বৃহস্পতিবার, ২৮ আগস্ট ২০২৫

| ১২ ভাদ্র ১৪৩২

১০ মিলিয়ন মানুষকে ভূমিকম্পের বার্তা দিতে ব্যর্থ গুগল

সমাজকাল

প্রকাশ: ১৬:৫৫, ২৮ জুলাই ২০২৫

১০ মিলিয়ন মানুষকে ভূমিকম্পের বার্তা দিতে ব্যর্থ গুগল

সমাজকাল ডেস্ক ২০২৩ সালে তুরস্কে ঘটে যাওয়া প্রাণঘাতী ভূমিকম্পের সময় গুগলের ভূমিকম্প পূর্বাভাস ব্যবস্থা যথাযথ সতর্কবার্তা দিতে ব্যর্থ হয়েছিল—এই স্বীকারোক্তি দিয়েছে গুগল। ভূমিকম্পের উপকেন্দ্র থেকে ৯৮ মাইলের মধ্যে বসবাসকারী এক কোটি মানুষকে গুগলের সর্বোচ্চ মাত্রার সতর্কবার্তা পাঠানো যেত, যা মানুষকে নিরাপদ আশ্রয় খুঁজে নিতে সর্বোচ্চ ৩৫ সেকেন্ড সময় দিতে পারত। কিন্তু বাস্তবে, মাত্র ৪৬৯টি “Take Action” সতর্কবার্তা পাঠানো হয় প্রথম ৭.৮ মাত্রার ভূমিকম্পের জন্য। গুগল বিবিসিকে জানিয়েছে, প্রায় ৫ লাখ মানুষকে নিম্ন স্তরের সতর্কবার্তা পাঠানো হয়েছিল, যেটি “হালকা কাঁপুনি” বোঝাতে ব্যবহৃত হয় এবং ফোনে ততটা জোরালোভাবে প্রদর্শিত হয় না। গুগল এর আগেও বিবিসিকে বলেছিল, তাদের সিস্টেম “ভালোভাবে কাজ করেছে”। এই সতর্কবার্তা ব্যবস্থা অ্যান্ড্রয়েড ডিভাইসে কাজ করে, যা তুরস্কে ৭০ শতাংশের বেশি মোবাইল ফোনেই ব্যবহৃত হয়। ২০২৩ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি দক্ষিণ-পূর্ব তুরস্কে দুটি বড় ভূমিকম্পে ৫৫ হাজারের বেশি মানুষ নিহত এবং এক লাখের বেশি মানুষ আহত হয়। অধিকাংশ মানুষ তখন ঘুমিয়ে ছিল, এবং তাদের চারপাশে ভবন ধসে পড়ে। সেদিন গুগলের অ্যান্ড্রয়েড আর্থকুইক অ্যালার্টস (AEA) ব্যবস্থা সক্রিয় ছিল—তবুও এটি ভূমিকম্পের শক্তিমাত্রা সঠিকভাবে নির্ধারণ করতে পারেনি। গুগলের এক মুখপাত্র বলেন, “প্রতিটি ভূমিকম্প থেকে আমরা শিক্ষা নিয়ে ব্যবস্থা উন্নত করছি।” কীভাবে কাজ করে এই সিস্টেম গুগলের AEA ব্যবস্থা অ্যান্ড্রয়েড মোবাইল ফোনের সেন্সর ব্যবহার করে কাঁপুনি শনাক্ত করে। ভূমিকম্প মাটির ভিতর দিয়ে ধীরে গতি করে চলায়, আগেভাগে সতর্কবার্তা পাঠানো সম্ভব হয়। গুগলের সবচেয়ে গুরুতর সতর্কবার্তা “Take Action” নামে পরিচিত, যা ব্যবহারকারীর ফোনে জোরে অ্যালার্ম বাজায়—এমনকি ফোন “Do Not Disturb” মোডে থাকলেও এটি উপেক্ষা করে স্ক্রিন কভার করে বার্তা দেয়। এই সতর্কবার্তা তখনই পাঠানো হয় যখন প্রাণনাশী মাত্রার কাঁপুনি শনাক্ত হয়। আরও একটি কম গুরুতর সতর্কবার্তা “Be Aware” নামে আছে, যা হালকা কাঁপুনির