মানসিক প্রশান্তি লাভের উপায়
সমাজকাল ডেস্ক
প্রকাশ: ২২:৩৪, ২৪ আগস্ট ২০২৫

মানুষের জীবনের সবচেয়ে বড় চাহিদাগুলোর একটি হলো মানসিক প্রশান্তি। বাহ্যিক সুখ-স্বাচ্ছন্দ্য, ধন-সম্পদ কিংবা সামাজিক স্বীকৃতি যতই অর্জন হোক না কেন, অন্তরের প্রশান্তি ছাড়া জীবন কখনোই পরিপূর্ণ হয় না। প্রতিদিনের ব্যস্ততা, দুশ্চিন্তা, অনিশ্চয়তা আর নানা রকম অভিজ্ঞতার ভিড়ে আমাদের মন কখনো অস্থির হয়ে ওঠে, কখনো আবার হাহাকার করে ওঠে অজানা বেদনায়। মনে হয় বুকের ভেতরে অদৃশ্য এক ভার চেপে আছে, শ্বাস নিতেও যেন কষ্ট হচ্ছে। এ অবস্থা শুধু বাইরের ঘটনাবলির কারণে হয় না, বরং এর সঙ্গে জড়িয়ে থাকে আমাদের অন্তরের অবস্থা, আল্লাহর সঙ্গে সম্পর্কের দুর্বলতা এবং শয়তানের কুমন্ত্রণা। শয়তান মানুষের মনকে সংকীর্ণ করে হতাশা, ভয় ও বিভ্রান্তি ছড়িয়ে দেয়। তাই একমাত্র স্রষ্টার দিকে ফিরে তাকানোই মানসিক প্রশান্তির প্রকৃত পথ।
ইসলাম মানুষকে শিখিয়েছে, অন্তরের প্রশান্তি ও বক্ষের প্রশস্ততা আল্লাহর পক্ষ থেকেই আসে। কোরআনে মহান আল্লাহ ঘোষণা করেছেন, ‘জেনে রাখো, আল্লাহর স্মরণেই হৃদয় প্রশান্ত হয়।’ (সুরা রাদ, আয়াত ২৮) এই আয়াত স্পষ্ট করে দেয় যে, জীবনের সব ধরনের অস্থিরতার প্রকৃত প্রতিষেধক হলো আল্লাহর স্মরণ। আল্লামা ইবনুল কাইয়িম (রহ.) হৃদয়কে প্রশান্ত করার কয়েকটি উপায় উল্লেখ করেছেন। তিনি বলেছেন, মানুষের মনের সংকীর্ণতা দূর হয় এবং প্রশান্তি আসে মূলত তিনটি কাজের মাধ্যমে। এ বিষয়ে বিস্তারিত বিবরণী উল্লেখ করা হলো।
প্রথমত, আল্লাহর স্মরণ। জিকির বা আল্লাহর স্মরণ মানুষের হৃদয়কে আলোকিত করে, হতাশার অন্ধকার দূর করে এবং ব্যাপক শক্তি জোগায়। যখন মানুষ একান্তভাবে আল্লাহকে স্মরণ করে, তখন সে দুশ্চিন্তার বোঝা থেকে হালকা হয়ে যায়। নামাজ, তাসবিহ, কোরআন তেলাওয়াত, এসবই আল্লাহর স্মরণের অংশ। এগুলো মানুষের ভেতরের অস্থিরতাকে প্রশমিত করে শান্তি এনে দেয়।
দ্বিতীয়ত, আল্লাহর প্রতি সুদৃঢ় ধারণা রাখা। আল্লাহর রহমত অসীম, তার দয়া সীমাহীন, এই বিশ্বাস অন্তরকে সাহসী করে তোলে। বিপদে ধৈর্যধারণ সহজ হয়, অজানা ভবিষ্যৎকে নিয়েও আর উদ্বেগ থাকে না। কোরআনে আল্লাহ বলেন, ‘যে আল্লাহর ওপর ভরসা করে, আল্লাহই তার জন্য যথেষ্ট। (সুরা তালাক, আয়াত ৩) এই ভরসাই মানুষকে মানসিক প্রশান্তি দেয়।
তৃতীয়ত, মানুষের কল্যাণে কাজ করা। অন্যকে সাহায্য করা, কষ্টে সান্ত্বনা দেওয়া কিংবা সমাজে উপকার বয়ে আনে এমন কাজে যুক্ত থাকা, এসবের মধ্য দিয়ে হৃদয়ে এক অদ্ভুত প্রশান্তি জন্ম নেয়। দুনিয়ার কোনো ভোগ-বিলাস সেই প্রশান্তির বিকল্প হতে পারে না। অপরদিকে অহেতুক ও অকারণ কাজে সময় নষ্ট করলে মন ভারী হয়ে যায়। তাই অহেতুক কাজ বর্জন করলে জীবন সহজ হয়, মনও হয় হালকা।
এছাড়া সৎ মানুষের সাহচর্য গ্রহণ করাও মানসিক প্রশান্তির বড় মাধ্যম। যারা আল্লাহভীরু, সত্যবাদী ও নেককার, তাদের সংস্পর্শে মন শুদ্ধ হয়, ইমান দৃঢ় হয়। ভালো মানুষের সঙ্গ শয়তানের প্রভাব থেকে রক্ষা করে। পাশাপাশি নিয়মিত কোরআন তেলাওয়াত হৃদয়ে নূর জাগিয়ে তোলে, অন্তরকে প্রশান্ত রাখে। হাদিসে নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘যার অন্তরে কোরআন নেই, সে যেন ধ্বংসপ্রাপ্ত ঘর।’ কোরআনের আলো হৃদয়কে জীবন্ত রাখে এবং তা মানুষকে মানসিক প্রশান্তির দিকে নিয়ে যায়।
আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম হলো দোয়া। মানুষ যখন আল্লাহর কাছে হাত তোলে, তখন সে হালকা হয়ে যায়, তার মনে প্রশান্তি নেমে আসে। হাদিসে এসেছে, ‘দোয়া হলো মুমিনের অস্ত্র।’ তাই দুশ্চিন্তা, ভয় কিংবা হতাশার মুহূর্তে স্রষ্টার কাছে প্রার্থনা করাই হলো সর্বোত্তম আশ্রয়।
মানসিক প্রশান্তি বাহ্যিক উপকরণে নয়, বরং অন্তরের অবস্থা ও ইমানের দৃঢ়তায় নিহিত। আল্লাহর স্মরণ, তার রহমতের ওপর আস্থা, অন্যের উপকার, সৎ মানুষের সাহচর্য, কোরআনের আলো ও দোয়া, মানুষের দৈনন্দিন কাজে এসব একত্র হলে মানুষের মন প্রসারিত হয়, অন্তরে নেমে আসে প্রশান্তি। তখন দুনিয়ার প্রতিকূলতায়ও মানুষ ভেঙে পড়ে না। তাই জীবনের অস্থিরতা, হতাশা ও বিভ্রান্তি থেকে মুক্তি পেতে হলে আমাদেরকে আল্লাহর নির্দেশিত এ পথগুলো আঁকড়ে ধরতে হবে। প্রকৃত প্রশান্তি কোনো বাহ্যিক সাফল্যে নয়, বরং আল্লাহর নৈকট্যে নিহিত।