বৃহস্পতিবার, ২৮ আগস্ট ২০২৫

| ১২ ভাদ্র ১৪৩২

“অসংখ্য দাসত্বভোগী কৃষ্ণাঙ্গ মানুষের জীবনের প্রতিদিনের অঙ্গ ছিল ঘোড়া।”

বিটার কালি

প্রকাশ: ০০:১৫, ২১ আগস্ট ২০২৫

“অসংখ্য দাসত্বভোগী কৃষ্ণাঙ্গ মানুষের জীবনের প্রতিদিনের অঙ্গ ছিল ঘোড়া।”

প্রথমবার যখন আমি ঘোড়াদের সঙ্গে পালানো মানুষদের কল্পনায় দেখলাম, আমি সরাসরি তাদের সঙ্গে কথা বলতে চাইলাম। জানতে চাইলাম, কীভাবে তারা তাদের পালানোর পরিকল্পনা করেছিল, পালানোর রাতে চাঁদ কেমন ছিল, কীভাবে তারা বিদায় জানিয়েছিল। কখনও কখনও তারা উত্তর দিত, তবে বেশিরভাগ সময় তারা তখনই আমার নাগালের বাইরে ছুটে চলেছে।

দাসপ্রথা বিলোপের আগের শতাব্দীতে, যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে সংবাদপত্রে পালানো দাসদের বিজ্ঞাপন ছাপা হতো। অনেক সময় এই বিজ্ঞাপন শুধু মানুষের জন্য নয়, সেই ঘোড়াগুলির জন্যও হতো যেগুলি তারা নিয়ে গিয়েছিল।

সেই বিজ্ঞাপনগুলোতে দাসমালিকরা তাদের হারানো সম্পত্তির জন্য পুরস্কার ঘোষণা করত—কখনও ২০ ডলার, কখনও ৭০, কখনও ৪৫—কখনও আবার ঘোড়ার জন্য দাসের চেয়ে বেশি। সেখানে পালানোদের শারীরিক বর্ণনা দেওয়া থাকত, ঘোড়ারও, যাদের শরীরেও দেখা যেত চাষের শ্রমের দাগ।

তারা ছিল জকি, লাঙলচালক, গাড়োয়ান, কাঠমিস্ত্রি, ছাপাখানা শ্রমিক, মুচি, নাপিত, মোরগযোদ্ধা, ব্যারেল বানানো কারিগর, রাজমিস্ত্রি ও চিত্রশিল্পী। আবার কারও কারও নামের পাশে লেখা থাকত—“কোনও বিশেষ দক্ষতা নেই, শুধু ছলচাতুরী।”

তাদের মুখে পোড়া দাগ, চোখ অস্বাভাবিক ছোট, কব্জি ও হাঁটুতে ক্ষতের দাগ, কারও পা বেঁকা, কেউ পাঁচ ফুট দশ ইঞ্চি, কারও মাথা ঝাঁকড়া চুলে ভরা, কেউ ছিল মোটা, কেউ ছিপছিপে আর রাজসিক, কেউ ছ’ফুট লম্বা। আর তারা ঘোড়া চুরি করেছিল।

ঘোড়া: দৈনন্দিন জীবনের অঙ্গ

অসংখ্য দাসত্বভোগী কৃষ্ণাঙ্গ মানুষের জীবনের প্রতিদিনের অঙ্গ ছিল ঘোড়া। তবে আমি ঘোড়াকে রোমান্টিকভাবে দেখতে চাই না। পালানোদের অনেকেই হয়তো ঘোড়াকে কেবল সুবিধা বা প্রয়োজন হিসেবেই দেখত। ঘোড়া ছিল পরিবহনের মাধ্যম, বিস্তীর্ণ ভূমি অতিক্রম করার গতি। তবে এই সম্পর্কের “সাধারণত্ব”ই আমাকে টানে।

ঘোড়ার কাজ, আর সেসব ঘোড়ার যত্ন নেওয়া, ব্যায়াম করানো, সাজানো ও খাওয়ানো দাসত্বভোগী কৃষ্ণাঙ্গদের কাজ ছিল। অন্যদের জীবন টিকিয়ে রাখা ছিল তাদের দায়িত্ব, অথচ নিজেদের বেঁচে থাকার শর্ত তারা পেত না।

পালানো আর ঘোড়া চুরি

যখন দাসরা ঘোড়া চুরি করত, সেটি ছিল “অভিযানের বুদ্ধিমত্তা।” সাধারণ জিনিসকে অসাধারণ কাজে লাগানো। এই কাজটি দাসমালিকদের জমি ও সম্পত্তির উপর নিয়ন্ত্রণের ভ্রান্তি ভেঙে দিত।

