জনসংহতি সমিতির দাবি
খাগড়াছড়ি-গুইমারার সহিংসতায় ইউপিডিএফের উসকানি
খাগড়াছড়ি প্রতিনিধি
প্রকাশ: ২২:০৫, ৫ অক্টোবর ২০২৫ | আপডেট: ০০:০০, ৬ অক্টোবর ২০২৫

খাগড়াছড়ি জেলা সদর ও গুইমারা উপজেলায় সাম্প্রতিক সহিংসতার পেছনে ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্টের (ইউপিডিএফ) উসকানিকে দায়ী করেছে পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি (জেএসএস)।
দলটির দাবি, পাহাড়ি এক কিশোরীকে দলবদ্ধ ধর্ষণের ঘটনায় প্রতিবাদকারীদের আন্দোলনকে ভিন্ন খাতে নিতে ইউপিডিএফ পরিকল্পিতভাবে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে।
রবিবার (৫ অক্টোবর) গণমাধ্যমে পাঠানো ‘খাগড়াছড়ি ও গুইমারায় গত ২৭ ও ২৮ সেপ্টেম্বর সংঘটিত সাম্প্রদায়িক হামলা’ শীর্ষক এক প্রতিবেদনে এই অভিযোগ করে জেএসএসের তথ্য ও প্রচার বিভাগ। জেএসএসের রাঙামাটি জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক নগেন্দ্র চাকমা প্রতিবেদন প্রকাশের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।
গত ২৩ সেপ্টেম্বর রাত ৯টার দিকে প্রাইভেট পড়ে ফেরার পথে খাগড়াছড়ি সদর এলাকায় এক পাহাড়ি কিশোরীকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের অভিযোগ ওঠে।
এর প্রতিবাদে 'জুম্ম ছাত্র–জনতার' ব্যানারে ২৭ সেপ্টেম্বর খাগড়াছড়িতে অবরোধ আহ্বান করা হয়। পরদিন ২৮ সেপ্টেম্বর গুইমারার রামেসু বাজারে বিক্ষোভ চলাকালে সংঘর্ষ ও অগ্নিসংযোগে এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে বিক্ষোভকারীদের সংঘর্ষে তিন পাহাড়ি তরুণ নিহত হন এবং ৪০টি দোকান ও ৫০টি বসতঘর পুড়ে যায়।
তবে ১ অক্টোবর প্রকাশিত মেডিকেল বোর্ডের প্রতিবেদনে বলা হয়, ওই কিশোরীর শরীরে ধর্ষণের কোনো আলামত পাওয়া যায়নি।
জেএসএসের প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘পাহাড়ি কিশোরী ধর্ষণের ঘটনায় প্রতিবাদকারী জুম্ম ছাত্র–জনতার সঙ্গে স্থানীয় বাঙালিদের পাল্টাপাল্টি ধাওয়া ও হামলার পর ইউপিডিএফ পরিস্থিতিকে আরও উত্তপ্ত করে তোলে।’ তাদের দাবি, ইউপিডিএফের কর্মীরা ২৬ সেপ্টেম্বরের মহাসমাবেশে বিশৃঙ্খলা তৈরি করে এবং ২৭–২৮ সেপ্টেম্বরের অবরোধকে সহিংস রূপ দেয়।
প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, ‘ইউপিডিএফ দেশ–বিদেশের কিছু ব্লগার ও সমর্থককে ব্যবহার করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে উসকানিমূলক পোস্ট ও বিভ্রান্তি ছড়িয়েছে।’
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত পাহাড়ে নারী ও শিশুদের ওপর ২১টি সহিংস ঘটনা ঘটেছে, যেখানে ২৯ জন নারী ও শিশু মানবাধিকার লঙ্ঘনের শিকার হয়েছে। তবুও ন্যায়বিচার ও কার্যকর তদন্তের অভাব দীর্ঘদিনের বাস্তবতা।
জেএসএসের তিন দফা দাবি। দাবিগুলো হলো-
১. খাগড়াছড়ি ও গুইমারার সহিংসতার বিচার বিভাগীয় তদন্ত করতে হবে।
২. নিহত ও আহতদের ক্ষতিপূরণ ও চিকিৎসা সহায়তা দিতে হবে।
৩. অপরাধীদের আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।
ইউপিডিএফের পাল্টা বক্তব্য
ইউপিডিএফের অন্যতম সংগঠক অংগ্য মারমা জেএসএসের অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছেন। এক বিবৃতি তিনি বলেন, ‘এটি ছাত্র–জনতার নিজস্ব আন্দোলন। জেএসএস প্রশাসনের সহযোগী হয়ে আন্দোলনকে বিতর্কিত করার চেষ্টা করছে।’
উল্লেখ্য, পাহাড়ে দীর্ঘদিন ধরে নারী ও শিশুর ওপর সহিংসতা, ভূমি বিরোধ ও রাজনৈতিক আধিপত্যের লড়াই চলমান। জেএসএস ও ইউপিডিএফ—দুই দলই পাহাড়ি স্বায়ত্তশাসনের দাবিতে সক্রিয় থাকলেও, দুই পক্ষের মধ্যে প্রভাব বিস্তারের দ্বন্দ্ব প্রায়ই সহিংসতায় রূপ নেয়।