বৃহস্পতিবার, ২৮ আগস্ট ২০২৫

| ১২ ভাদ্র ১৪৩২

টেসলার আগমন কি বদলে দেবে সৌদি আরবের বৈদ্যুতিক যানবাহনের ভবিষ্যৎ?

সমাজকাল

প্রকাশ: ১৩:৩৪, ১২ জুলাই ২০২৫

টেসলার আগমন কি বদলে দেবে সৌদি আরবের বৈদ্যুতিক যানবাহনের ভবিষ্যৎ?

টেসলার আগমন কি বদলে দেবে সৌদি আরবের বৈদ্যুতিক যানবাহনের ভবিষ্যৎ? ২০৩০ সালের মধ্যে ৩০% ইভি ব্যবহারের লক্ষ্যে সৌদি আরব, টেসলা হতে পারে ‘গেম চেঞ্জার’ সমাজকাল ডেস্ক সৌদি আরবের বৈদ্যুতিক গাড়ি ইভি বিপ্লব এখন গতি পাচ্ছে। দেশটির ভিশন ২০৩০ অনুযায়ী ৩০ শতাংশ গাড়ি ইভি হবে—এমন লক্ষ্যকে সামনে রেখে এবার সরাসরি মাঠে নামল টেসলা। সৌদি আরবে প্রথমবারের মতো টেসলা শোরুম চালু হয়েছে রিয়াদে, এর পাশাপাশি পপ-আপ স্টোর এসেছে জেদ্দা ও দাম্মামেও। এই উদ্যোগ একদিকে যেমন বৈশ্বিকভাবে টেসলার নতুন বাজার খোঁজার অংশ, অন্যদিকে সৌদি আরবের পরিবেশবান্ধব ভবিষ্যতের অংশ হিসেবেও গুরুত্বপূর্ণ। ক্রেতা প্রস্তুত, কাঠামো এখনও নয় বর্তমানে সৌদি আরবে ইভি বিক্রি ১ শতাংশের একটু বেশি হলেও, এক জরিপে দেখা গেছে প্রায় অর্ধেক নাগরিক আগামী কয়েক বছরের মধ্যে বৈদ্যুতিক গাড়ি কেনার কথা ভাবছেন। তবে সমস্যা রয়েছে চার্জিং স্টেশন নিয়ে। ২০২৪ সালের শেষে দেশটিতে পাবলিক চার্জিং স্টেশন মাত্র ১০১টি—যার বেশিরভাগই রিয়াদে। জনসংখ্যার তুলনায় কম হলেও সংযুক্ত আরব আমিরাতে এই সংখ্যা প্রায় তিনগুণ। টেসলা কি এ ঘাটতি পূরণে এগিয়ে আসবে? বিশেষজ্ঞরা বলছেন, টেসলা যদি তাদের সুপারচার্জার নেটওয়ার্ক দ্রুত স্থাপন করে, এবং তা অন্যান্য ব্র্যান্ডের জন্যও উন্মুক্ত রাখে, তাহলে চার্জিং সংকট অনেকটাই কেটে যাবে। এমনকি রিয়াদ-মক্কা দীর্ঘ ৯০০ কিলোমিটার করিডোরেও উচ্চগতির চার্জার বসানোর পরিকল্পনা নেওয়া হচ্ছে। তবে শুধু ইনফ্রাস্ট্রাকচার নয়, রয়েছে নিরাপত্তা এবং ঝুঁকির প্রশ্নও। দ্রুতগতির চার্জিং স্টেশন বিদ্যুৎ প্রবাহ, ডিজিটাল কন্ট্রোল এবং সাইবার নিরাপত্তার ঝুঁকিতে বেশি সংবেদনশীল বলে জানিয়েছেন বীমা ও ঝুঁকি বিশেষজ্ঞ তালিনে ভাহানিয়ান। সৌদিতে ইভি উৎপাদন: লুসিডের পর টেসলা? সৌদি আরবের পাবলিক ইনভেস্টমেন্ট ফান্ড পিআইএফ অর্থায়িত লুসিড মোটরস ইতোমধ্যেই জেদ্দায় কারখানা স্থাপন করেছে। এটি স্থানীয় উৎপাদনের মাধ্যমে খরচ কমাতে সহায়ক হবে। কিন্তু সমস্যা আছে—আংশিক উপাদান ও কাঁচামালের আমদানি নির্ভরতার কারণে উৎপাদনে বিঘ্ন ঘটতে পারে। মরুর দেশে ইভির টিকে থাকা নিয়ে প্রশ্ন তীব্র গরমে লিথিয়াম-আয়ন ব্যাটারির আয়ু কমে যায়, তাপমাত্রা বৃদ্ধিতে রয়েছে ‘থার্মাল রানঅ্যাওয়ে’ ঝুঁকিও। তবে টেসলা ও লুসিড উভয়েই আধুনিক কুলিং সিস্টেম ব্যবহার করছে। একইসঙ্গে সৌদি গবেষকরা সলিড-স্টেট ব্যাটারির উন্নয়নেও কাজ করছেন। বিশেষজ্ঞ ট্রিক্যামো অবশ্য বলছেন, “তাপমাত্রা নিয়ে যেভাবে ভীতি তৈরি হয়েছে, তা কিছুটা অতিরঞ্জিত। বরং মরুর বালি ও ধুলো চার্জিং স্টেশনকে বেশি প্রভাবিত করতে পারে।” ইভি বিমা: বড় চ্যালেঞ্জ ইভির বিমা খরচ এখনও তুলনামূলক বেশি। কারণ, ব্যাটারি ও ইলেকট্রনিক যন্ত্রাংশের মেরামত অনেক ব্যয়সাধ্য। পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত টেকনিশিয়ান বা ওয়ার্কশপের অভাবও এক্ষেত্রে একটি বাধা। বিমা খরচ বাড়লে ইভির অর্থনৈতিক সুবিধা খর্ব হয়—বিশেষ করে যেহেতু এখনও গাড়ির দাম বেশি। সমাধান কোথায়? সরকারি হস্তক্ষেপ এবং প্রণোদনা ছাড়া ইভি বিপ্লব সহজ হবে না। কারণ, এখনও পেট্রলচালিত গাড়িই অনেক সস্তা এবং সহজলভ্য। বিমা কোম্পানি ও নীতিনির্ধারকদের যৌথ পরিকল্পনায় বিশেষ বিমা প্যাকেজ চালু করা যেতে পারে, যা ক্রেতার আস্থা বাড়াবে। রাস্তায় নেমেছে ইভি, গন্তব্য ২০৩০ টেসলার উপস্থিতি, লুসিডের স্থানীয় উৎপাদন, এবং সরকারের পরিকাঠামো বিনিয়োগ সব মিলিয়ে সৌদি আরবে ইভি রূপান্তর দ্রুতই ঘটতে পারে। তবে তার আগে দরকার সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ—চার্জিং স্টেশন বৃদ্ধি, বিমার ব্যয় হ্রাস, ও প্রযুক্তিগত টেকসই সমাধান।

এ সম্পর্কিত খবর

আরও পড়ুন

শীর্ষ সংবাদ: