এএফপির প্রতিবেদন
নোবেল শান্তি পুরস্কার জেতার সম্ভাবনা নেই ট্রাম্পের
আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশ: ১৯:০৯, ৮ অক্টোবর ২০২৫ | আপডেট: ০৩:৩৯, ৯ অক্টোবর ২০২৫

নরওয়ের রাজধানী অসলোতে শুক্রবার সকাল ১১টা (বাংলাদেশ সময় বিকেল ৩টা) নোবেল শান্তি পুরস্কারের বিজয়ীর নাম ঘোষণা করবে নোবেল কমিটি। তবে এবারে পুরস্কারজয়ী হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নাম থাকার সম্ভাবনা একেবারেই ক্ষীণ বলে জানিয়েছে আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থা এএফপি।
ডোনাল্ড ট্রাম্প নিজে দাবি করে আসছেন, তিনি বিশ্বের ‘আটটি সংঘাতের সমাধান’ করেছেন—ফলে নোবেল শান্তি পুরস্কারের যোগ্য প্রার্থী তিনিই। কিন্তু বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অন্তত এ বছর কমিটির পছন্দ ট্রাম্প নন।
সুইডেনের উপসালা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক পিটার ওয়ালেনস্টিন বলেন, “না, এ বছর ট্রাম্প নন। হয়তো আগামী বছর দেখা যেতে পারে—তত দিনে তার উদ্যোগ, বিশেষ করে গাজা সংকট নিয়ে ভূমিকা, আরও স্পষ্ট হবে।”
ওসলো শান্তি গবেষণা ইনস্টিটিউটের প্রধান নিনা গ্রেগার জানান, ট্রাম্পের অনেক পদক্ষেপ নোবেলের আদর্শবিরোধী। তিনি বলেন, “তিনি যুক্তরাষ্ট্রকে আন্তর্জাতিক সংস্থা ও বহু-পাক্ষিক চুক্তি থেকে প্রত্যাহার করেছেন, মিত্র ও প্রতিপক্ষ উভয়ের সঙ্গে বাণিজ্যযুদ্ধ শুরু করেছেন, এমনকি গ্রিনল্যান্ড দখলের হুমকিও দিয়েছেন। এসব কিছুই শান্তির বার্তা নয়।”
নোবেল কমিটির চেয়ারম্যান ইয়রগেন ওয়াটনে ফ্রিডনেস বলেন,“আমরা প্রার্থীর সামগ্রিক কর্মকাণ্ড বিবেচনা করি, তবে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিই—তিনি বাস্তবে শান্তির জন্য কী অর্জন করেছেন।”
সুইডেনের উপসালা বিশ্ববিদ্যালয়ের বৈশ্বিক সংঘাত তথ্যভান্ডার অনুযায়ী, ২০২৪ সালেই দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ-পরবর্তী সময়ে সর্বাধিক রাষ্ট্রসম্পৃক্ত সশস্ত্র সংঘাত সংঘটিত হয়েছে। এই প্রেক্ষাপটে ২০২৫ সালের নোবেল শান্তি পুরস্কারকে বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
এ বছর শান্তি পুরস্কারের জন্য মনোনীত হয়েছেন ৩৩৮ জন ব্যক্তি ও সংগঠন। নামের তালিকা গোপন থাকলেও আন্তর্জাতিক মহলে কয়েকটি নাম বিশেষভাবে আলোচনায়—সুদানের ‘ইমার্জেন্সি রেসপন্স রুমস’, যারা যুদ্ধ ও দুর্ভিক্ষের মধ্যেও মানবিক সহায়তা দিচ্ছে।
ইউলিয়া নাভালনয়া, প্রয়াত রুশ বিরোধী নেতা আলেক্সেই নাভালনির স্ত্রী। ওডিআইএইচআর, ইউরোপীয় নির্বাচন পর্যবেক্ষণ সংস্থা।
নরওয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক ইনস্টিটিউটের পরিচালক হালভার্ড লেইরা মনে করেন, “কমিটি সাম্প্রতিক বছরগুলোতে মানবাধিকার, গণতন্ত্র ও সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা—এই ঐতিহ্যবাহী শান্তির ধারণার দিকে ফিরে গেছে। ফলে এ বছর সম্ভবত বিতর্কহীন ও তুলনামূলকভাবে নিরপেক্ষ প্রার্থীই পুরস্কার পাবেন।”
বিশ্লেষকদের মতে, কমিটি চাইলে বৈশ্বিক সংহতির বার্তা দিতে পারে—জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেসকে, অথবা জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থা (ইউএনএইচসিআর),কিংবা ফিলিস্তিনি শরণার্থী ত্রাণ সংস্থা (ইউএনআরডব্লিউএ)-কে।
এ ছাড়া আন্তর্জাতিক বিচার আদালত (আইসিজে), আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত (আইসিসি), কিংবা সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতার পক্ষে কাজ করা সংগঠন ‘কমিটি টু প্রটেক্ট জার্নালিস্টস’ বা ‘রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডার্স’ও আলোচনায় আছে।
নোবেল কমিটি অতীতেও অনেকবার অপ্রত্যাশিত প্রার্থীকে পুরস্কৃত করেছে। তাই চূড়ান্ত ঘোষণার আগে পর্যন্ত প্রশ্নটা থেকেই যাচ্ছে।
সূত্র: এএফপি