বৃহস্পতিবার, ১৬ অক্টোবর ২০২৫

| ১ কার্তিক ১৪৩২

হামাস-ইসরায়েল শান্তি আলোচনায় আজ নতুন অধ্যায়

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

প্রকাশ: ১১:৪৮, ৬ অক্টোবর ২০২৫

হামাস-ইসরায়েল শান্তি আলোচনায় আজ নতুন অধ্যায়

ছবি : বিবিসি

আজ সোমবার মিশরে শুরু হয়েছে হামাস ও ইসরায়েলের মধ্যকার পরোক্ষ শান্তি আলোচনা। এই বৈঠককে মধ্যপ্রাচ্যের শান্তি প্রক্রিয়ার নতুন অধ্যায় হিসেবে দেখা হচ্ছে। আলোচনার আগে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প উভয় পক্ষকে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি এরই মধ্যে একটি ২০ দফা শান্তি পরিকল্পনা পেশ করেছেন, যার কিছু অংশে সম্মতি জানিয়েছে হামাস।

ট্রাম্প সামাজিক মাধ্যমে লিখেছেন, “এ পর্যন্ত আলোচনা খুব সফল হয়েছে। আমাকে জানানো হয়েছে প্রথম ধাপ এই সপ্তাহেই সম্পন্ন হবে। সময় এখন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ—নইলে ভয়াবহ রক্তপাত ঘটবে।” সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি জানান, প্রথম ধাপেই জিম্মিদের মুক্তি সম্ভব হতে পারে। নমনীয়তা বিষয়ে প্রশ্নে ট্রাম্প বলেন, “নমনীয়তার দরকার নেই, সবাই মূলত একমত।”

তার দাবি, এই পরিকল্পনা ইসরায়েলের জন্য একটি “অসাধারণ চুক্তি” এবং একইসাথে “পুরো আরব ও মুসলিম বিশ্বের জন্যও একটি ইতিবাচক বার্তা।” ট্রাম্পের প্রশাসনের বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফ, জামাতা জ্যারেড কুশনার এবং কাতারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী শেখ মোহাম্মদ বিন আব্দুর রহমান আল-থানি আলোচনায় উপস্থিত রয়েছেন।

হামাস তাদের পক্ষ থেকে জিম্মি মুক্তি ও গাজার প্রশাসন ফিলিস্তিনি টেকনোক্র্যাটদের হাতে তুলে দেওয়ার প্রস্তাবে রাজি হয়েছে। তবে নিরস্ত্রীকরণ ও গাজার ভবিষ্যৎ শাসন কাঠামো নিয়ে আরও আলোচনার দাবি জানিয়েছে দলটি। প্রধান আলোচক খালিল আল-হাইয়া রবিবার রাতেই কায়রো পৌঁছেছেন।

এরই মধ্যে গাজায় ইসরায়েলি বিমান ও ট্যাংকের হামলায় গত ২৪ ঘণ্টায় আরও ৬৫ জন নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে হামাস-নিয়ন্ত্রিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। ইসরাইলি মুখপাত্র শোশ বেদরোশিয়ান জানান, “কিছু এলাকায় বোমাবর্ষণ বন্ধ হলেও এখনো যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয়নি।” প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু সেনাদের নির্দেশ দিয়েছেন—“যদি আত্মরক্ষার প্রয়োজন হয়, প্রতিরোধমূলক হামলা চালানো হবে।”

মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও সিবিএস নিউজকে বলেন, “জিম্মিদের মুক্তি ঘটাতে হলে বোমাবর্ষণ বন্ধ করতে হবে। বোমা পড়ার মধ্যে কোনো মুক্তি সম্ভব নয়।” ট্রাম্পও শুক্রবার ইসরায়েলকে “অবিলম্বে বোমাবর্ষণ বন্ধের নির্দেশ” দেন, যদিও তা মানা হয়নি।

২০ দফা প্রস্তাবে যুদ্ধবিরতি ও ৪৮ জন জিম্মির মুক্তির পরিকল্পনা রয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, তাদের মধ্যে প্রায় ২০ জন জীবিত আছেন। এর বিনিময়ে শত শত ফিলিস্তিনি বন্দিকে মুক্তি দেওয়া হতে পারে। ইসরায়েলি মুখপাত্র বেদরোশিয়ান বলেন, “নেতানিয়াহু এই আলোচনার মেয়াদ কয়েক দিনের মধ্যেই সীমিত রাখার নির্দেশ দিয়েছেন।”

সব চোখ এখন কায়রোর দিকে। হামাস ও ইসরায়েলের এই নতুন আলোচনায় আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা ও মানবিক সংকট নিরসনের সম্ভাবনা জাগছে। তবে, ইসরাইলের চলমান বোমাবর্ষণ ও হামাসের সশস্ত্র অবস্থান এই আলোচনাকে নাজুক করে তুলেছে। আগামী কয়েকদিনই নির্ধারণ করবে, মধ্যপ্রাচ্যের দীর্ঘদিনের রক্তক্ষয়ী সংঘাত এক নতুন পথে এগোবে, নাকি আবারও অনিশ্চয়তার অন্ধকারে ডুবে যাবে।
 

সম্পর্কিত বিষয়:

আরও পড়ুন