ক্ষেত্রে পাঠানো হয়—এটি ফোনের সাধারণ কাজকর্মে বিঘ্ন ঘটায় না। তুরস্কের মতো বিপর্যয়কর ভূমিকম্পের ক্ষেত্রে “Take Action” সতর্কতা ছিল বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ, কারণ প্রথম ভূমিকম্পটি ঘটে ভোর ৪টা ১৭ মিনিটে—যখন অধিকাংশ মানুষ ঘুমিয়ে ছিল। তবে বিবিসি বহু মাস ধরে ভূমিকম্পপ্রবণ অঞ্চল ঘুরেও এমন কাউকে খুঁজে পায়নি যিনি ভূমিকম্পের আগেই এই গুরুতর সতর্কবার্তা পেয়েছেন। গবেষণা জার্নাল Science-এ গুগলের গবেষকরা ব্যাখ্যা করেছেন কী ভুল হয়েছিল, এবং বলেছেন, সিস্টেমের “সনাক্তকরণ অ্যালগরিদমে সীমাবদ্ধতা” ছিল। প্রথম ভূমিকম্পের সময় এই সিস্টেম কাঁপুনির মাত্রা ৪.৫ থেকে ৪.৯ MMS নির্ধারণ করে, অথচ প্রকৃতপক্ষে সেটি ছিল ৭.৮। সেদিনের দ্বিতীয় বৃহৎ ভূমিকম্পও অবমূল্যায়িত হয়, তবে এবার ৮,১৫৮টি ফোনে “Take Action” এবং প্রায় ৪ মিলিয়ন ফোনে “Be Aware” সতর্কতা পাঠানো হয়। পরে গুগলের গবেষকেরা অ্যালগরিদম পরিবর্তন করে একই ভূমিকম্প আবার সিমুলেট করলে দেখা যায়, এবার ১ কোটি ফোনে “Take Action” এবং ৬৭ মিলিয়নে “Be Aware” সতর্কতা পাঠানো হয়েছে। গুগল বিবিসিকে জানায়, “প্রতিটি ভূমিকম্প পূর্বাভাস ব্যবস্থা বড় মাত্রার ভূমিকম্প সনাক্তে অ্যালগরিদম ঠিকমতো কাজ করানোর সমস্যায় পড়ে।” কিন্তু কলোরাডো স্কুল অব মাইনসের সহকারী অধ্যাপক এলিজাবেথ রেড্ডি বলেছেন, “এই তথ্য প্রকাশে এত সময় লেগেছে—এটা খুবই হতাশাজনক।” তিনি বলেন, “এটা ছোট কোনো ঘটনা ছিল না—মানুষ মারা গেছে—আর আমরা যেভাবে সিস্টেমের পারফরম্যান্স আশা করি, সেটা দেখতে পাইনি।” গুগল বলছে, তাদের এই সিস্টেমটি মূলত সম্পূরক হিসেবে কাজ করে এবং কোনো দেশের জাতীয় সতর্কব্যবস্থার বিকল্প নয়। তবে অনেক বিজ্ঞানী উদ্বিগ্ন যে, কিছু দেশ হয়তো এই প্রযুক্তির ওপর অতিরিক্ত ভরসা করছে, যা পুরোপুরি পরীক্ষিত নয়। প্যাসিফিক নর্থওয়েস্ট সিসমিক নেটওয়ার্কের পরিচালক হ্যারল্ড টোবিন বিবিসিকে বলেন, “এটা কতটা ভালোভাবে কাজ করছে তা খোলাখুলিভাবে জানানো খুব জরুরি।” গুগলের গবেষকরা বলেন, পরবর্তী বিশ্লেষণে ব্যবস্থা আরও উন্নত করা হয়েছে, এবং এখন পর্যন্ত ৯৮টি দেশে AEA সতর্কবার্তা পাঠানো হয়েছে। বিবিসি গুগলের কাছে জানতে চেয়েছে—২০২৫ সালের মিয়ানমার ভূমিকম্পে AEA কেমন কাজ করেছে, তবে এখনো কোনো উত্তর মেলেনি। সূত্র: বিবিস

এ সম্পর্কিত খবর

আরও পড়ুন

শীর্ষ সংবাদ: