কক্সবাজার সৈকতে প্রতিমা বিসর্জনে জমকালো আয়োজন
উখিয়া-টেকনাফ প্রতিনিধি
প্রকাশ: ২০:৪৫, ২ অক্টোবর ২০২৫ | আপডেট: ২১:৪৮, ২ অক্টোবর ২০২৫
কক্সবাজারে সমুদ্রসৈকতে প্রতিমা বিসর্জনে ছিল জমকালো আয়োজন। বৈরী আবহাওয়া ও ৩ নম্বর সতর্কসংকেতের মধ্যেও সৈকতে নামে পর্যটকের ঢল। শারদীয় দুর্গোৎসব ঘিরে দিনভর ছিল তিন স্তরের নিরাপত্তাব্যবস্থা।
উৎসবমুখর পরিবেশে মহাসমারোহ
শারদীয় দুর্গাপূজা উপলক্ষে কক্সবাজার সমুদ্রসৈকত আজ বৃহস্পতিবার (২ অক্টোবর) রূপ নেয় মিলনমেলায়। জেলার সাতটি উপজেলার শতাধিক পূজামণ্ডপের প্রতিমা ট্রাকে করে সৈকতে আনা হয়। পার্শ্ববর্তী বান্দরবানের লামা ও নাইক্ষ্যংছড়ি থেকেও প্রতিমা আনা হয় বিসর্জনের জন্য। বিকেল ৫টায় মন্ত্রপাঠের মধ্য দিয়ে সাগরে প্রতিমা বিসর্জনের মূল আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়। সকাল থেকেই জেলার নানা প্রান্ত ছাড়াও দেশের বিভিন্ন স্থানের হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা এ মহা-আয়োজনে অংশ নিতে সৈকতে ভিড় জমায়।
প্রশাসনের সর্বোচ্চ প্রস্তুতি
প্রশাসন জানিয়েছে, প্রতিমা বিসর্জন নির্বিঘ্নে সম্পন্ন করতে তিন স্তরের নিরাপত্তা বলয় তৈরি করা হয়। সৈকতে ছিল সেনাবাহিনী, পুলিশ, র্যাব, বিজিবি ও ট্যুরিস্ট পুলিশের অতিরিক্ত সদস্য। পাশাপাশি জরুরি পরিস্থিতি সামাল দিতে জেলা প্রশাসন কন্ট্রোল রুমও স্থাপন করে। জেলা প্রশাসক আব্দুল মান্নান জানান, শুধু নিরাপত্তাই নয়, পর্যটকদের ভ্রমণ অভিজ্ঞতা সুন্দর রাখতেও সব ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হয়।
জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি উদয় শংকর পাল মিঠু বলেন, প্রশাসনের সহযোগিতায় বিসর্জন প্রক্রিয়া নিরাপদ ও শৃঙ্খলভাবে সম্পন্ন হচ্ছে।
পর্যটকের ঢল ও হোটেল সংকট
দুর্গাপূজা ও টানা ছুটিকে ঘিরে কক্সবাজারে পর্যটকদের অভূতপূর্ব ভিড়। হোটেল-মোটেল মালিক সমিতির সভাপতি আবুল কাশেম সিকদার জানান, সব হোটেলের রুম শতভাগ বুকড হয়ে গেছে। আগামী কয়েকদিনে পাঁচ লক্ষাধিক পর্যটক আসবেন বলে আশা করা হচ্ছে। অতিরিক্ত ভাড়া না নেওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
সিরাজগঞ্জ থেকে পরিবার নিয়ে আসা শিক্ষক রাজেন্দ্র রায় বলেন, “কক্সবাজারের বিসর্জনই দেশের সবচেয়ে বড় আয়োজন। তাই মাকে বিদায় জানাতে আমরা এখানে এসেছি।”
আবহাওয়ার ঝুঁকি ও সতর্কতা
বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট লঘুচাপের কারণে সমুদ্র উত্তাল থাকায় আবহাওয়া অধিদপ্তর ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত দেখিয়ে যেতে বলেছে। এতে সৈকতে গোসল ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে। সি সেইফ লাইফ গার্ড কর্মকর্তা ইমতিয়াজ আহমেদ জানান, “আমাদের সদস্যরা সর্বক্ষণ দায়িত্ব পালন করছেন। তবে ঝুঁকিপূর্ণ জায়গায় পর্যটকদেরও সতর্ক থাকতে হবে।”
প্রশাসনের তৎপরতা ও ধর্মীয় মিলনমেলা
অতিরিক্ত ডিআইজি আপেল মাহমুদ বলেন, ২৫ সেপ্টেম্বর থেকেই পর্যটকের চাপ বাড়ছিল। তাই আগে থেকেই কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। উৎসব শেষে পর্যন্ত নিরাপত্তা তৎপরতা অব্যাহত থাকবে।
ধর্মীয় ভাবগম্ভীরতা, লোকজ সংস্কৃতি, প্রশাসনের সুসমন্বয় ও পর্যটকের ঢল—সব মিলিয়ে কক্সবাজারের প্রতিমা বিসর্জন শুধু ধর্মীয় অনুষ্ঠান নয়, বরং হয়ে উঠে হাজারো মানুষের মহামিলনমেলা।
