যুক্তরাষ্ট্রে ফেরত পাঠানো ভেনেজুয়েলানদের ‘নরকে’ পাঠানো হলো
আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশ: ১৪:৫৭, ১২ নভেম্বর ২০২৫ | আপডেট: ১৫:০১, ১২ নভেম্বর ২০২৫
যুক্তরাষ্ট্রে ফেরত পাঠানো ভেনেজুয়েলানদের এল সালভাদরের কুখ্যাত সেন্টার ফর টেররিজম কনফাইনমেন্ট জেলে পাঠানো হলো। ছবি: সিএনএন
মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস ওয়াচ ও মধ্য আমেরিকার সংস্থা ক্রিস্টোসাল–এর যৌথ প্রতিবেদনে চাঞ্চল্যকর অভিযোগ উঠেছে। যুক্তরাষ্ট্র থেকে নির্বাসিত অন্তত ২৫২ জন ভেনেজুয়েলান নাগরিককে এল সালভাদরের কুখ্যাত সেন্টার ফর টেররিজম কনফাইনমেন্ট জেলে পাঠানোর পর তাদের ওপর চালানো হয়েছে অমানবিক নির্যাতন, যৌন সহিংসতা ও মানসিক নিপীড়ন।
প্রতিবেদনটি ৪০ জন ভুক্তভোগীর সাক্ষাৎকারের ভিত্তিতে তৈরি। তারা জানিয়েছেন, কারারক্ষীরা নিয়মিত তাদের মারধর করত, প্রতিবাদ করায় একাধিক বন্দিকে একাকী সেলে পাঠানো হতো। অনেকে আত্মহত্যার চেষ্টাও করেছেন।
২৬ বছর বয়সী ভেনেজুয়েলান নাগরিক গনজালো জানান, বিমানের দরজা খুলেই তারা মারধরের শিকার হন। জেলে পৌঁছে এক কর্মকর্তা বলেন, “তোমরা এখন নরকে এসেছো।”
প্রতিদিনের সেল তল্লাশির সময় প্রহরীরা বন্দিদের লাথি ও লাঠি দিয়ে মারতেন বলে অভিযোগ।
প্রতিবেদনে তিনজন নারী যৌন সহিংসতার শিকার হয়েছেন বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
আরেক বন্দি নেলসন বলেন, “আমি ভেবেছিলাম মরে গেলেই ভালো। শেষে শুধু ঈশ্বর ও আমার পরিবার আমাকে বাঁচিয়ে রেখেছিল।”
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নির্দেশে যুক্তরাষ্ট্রের হোমল্যান্ড সিকিউরিটি বিভাগ প্রায় ৩০০ জন ভেনেজুয়েলান ও এমএস-১৩ গ্যাং সদস্যকে সিসট জেলে পাঠানোর কথা স্বীকার করেছে। বিভাগের এক সহকারী সচিব ত্রিশিয়া ম্যাকলাফলিন বলেন, “এই সন্ত্রাসীরা এখন আমেরিকান জনগণের জন্য আর হুমকি নয়।”
তবে মানবাধিকার সংস্থাগুলোর দাবি, নির্বাসিতদের অর্ধেকেরই কোনো অপরাধমূলক রেকর্ড ছিল না, আর মাত্র ৩ শতাংশ সহিংস অপরাধে দোষী সাব্যস্ত হয়েছিলেন। ফলে এই নির্বাসন কার্যক্রমকে তারা “যৌথ রাষ্ট্রীয় নির্যাতনের রূপ” হিসেবে বর্ণনা করেছে।
ভেনেজুয়েলান মেকআপ শিল্পী আন্দ্রি হার্নান্দেজ সিএনএনকে বলেন, “স্বাগতম সিসটের নরকে।”
অন্য বন্দি হোসে মোরাস, রাফায়েল মার্টিনেজ ও জেরসে রেয়েস জানান, ক্ষুদ্র ভুলের জন্যও তাদের মারধর করা হতো। একবার গরমে গোসল করার কারণে রেয়েসকে একা সেলে পাঠিয়ে নির্যাতন করা হয়।
মার্টিনেজ বলেন, একবার অসুস্থ হয়ে জানালা দিয়ে মাথা বের করার অপরাধে আটজন প্রহরী মিলে তার ডান হাত ভেঙে দেয়।
মোরা যোগ করেন, “তারা আমাদের মুরগি বা ইঁদুরের মতো গুলি করত। রাবার বুলেট ছুড়ে ভয় দেখাত।”
প্রতিবেদন প্রকাশের পর ভেনেজুয়েলা সরকার জানিয়েছে, এল সালভাদরের জেলে তাদের নাগরিকদের ওপর নির্যাতনের অভিযোগে আনুষ্ঠানিক তদন্ত শুরু করা হবে।
মানবাধিকার সংস্থাগুলোর ভাষায়, “সিসট কারাগারে বন্দিরা কোনোদিন মুক্তি পাবে না—এই বিশ্বাস চাপিয়ে দিয়ে তাদের মানসিকভাবে ধ্বংস করা হচ্ছে।”
সূত্র : সিএনএন