ঘোড়া হারানো মানে একসাথে দুইজন শ্রমিক হারানো। তাই বিজ্ঞাপনগুলোতে অনেক সময় ঘোড়া ফেরত পাওয়ার আকুতি ছিল, মানুষ ফেরত না পেলেও।

আন্ডারগ্রাউন্ড রেলরোডে ঘোড়া

১৮৭২ সালে, ফিলাডেলফিয়ার দাসপ্রথা-বিরোধী কর্মী উইলিয়াম স্টিল প্রকাশ করেন The Underground Railroad Records। এখানে পালানো মানুষের অসংখ্য কাহিনি লিপিবদ্ধ আছে। এবং এখানে ঘোড়ার ভূমিকাও স্পষ্ট।

১৮৫৬ সালে, ওউইন টেইলর তার স্ত্রী, সন্তান ও দুই ভাইকে নিয়ে পালালেন। তারা দুইটি ঘোড়া নিয়ে রওনা দিয়েছিল। ঘোড়াগুলো টেনে নিল তাদের গাড়ি—“একটানা দ্রুততায়।” পেনসিলভানিয়ায় পৌঁছে তারা ঘোড়াদের বিদায় জানায়।

স্টিল লিখেছিলেন, টেইলার পরিবার প্রতিজ্ঞা করেছিল—“কখনও জীবিত ধরা পড়বে না।” এই প্রতিজ্ঞায় যেমন ছিল মৃত্যুর মুখোমুখি হওয়ার সাহস, তেমনই ছিল বেঁচে থাকার গভীর তাৎপর্য।

নীরব সহচর

যখন ঘোড়া ধরা পড়ত, তারা আর কিছু জানাতে পারত না—কোথায় গিয়েছিল, কী দেখেছিল। তাই ঘোড়া হয়ে উঠেছিল নীরব সাক্ষী, যারা মুক্তির পথে সহচর।

পালানোদের গল্প

১৮২২ সালে, নর্থ ক্যারোলিনায় লন্ডন পলক নামে এক দাস পালাল ঘোড়াসহ। বিজ্ঞাপনে তার পোশাকের চাকচিক্য বর্ণনা করা হয়েছিল।

১৮৪২ সালে, হার্ডি ক্যারল নামের এক কৃষ্ণাঙ্গ ব্যক্তি জেল থেকে পালায়। প্রথমে দুই শ্বেতাঙ্গ কয়েদির সঙ্গে, পরে আবারও একা। দু’বারই ঘোড়া চুরি করে। তার গল্পে ফুটে ওঠে বারবার পালানোর জেদ—“এক জেদি প্রত্যাখ্যান।”

ক্যারিবীয় দ্বীপপুঞ্জে ঘোড়া

সপ্তদশ ও অষ্টাদশ শতকে, ক্যারিবীয় দ্বীপপুঞ্জে দাসরা প্রভুদের ঘোড়ার পেছনে দৌড়াত, লেজ ধরে রাখতে হতো তাদের। অথচ জ্যামাইকার পাহাড়ি মারুনরা ঘোড়া চুরি করে সেগুলোকে পাহাড়ি পথে প্রশিক্ষিত করত। তারা লড়াই চালাত দাসমালিকদের বিরুদ্ধে।

মুক্তির অংশ হিসেবে চুরি

মারুনের মতো বাঁচা মানে বোঝা—মুক্তির জন্য চুরি অপরিহার্য। যে সম্পত্তির ধারণা দিয়ে দাসপ্রথা চলে, সেই ধারণাকেই চ্যালেঞ্জ জানানো।

টেইলার ভাইদের মতো, হার্ডি ক্যারলের মতো, কিংবা ব্লু মাউন্টেনসের মারুনদের মতো, অসংখ্য পরিচিত-অপরিচিত মানুষের কাহিনির মধ্যে আমরা দেখতে পাই—কীভাবে তারা ঘোড়াকে সঙ্গী করে মুক্তির মানচিত্র এঁকেছিল।

সূত্র : মাউন্ডেড : অন হর্সেজ, ব্ল্যাকনেস, এন্ড লিবারেশন
লেখক: বিটার কালি
আমিস্তাদ (হার্পারকলিন্স পাবলিশার্স) কর্তৃক প্রকাশিত, ২০২৫

আরও পড়ুন

শীর্ষ সংবাদ: