্ব্যবহারের ব্যর্থ কৌশলেই আটকে থাকবে?