সার্চ ইঞ্জিনের বদলে চ্যাটবট নির্ভরতায় চার সতর্কতা
প্রযুক্তি ডেস্ক
প্রকাশ: ১৮:৫৩, ১৬ আগস্ট ২০২৫

ডিজিটাল যুগে মানুষ এখন ক্রমেই সার্চ ইঞ্জিনের বদলে এআই চ্যাটবটের দিকে ঝুঁকছে। গুগলে টাইপ করার বদলে অনেকেই সরাসরি জিজ্ঞাসা করছেন চ্যাটজিপিটি, গুগল জেমিনি কিংবা মাইক্রোসফট কোপাইলটকে। এরা দ্রুত, সহজ ও কথোপকথনমুখী উত্তর দেয় বলে ব্যবহারকারীদের মধ্যে জনপ্রিয়তা বাড়ছে। তবে প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই ভরসা অন্ধ হয়ে গেলে বিপদ ডেকে আনতে পারে। কারণ চ্যাটবট মূলত ধারণা তৈরির জন্য কার্যকর হলেও নির্ভুল তথ্য দেওয়ার ক্ষেত্রে এরা এখনো সার্চ ইঞ্জিনের বিকল্প নয়।
১. আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে ভুল তথ্য দেওয়ার প্রবণতা
এআই চ্যাটবটের সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো হ্যালুসিনেশন। এরা অনেক সময় ভিত্তিহীন কিন্তু আত্মবিশ্বাসী উত্তর তৈরি করে। যেমন সম্প্রতি এক অস্ট্রেলীয় ভ্রমণকারী চ্যাটজিপিটিতে জিজ্ঞেস করেছিলেন—চিলিতে প্রবেশের জন্য অস্ট্রেলীয় নাগরিকদের ভিসা লাগে কিনা। বট জানায়, ভিসা লাগবে না। সেই উত্তরের ওপর ভরসা করে যাত্রা শুরু করেন তিনি। কিন্তু বাস্তবে বিমানবন্দরে গিয়ে ভিসার অভাবে প্রবেশ করতে না পেরে চরম ভোগান্তির শিকার হন।
২. সীমিত ও পক্ষপাতদুষ্ট ডাটাসেট থেকে প্রশিক্ষিত
এলএলএম বা লার্জ ল্যাঙ্গুয়েজ মডেলগুলো বিশাল ডাটাসেটে প্রশিক্ষিত হলেও এগুলো অসম্পূর্ণ। বই, অনলাইন ফোরাম বা ওয়েবসাইট থেকে সংগৃহীত ডাটা অনেক সময় পুরনো, আঞ্চলিক বা পক্ষপাতদুষ্ট হতে পারে। এর ফলে একজন ব্যবহারকারী যদি কর নীতির মতো সংবেদনশীল বিষয়ে প্রশ্ন করেন, চ্যাটবট হয়তো ভিন্ন দেশের পুরনো আইন তুলে দেবে—যা বাস্তবতার সঙ্গে মিলবে না। আরও সমস্যা হলো, এরা সচরাচর তথ্যের উৎস জানায় না। ফলে ব্যবহারকারী বুঝতে পারেন না তথ্যটি প্রাসঙ্গিক ও হালনাগাদ কিনা।
৩. ব্যবহারকারীকে খুশি করার প্রবণতা
চ্যাটবট সাধারণত প্রশ্নের বিপরীতে বিরোধিতা করে না। বরং ব্যবহারকারীর দৃষ্টিভঙ্গি সমর্থন করার প্রবণতা রাখে। যেমন—যদি কেউ জিজ্ঞেস করেন “নাশতা কি আসলেই দরকারি?”, বট হয়তো বলবে, বাদ দিলেও সমস্যা নেই। আবার প্রশ্ন করা হলে “কেন নাশতা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ খাবার?”, তখন সেটি নাশতার গুরুত্ব সমর্থন করে নানা যুক্তি হাজির করবে। অর্থাৎ একই বিষয়ে ব্যবহারকারীর প্রশ্নভেদে ভিন্ন ও বিপরীত উত্তর আসতে পারে।
৪. সর্বশেষ তথ্য প্রদানে অক্ষমতা
যদিও কিছু চ্যাটবট ওয়েব ব্রাউজিং সুবিধা যুক্ত করেছে, তবুও সর্বশেষ খবর বা নতুন পণ্যের তথ্য পাওয়ার ক্ষেত্রে এরা নির্ভরযোগ্য নয়। উদাহরণস্বরূপ, নতুন একটি স্মার্টফোন উন্মোচনের কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই চ্যাটবটকে জিজ্ঞেস করলে সেটি পুরনো গুজব বা আংশিক সঠিক তথ্য মিশিয়ে উত্তর দিতে পারে। অনেক ব্যবহারকারীর অভিযোগ, চ্যাটজিপিটি এখনো ডোনাল্ড ট্রাম্পকে “সাবেক প্রেসিডেন্ট” বলেই উল্লেখ করে।
কী করণীয়?
বিশেষজ্ঞদের মতে, সাধারণ তথ্য শেখা, প্রাথমিক ধারণা পাওয়া কিংবা কনটেন্ট তৈরির মতো কাজে এআই চ্যাটবট ব্যবহার করা যায়। কিন্তু চিকিৎসা, আইন, ভ্রমণ নীতি কিংবা যেকোনো সময়-সংবেদনশীল সিদ্ধান্তে এগুলোর ওপর ভরসা করা বিপজ্জনক। এসব ক্ষেত্রে সর্বদা নির্ভরযোগ্য উৎস, সার্চ ইঞ্জিন বা বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া জরুরি।
চ্যাটবট আমাদের সময় বাঁচাতে পারে, কিন্তু সব সময় তথ্য সঠিক নয়। তাই এগুলোকে সহায়ক হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করুন, কিন্তু চূড়ান্ত ভরসা নয়।